• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
কার কী ভূমিকা তদন্তে বের হয়েছে : পিবিআই

ছবি : সংগৃহীত

অপরাধ

নুসরাত হত্যা

কার কী ভূমিকা তদন্তে বের হয়েছে : পিবিআই

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৫ মে ২০১৯

ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগপত্র চলতি মাসের মধ্যেই দেওয়া হবে। এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে কার কী ভূমিকা ছিল তদন্তে সব বের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেসটিগেশন (পিবিআই)-এর প্রধান বনজ কুমার মজুমদার।

গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর এফডিসিতে আয়োজিত ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির এক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পিবিআই প্রধান এসব কথা বলেন। ‘নারী নিপীড়নে তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার’ শীর্ষক এই বিতর্ক প্রতিযোগিতার সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। ‘সাহসিকা নুসরাত, তুমিই যুক্তি তুমিই প্রতিবাদ’ এই স্লোগানে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় ইডেন মহিলা কলেজ ও ঢাকা কলেজ সমান নম্বর পাওয়ায় উভয় দলকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। নারী নিপীড়নে তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার নিয়ে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।

বনজ কুমার মজুমদার বলেন, হত্যাকাণ্ডটির বিভিন্ন পর্যায়ে ১৬ জনের সংশ্লিষ্টতা এ পর্যন্ত বের হয়েছে। অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে পৃথক পৃথক অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হওয়া মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

পিবিআই প্রধান জানান, নুসরাত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগপত্র এক মাসের মধ্যে দেওয়া হবে। কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক রয়েছে। তদন্ত প্রক্রিয়া নারীবান্ধব করার লক্ষ্যে নারী পুলিশ কর্মকর্তা রিমা সুলতানাকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে নুসরাত হত্যাকাণ্ডের অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ১৬ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তারা সবাই গ্রেফতার হয়েছে। এর মধ্যে নয়জনের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। সোনাগাজী থানার ওসির বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার পর তার মোবাইল ফোন দুটি জব্দ করা হয়েছে।

বনজ কুমার আরো বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ব্যাপক সংখ্যক নারীকে প্রতারিত করা হয়। নির্যাতনের শিকার বেশিরভাগ নারী মামলা করতে চায় না। এসব মামলায় শাস্তিও তুলনামূলক কম। যাদের শক্তি আছে, অর্থ আছে, সাহস আছে তারাই বিচার চায়। বাংলাদেশ পুলিশের কাছে ক্রিমিনালদের ডাটাব্যাংক রয়েছে। যেখান থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য নেওয়া যাবে। 

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার করে প্রলোভনের ফাঁদ পেতে নারীর ওপর ধর্ষণসহ বিভিন্ন রকম নিপীড়ন লক্ষ করা যায়। বিশেষ করে মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক করে কৌশলে মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করে সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে প্রায়ই যৌন নিপীড়ন ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। আলোচিত নুসরাত হত্যাকাণ্ডের সময়ও আমরা দেখেছি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্য কর্তৃক নীতিবহির্ভূতভাবে ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে। দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো অনেক কঠিন আইন তৈরি হলেও নারী নিপীড়ন প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত বিশেষ কোনো আইন প্রণয়ন করা হয়নি। ফলে তনু, রূপার পর নুসরাতকে বলি হতে হয়েছে।

সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত গত ৬ এপ্রিল সকালে আলিমের আরবি পরীক্ষা প্রথমপত্র দিতে মাদরাসায় যান। এরপর তাকে কৌশলে মাদরাসার ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১০ এপ্রিল রাতে মারা যান নুসরাত।

পরের দিন ১১ এপ্রিল বিকেলে জানাজা শেষে নুসরাতকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে প্রধান আসামি করে আটজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো চার-পাঁচজনকে আসামি করে নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান গত ৮ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।

আলোচিত এ মামলার এজহারভুক্ত আট আসামিসহ ২১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও পিবিআই। এদের মধ্যে হত্যায় সরাসরি জড়িত পাঁচজনসহ নয়জন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads