• মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪২৮
পদ্মায় বালু উত্তোলনের মহোৎসব

সংগৃহীত ছবি

অপরাধ

পদ্মায় বালু উত্তোলনের মহোৎসব

  • কানু স্যানাল, পাবনা
  • প্রকাশিত ০৮ মে ২০১৯

পাবনার সুজানগর উপজেলা এবং রাজবাড়ী জেলার পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। আর এভাবে বালু উত্তোলনের ফলে পদ্মা নদীর ভাঙনে বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে নদীপাড়ের হাজারো পরিবার এবং নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে শত শত বিঘা ফসলি জমি।

অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। সরকারিভাবে এসব বালু উত্তোলন নিষেধ থাকলেও একশ্রেণির অসাধু বালু ব্যবসায়ী সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে সুজানগর  উপজেলা এবং রাজবাড়ী জেলার ধাওয়াপাড়া ও কালুখালীসহ পদ্মা নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে অবাধে এ বালু উত্তোলন করছে। প্রশাসনের কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় নদীপাড়ের মানুষ।

জানা যায়,  সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ, সাতবাড়ীয়া, ভায়না ইউনিয়নের ও পৌরসভার সীমান্তবর্তী এবং রাজবাড়ী জেলার জৌকুড়া, ধাওয়াপাড়া, কালুখালী ও প্রস্তাবিত সেনানিবাস এলাকার পদ্মা নদী থেকে নিয়মিতভাবে একশ্রেণির অবৈধ বালু ব্যবসায়ী বালু উত্তোলন করছে। স্থানীয়রা বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে আমরা দৃঢ়ভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছি। কিন্তু বালু উত্তোলনকারীরা আমাদের কথা শোনেননি। এদিকে গত সোমবার সাতবাড়ীয়া নদীপাড়ের মানুষ একত্রিত হয়ে নদীতে বালু উত্তোলন কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের ধাওয়া দিলে তারা বালু উত্তোলনকাজে ব্যবহূত ড্রেজার মেশিনসহ অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে রাজবাড়ী অভিমুখে চলে যায়। এদিকে বালু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে প্রভাবশালীদের নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেটে জড়িয়ে পড়েছে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। এ কারণে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার কোথাও বালুর ইজারা নেই। কিন্তু আইনের কোনো তোয়াক্কা না করেই অবৈধভাবে বালু ব্যবসায়ীরা বালু উত্তোলন করছে এবং রাস্তার পাশে স্টেক দিয়ে বালু বিক্রি করছে। এতে করে যেকোনো সময় দুর্ঘটনার মতো বিপজ্জনক অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের নাজিরগঞ্জ বাজারের আশপাশে এলাকাসহ বরখাপুর, বুলচন্দ্রপুর, সাতবাড়ীয়া ইউনিয়নের সাতবাড়ীয়া বাজার থেকে শ্যামনগর ও ভাটপাড়া রাস্তার পাশে এবং রাজবাড়ী জেলার জৌকুড়া, ধাওয়াপাড়া, কালুখালী ও প্রস্তাবিত সেনানিবাস এলাকার বিভিন্ন স্থানে বালু স্তূপাকারে রাখার কারণে যানবাহন চলাচলেও মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। আর এসব সড়ক দিয়ে ভোররাত হতে ট্রাক, ট্রাক্টর, দিয়ে বিভিন্ন স্থানে বালু পৌঁছে দেওয়া হয়। এতে করে ভারী যান চলাচলে রাস্তার অবস্থাও নাজুক হয়ে পড়েছে। বালুবোঝাই ট্রাক চলাচলের কারণে রাস্তাগুলো চলাফেরার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। স্থানীয় জনগণ বালু উত্তোলনকারীদের বাধা দিলে তারা মিথ্যা মামলা দায়েরসহ বিভিন্ন হুমকি দিয়ে আসছে।

স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবি-সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসন যেন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বালু তোলা বন্ধ করে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এগিয়ে আসে। সুজানগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুজিৎ দেবনাথ বলেন, বালু উত্তোলনের খবর পেলে আমরা অভিযানে যাই। ইতিমধ্যে কয়েকবার মোবাইল কোর্টও পরিচালনা করা হয়েছে। বালু উত্তোলনকারীরা অনেক সময় আমাদের আসার খবর শুনে পালিয়ে যায়।

পাবনা জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন বলেন, কেউ অবৈধভাবে ওই সব কার্যক্রম করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads