• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯
বিকাশ প্রতারক চক্রের ৩ সদস্য গ্রেফতার

ছবি : বাংলাদেশের খবর

অপরাধ

বিকাশ প্রতারক চক্রের ৩ সদস্য গ্রেফতার

  • গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২০ এপ্রিল ২০১৯

কখনো ওসি, কখনো ইউএনও আবার কখনো এডিসি, ডিসি, এসপি’র ফোন নম্বর ক্লোন (বিশেষ প্রযুক্তি) করে বিভিন্ন ব্যাক্তির কাছে ফোন করে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করাই তাদের পেশা। অত্যন্ত চতুর এই চক্রের খপ্পরে পরে সম্প্রতি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন গোয়ালন্দের বেশ কয়েকজন। গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ দীর্ঘ অনুসন্ধান চালিয়ে প্রতারক এই চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে।

গ্রেফতারকৃতরা হলো লালমনিরহাট সদর উপজেলার সাপটানা মদনের চক গ্রামের আ. হামিদের ছেলে শিপুল ইসলাম (২৫), ইটাপোতা গ্রামের শাহজাহান আলীর ছেলে আশরাফুল আলম আশিক (২৪) ও আদিতমারী উপজেলার বড় কমলাবাড়ি গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে শামীম আলী (৩৮)।

জানা যায়, গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি এজাজ শফির সরকারী ফোন নম্বর ক্লোন করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে একাধিক প্রার্থী ও সাধারন মানুষকে বিভিন্ন প্রলোভনে ফেলে কয়েক লক্ষ টাকা বিকাশের মাধ্যমে হাতিয়ে নেয় একটি চক্র। এ বিষয়ে একাধিক অভিযোগ দায়ের হয় গোয়ালন্দ ঘাট থানায়। এ প্রেক্ষিতে এই চক্রকে পাকড়াও করতে মাঠে নামে পুলিশ।

থানা পুলিশ সূত্র জানায়, তদন্তের শুরুতে টাকা আদায় করা বিকাশ একাউন্টগুলো বিকাশ হেড অফিসে আবেদন করে ফ্রিজ করা হয়। এরপর মোবাইল ট্রাকিং ও একাউন্ট খোলা বিকাশ এজেন্ট ও জাতীয় পরিচয় পত্রের মানুষদের অনুসন্ধান করে অবস্থান নিশ্চিত হয় পুলিশ। লালমনির হাট জেলার বিভিন্ন স্থানে গত তিনদিন গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি (তদন্ত) আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিকাশ প্রতারক চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করে। এসময় যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে বিকাশ একাউন্ট খোলা হয়েছে তাদের মধ্যে দুইজন হতদরিদ্র নিরিহ মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়।

এ চক্রের প্রতারনার শিকার গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ জানান, গত ২১ মার্চ তার ফোনে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসির সরকারী নম্বর থেকে ফোন আসে। এসময় তাকে বলা হয় নির্বাচন নিয়ে তারা ডিসি অফিসে জরুরী বৈঠকে বসেছেন, এডিসি স্যার আপনার সাথে কথা বলবেন। ওসি সাহেব আমাকে এডিসি স্যারের ব্যক্তিগত নম্বরে দিয়ে তাকে এখনই ফোন করতে বলেন। ওসির নম্বর থেকে ফোন আসায় তিনি কোন সন্দেহ না করে দ্রুত ওই নম্বরে ফোন করেন। এসময় কথিত এডিসি বলেন, নির্বাচনী মাঠে আপনার অবস্থা মোটামুটি ভালো। এ পরিস্থিতিতে প্রশাসন আপনার পক্ষে কাজ করলে আপনার বিজয় নিশ্চিত। তাই মিষ্টি খাওয়ার খরচ বাবদ এই মুহুর্তে বিকাশের মাধ্যমে এক লক্ষ টাকা পাঠান। এসময় আমি অনুরোধ করে বলি, আজ ব্যাংক বন্ধ এক লক্ষ টাকা দিতে পারব না। আপাতত ৫০ হাজার টাকা দিচ্ছি। এই কথা বলে আমার মেয়ের গহনা বন্ধক রেখে দ্রুত ৫০ হাজার টাকা নিয়ে বিকাশের মাধ্যমে সেই টাকা পাঠিয়ে দেই। এর কিছুক্ষণ পর ওই চক্র আরো ৫০ হাজার টাকা দাবি করলে তার সন্দেহ হয়। খোঁজ নিয়ে তিনি বুঝতে পারেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন। একই ঘটনা আরেকজন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর সাথে ঘটলেও তিনি নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক।

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে নিয়ে আসা লালমনিরহাট সদর উপজেলার বনগ্রামের দিনমজুর ভোলা মিয়া (২৮) জানান, তার মা কদভানু বিবির বয়ষ্ক ভাতার ব্যাংক একাউন্টে নমিনী হিসেবে তার জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপির প্রয়োজন হয়। তাই তিনি তার জাতীয় পরিচয় পত্র আশরাফুল আলম আশিকের ফটোকপির দোকানে যান। আশিক কৌশলে তার জাতীয় পরিচয় পত্রের একটি ফটোকপি রেখে দেয়। পরবর্তীতে সেটা দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খুলে প্রতারনার কাজে ব্যবহার করে তাকে বিপদে ফেলেছে।

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম জানান, এই প্রতারক চক্রটি ফোন নম্বর ক্লোন করে ওসি, ইউএনও, এডিসি, ডিসি, এসপি সেজে ফোন করে মানুষকে প্রতারনার ফাঁদে ফেলে। প্রতারনার শিকার একাধিক ব্যক্তি থানায় জিডিসহ ক্ষতিগ্রস্থ আবুল কালাম আজাদ প্রতারক চক্রের ৬ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। শনিবার গ্রেফতারকৃত ৩ আসামীকে রাজবাড়ীর আদালতে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads