• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
পেটে ইয়াবা পাচার রোহিঙ্গাদের

ছবি : সংগৃহীত

অপরাধ

পেটে ইয়াবা পাচার রোহিঙ্গাদের

  • টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৬ মে ২০১৯

মিয়ানমারের রাখাইনে জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে শরণার্থী হয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গারা অভিনব পদ্ধতিতে পেটের ভেতরে করে ইয়াবা পাচার করছে। এদিকে আগের তুলনায় রোহিঙ্গা শিবিরে মাদকের বিস্তারও বেড়েছে। এজন্য রোহিঙ্গাদের মাদক থেকে বিরত রাখতে আশ্রয় শিবিরগুলোতে মাদকবিরোধী প্রচারণা শুরু করেছে পুলিশ। তবে সচেতন মহলের মত, এ ধরনের প্রচারণা সারা দেশে না চালালে ইতিবাচক ফল আসার সম্ভাবনা কম। কারণ, দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরাই রোহিঙ্গাদের মাদক ব্যবসার কাজে ব্যবহার করছে।

সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজারের পেটের ভেতর করে ইয়াবা পাচারকালে ৫০ জনের বেশি রোহিঙ্গা ধরা পড়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। সর্বশেষ গত ২০ মে টেকনাফ-২ বিজিবির সদস্যরা তিন রোহিঙ্গা নারীর পেটের ভেতর থেকে তিন হাজার ১৫০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছেন। তারা হলেন টেকনাফের হ্নীলা আলীখালী রোহিঙ্গা শিবিরের নূর হাওয়া (৩৫), জরিনা খাতুন (৩৫) ও সেতারা (৩০)।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, গত দুই মাসে ৫০ জনের বেশি রোহিঙ্গা গ্রেপ্তার হয়েছে। এর মধ্যে ইয়াবাসহ র্যাব সাতজনকে, পুলিশ ১৩ জনকে, বিজিবি ১৫ জনকে এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিভাগ আটজন আটক করে।

জানা যায়, গত এক বছরে ইয়াবা বহন, সেবন ও কেনা-বেচার অভিযোগে ১০০টি মামলায় দেড় শতাধিক রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। এদের বেশির ভাগই অভিনব উপায়ে পেটের মধ্যে ইয়াবা বহন করছিল।

কক্সবাজারের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সহকারী পরিচালক সোমেন মণ্ডল বলেন, হঠাৎ করে একটি চক্র পেটের ভেতরে করে ইয়াবা বহন করাচ্ছে। আর অভিনব এই পদ্ধতিতে ইয়াবা বহনে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। গত এক বছরে কক্সবাজার জেলায় ইয়াবাসহ ৪০ জন রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করেছি। তাদের কাছ থেকে এক লাখ ২০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় ১৭টি মাদক মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সোমেন মণ্ডল জানান, সর্বশেষ গত মাসের শেষের দিকে মিয়ানমার থেকে আসার সময় ২৬ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। এক্স-রের মাধ্যমে তাদের মধ্যে ১৩ জনের পেটে ইয়াবার অস্তিত্ব মেলে। তাদের একেক জনের পেটে তিন হাজার পিসেরও বেশি ইয়াবা পাওয়া যায়। এর বিনিময়ে তারা জনপ্রতি ২০ হাজার টাকা করে পায় বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়। এভাবে পেটের মধ্যে করে ইয়াবা বহন অত্যন্ত ক্ষতিকর। এতে মৃত্যুরও ঝুঁকি আছে বলে জানান কক্সবাজারের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সহকারী পরিচালক সোমেন মণ্ডল।

এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানান, ইয়াবা ট্যাবলেটগুলো পলিথিনে জড়িয়ে কলা বা অন্য কিছুর সঙ্গে খেয়ে ফেলে পাচারকারীরা। পরে মলের সঙ্গে সেগুলো বেরিয়ে এলে পরিষ্কার করে নেওয়া হয়।

টেকনাফের লেদা শিবিরের ডেভেলপমেন্ট কমিটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম বলেন, হঠাৎই পেটের ভেতর করে ইয়াবা বহনকারী রোহিঙ্গা ধরা পড়ছে বেশি। এভাবে ইয়াবা বহনকালে সব মিলিয়ে ২০ জনের বেশি আমার ক্যাম্প থেকে গ্রেপ্তার হয়েছে। পুলিশ বিভিন্ন ক্যাম্পে মাদকবিরোধী সভা করছে। সেখানে রোহিঙ্গাদের সচেতন করা হচ্ছে। বিষয়টি ইতিবাচক। আশা করি, রোহিঙ্গারা এ বিষয়ে আরো সচেতন হবে।

টেকনাফ শালবাগান রোহিঙ্গা শিবিরের চেয়ারম্যান রমিদা বেগমের (২৮) মতে, অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে স্থানীয় কিছু লোক রোহিঙ্গাদের দিয়ে এ কাজ করাচ্ছে। পরিবারের অভাব দূর করতে তারাও ঝুঁকি নিয়ে এসব কাজে জড়িত হচ্ছে।

উখিয়া থানার ওসি আবুল খায়ের জানান, তার এলাকা থেকে গত ১০ মাসে মাদক বহনকালে ৩০ জনের বেশি রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। তিনি বলেন, অসহায়ত্ব ও অভাবের সুযোগ নিয়ে কিছু লোক রোহিঙ্গাদের মাদক ব্যবসায় জড়িত করছে। দেশীয় মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে এসব ক্যাম্পে বসবাস করা পুরোনো রোহিঙ্গারাও এর সঙ্গে জড়িত।

র্যাব-১৫-এর টেকনাফ ক্যাম্পের ইনচার্জ লেফটেন্যান্ট মির্জা শাহেদ মাহতাব বলেন, আমরা গত ১০ মাসে মাদকসহ ৫১ জন রোহিঙ্গাকে আটক করেছি। তাদের কাছ থেকে চার লাখের বেশি ইয়াবা উদ্ধার করেছি। এ ঘটনায় মাদক আইনে থানায় ৩৫টি মামলা রুজু করা হয়েছে। র্যাবের মাদকবিরোধী অভিযানে অনেক ইয়াবা পাচারকারীও রোহিঙ্গা শিবিরগুলোয় আশ্রয় নিয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। যে কারণে শিবিরগুলোয় আমাদের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন বলেন, রোহিঙ্গারা মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। তবে ইতোমধ্যে ক্যাম্পগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অভিযান পরিচালনার পর থেকে ইয়াবা ব্যবসা অনেকটা কমে গেছে। কিন্তু সম্প্রতি রোহিঙ্গারা পেটের ভেতরে করে ইয়াবা পাচার করতে গিয়ে ধরা পড়ছে। তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গাদের মাদক থেকে দূরে রাখতে ক্যাম্পে ক্যাম্পে মাদকবিরোধী সভা পরিচালনা করছে পুলিশ। এর মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মাদক ব্যবসা, সেবন ও চোরাচালানসহ বিভিন্ন অপরাধ রোধে সচেতন করা হচ্ছে এবং মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রোহিঙ্গাদের তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহযোগিতার অনুরোধও জানানো হচ্ছে।

টেকনাফের ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ ফয়সল হাসান খান বলেন, সীমান্তে মাদক ঠেকাতে বিজিবি জীবন বাজি রেখে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। এছাড়া গত মাসে ৭১ হাজার ৬৩৯ পিস ইয়াবাসহ ২০ জনকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে মাদক পাচার রোধে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads