• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
মাদক পাচারে নতুন কৌশল

ইয়াবা

সংরক্ষিত ছবি

অপরাধ

মাদক পাচারে নতুন কৌশল

  • রেজাউল করিম হিরা
  • প্রকাশিত ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

মাদকের বিরুদ্ধে সরকার বরাবরই কঠোর। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও তৎপর। তারপরও থেমে নেই মাদকের সরবরাহ। নতুন নতুন কৌশল আবিষ্কার করছে মাদক ব্যবসায়ীরা। সে অনুযায়ী দেশব্যাপী মাদক ছড়িয়ে দিচ্ছে পাচারকারীরা। তাদের নিত্যনতুন কৌশলে গোয়েন্দারাও হতবাক।    

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর নানামুখী পদক্ষেপের কারণে একের পর এক বেরিয়ে আসছে মাদক পাচারের কৌশল। শুকনো মরিচ, জুতা, ইলিশ মাছ, সবজি, কচ্ছপ ও নারীদের অন্তর্বাসের পর পাকস্থলী ভাড়া করেও মাদক পাচার অব্যাহত রেখেছে পাচারকারীরা। বড়দের পাশাপাশি শিশুদেরও এ কাজে ব্যবহার করছে তারা।  শিশুদের পাকস্থলী ভাড়া করে হাজার হাজার ইয়াবা পাচারও ধরা পড়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে। সব বয়সের নারী-পুরুষ জড়িয়ে পড়ছে মাদক ব্যবসায়। মডেল থেকে শুরু করে মসজিদের ইমামও অর্থের নেশায় জড়িয়েছে এ পেশায়। এসব মাদকের মধ্যে ইয়াবাই বেশি। এই ট্যাবলেটের দানা ক্ষুদ্রাকৃতির হওয়ায় সহজে বহন করা যায়। তাই ইয়াবা বহনে নতুন নতুন কৌশল আবিষ্কার করে মাদক পাচারকারীরা। পুলিশ, র্যাব, কোস্টগার্ড, বিজিবি ও শুল্ক গোয়েন্দা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর তৎপরতায় এবার মাদক সরবরাহে নতুন কৌশল নিয়েছে পাচারকারীরা। গত রোববার রাত সাড়ে ১০টায় বিমানবন্দর থানাধীন এয়ারপোর্ট লিঙ্ক রোডে অভিযান চালায় ডিবি (উত্তর) বিভাগের অবৈধ মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও প্রতিরোধ টিম। এ সময় বিশেষ কৌশলে আসা একটি ট্রাকের পাটাতন থেকে প্রায় কোটি টাকা মূল্যের ১৫০ কেজি গাঁজা জব্দ করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

প্রথম দেখায় মাদক পাচারকারীদের এ কৌশল বুঝতে কষ্ট হবে যে কারো। পুরো ট্রাক তল্লাশির পরও গাঁজার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে ট্রাকের পাটাতন খুলতেই দেখা মেলে থরে থরে সাজানো গাঁজার স্তূপ। বিশেষভাবে বানানো এই ট্রাকে করে মাদকের চালানটি এসেছে ভারত থেকে। ধারণা করা হচ্ছে, মাদকদ্রব্য পাচারের উদ্দেশ্যেই বিশেষ এ কৌশলি ট্রাক বানানো হয়েছে। যদিও ওই ট্রাকচালক বলেন, এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না তিনি।

ট্রাকচালক বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্ত থেকে গাজীপুর পৌঁছে দিলে আমাকে ১৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে এতটুকুই আমি জানি। গাড়ির ভেতরে কী আছে বা নেই সেসব কিছু আমি জানি না। এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলো  আবু তাহের (৩০), মোক্তার খন্দকার (২৭) ও সাইফুল ইসলাম ওরফে চান মিয়া (৪৩)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের এডিসি ওবায়দুর রহমান।

গোয়েন্দারা বলছেন, সীমান্ত ফাঁকি দিয়ে এই চক্রটি বেশ কয়েকটি চালান নিয়ে এসেছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। ঢাকা মহানগর উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি মশিউর রহমান জানান, এই গাঁজাগুলো কোনোটাই বাংলাদেশে উৎপাদিত নয়। এগুলো ত্রিপুরা, আসামের পাহাড়ের ঢালে উৎপাদন হওয়া গাঁজা। আমরা যেহেতু সতর্কতার সঙ্গে আমাদের কর্তব্য পালন করি, এজন্য আমাদের কাছে নানা রকম খবর আসে। সে কারণেই এ রকম বড় চালানগুলো ধরা পড়ে। আমরা আশাবাদী আমাদের তৎপরতা অব্যাহত থাকলে এদেরকে আমরা এক সময় নিশ্চিহ্ন করতে পারব। চক্রটির মূল হোতা ভারতে অবস্থান করছে জানিয়ে তিনি বলেন, তাকেও ধরার চেষ্টা চলছে।

বিভিন্ন সময় সীমান্তে পাচারকারীদের ধরতে গিয়ে ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক পাচারের নিত্যনতুন কৌশল সম্পর্কে জানতে পারেন বিজিবি সদস্যরা। বিজিবির বিভিন্ন ব্যাটালিয়ন ও ইউনিটের সদস্যরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওইসব মাদক পাচারকারীকে আটক করতে সক্ষম হন। বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহম্মদ মোহসিন রেজা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিতে মাদক ব্যবসায়ীরা নানা কৌশলে মাদক পাচারের চেষ্টা চালিয়েছে। মাদক পাচারকারীদের এসব কৌশলের মধ্যে রয়েছে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, জিআই পাইপ, পানির কলসিতে ইয়াবা তৈরির কেমিক্যাল, মহিলাদের অন্তর্বাস, ইলিশ মাছ ও শুকনো মরিচ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads