• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
ফের সক্রিয় হচ্ছে জঙ্গিরা

ছবি : সংগৃহীত

অপরাধ

ফের সক্রিয় হচ্ছে জঙ্গিরা

  • আজাদ হোসেন সুমন
  • প্রকাশিত ২৩ জুন ২০১৯

বাংলাদেশকে আইএস’র টার্গেট করে ফের সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে ঘাপটি মেরে থাকা জঙ্গিরা। তারা যে কোনো মূল্যে বাংলাদেশে একটি বড় ধরনের নাশকতা ঘটাতে চায়। উদ্দেশ্য বাংলাদেশে নিজেদের শক্ত অবস্থান জানান দেওয়া এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। সম্প্রতি যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তাতে এই আশঙ্কাকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও আগের চেয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। বেড়েছে গোয়েন্দা তৎপরতা। কিন্তু অতিসম্প্রতি আইএস ঘোষিত বাংলাদেশ প্রধান আবু আল বাঙালি ও মাস্টারমাইন্ড জঙ্গি মেজর জিয়াকে গ্রেফতার করতে না পারায় কিছুটা হলেও উদ্বেগের মধ্যে আছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সম্প্রতি ঢাকার গুলিস্তানে ও মালিবাগে পুলিশের ওপর হামলা হয়। ওই হামলায় এক নারী পুলিশ সদস্যসহ চার পুলিশ সদস্য ও একজন রিকশাচালক আহত হন। প্রথমে এগুলোকে সাধারণ ককটেল হামলা মনে করা হলেও পরদিন ঢাকা মহানগর পুলিশ প্রধান আছাদুজ্জামান মিয়া হামলায় ব্যবহূত বোমাগুলো শক্তিশালী বলে উল্লেখ করেন। হামলায় ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইডি) ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানান তিনি। আর হামলার পর মধ্যরাতে এর দায় স্বীকার করে তথাকথিত আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস। তাদের ‘আমাক ওয়েবসাইট’-এ দায় স্বীকার করে একটি বার্তা প্রচার করা হয়। তবে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, এই হামলায় আইএস জড়িত কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এদিকে জঙ্গিদের মুখপত্র ‘আত-তামকিন’ হামলার দুদিন পর একটি বার্তা প্রচার করে। ওই বার্তায় বাংলাদেশ ও ভারতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। বার্তাটি বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দি ভাষায় প্রকাশ করা হয়। বার্তার সঙ্গে ২০১৬ সালে ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজানে হামলাকারী ৫ জঙ্গির ছবিও ব্যবহার করা হয়েছে। বার্তাটি আবু মুহাম্মাদ আল বাঙালির নামে প্রচার করা হয়েছে। ওই ব্যক্তিই আইএস’র বাংলাদেশ প্রধান হিসেবে মনোনীত হয়েছেন বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বরাত দিয়ে এর আগে সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। তার নামে গত ১২ মার্চও ‘আত তামকিন’-এর একটি সংখ্যায় কিছু নির্দেশনা প্রকাশ করা হয়েছিল। গত বছরের অক্টোবরে নরসিংদীতে একটি অভিযান পরিচালনার সময় আবু মুহাম্মাদ আল বাঙালির নামটি প্রথম জানতে পারে ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।

বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্তারা মনে করেন, মেজর জিয়া অত্যন্ত ধূর্ত একজন মাস্টারমাইন্ড জঙ্গি। সে যে কোনো অবস্থান থেকে নাশকতামূলক তৎপরতায় লিপ্ত হতে পারে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরেকটি নাম- আবু মুহাম্মাদ আল বাঙালি। এই নামটি নব্য জেএমবির বাংলাদেশ প্রধান হিসেবে সম্প্রতি আইএস ঘোষণা করেছে।

এ ব্যাপারে পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট প্রধান মো. আবুল কাশেম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, থ্রেট আছে। এটা যেমন ঠিক আমরাও সর্বোচ্চ সতর্ক এবং তৎপর আছি। যে কারণে জঙ্গিদের সব পরিকল্পনা ভেস্তে যাচ্ছে। ২০১৬ সালে হলি আর্টিজানে হামলার পর জঙ্গিরা শত পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু বড় ধরনের হামলা করতে পারেনি একটিও। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বদা সজাগ দৃষ্টি রেখে দায়িত্ব পালন করছে। ফলে জঙ্গিরা চেষ্টা করেও সুবিধা করতে পারেনি। তিনি আরো বলেন, শুধু আমরা একা নই, জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে জনসাধারণ সম্পৃক্ত রয়েছে আমাদের সঙ্গে। যেখানেই জঙ্গিদের উপস্থিতি সেখান থেকেই সাধারণ মানুষ আমাদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করে। আর এ কারণেই আমাদের মনোবল চাঙা আছে এবং দৃঢ়তার সঙ্গে জঙ্গিদের মোকাবেলার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।

একটি গোয়েন্দা সংস্থা সূত্র জানায়, সর্বশেষ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের মার্কেট এবং আশপাশে বোমা হামলার হুমকি দেওয়া হয়েছে চিঠি পাঠিয়ে। জেএমবি’র পরিচয়ে ওই চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে মসজিদ মার্কেট ও আশপাশের হোটেলে অনৈসলামিক কাজের কথা বলা হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন ওই চিঠি পাওয়ার পর পুলিশকে জানিয়েছে। পুলিশ ওই এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করেছে। তল্লাশি বাড়িয়ে দিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোয়েন্দা সংস্থার একজন পদস্থ কর্মকর্তা বাংলাদেশের খবরকে জানান, সম্প্রতি আইএসঘোষিত আবু আল বাঙালি ও আনসারুল্লাহ বাংলাটিম প্রধান মাস্টারমাইন্ড মেজর জিয়া মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দুজনকে ধরার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তিনি আরো বলেন, মাথাব্যথার আরো একটি কারণ হচ্ছে জঙ্গিরা কৌশল বদলে এখন ‘লোন উল্ফ’ হামলার ছক কষছে। লোন উল্ফ হামলা সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জঙ্গিরা ইতোমধ্যে বহু লোন উল্ফ হামলা চালিয়েছে। এক্ষেত্রে তাদের একজন সুসাইডাল ভেস্ট পরে লোক সমাগমে হামলে পড়ে। এতে নাশকতা ঘটিয়ে ভেস্ট পরা জঙ্গিও নিহত হয়।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও জঙ্গি হামলার আশঙ্কা আছে। তারা যে বাংলাদেশকে টার্গেট করেছে এটা বিভিন্ন সময় জানান দিয়েছে। অবশ্য এসব টার্গেটকে সামনে রখে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট তৎপর রয়েছে। হোমগ্রোন টেরোরিস্ট থেকেই যাবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও রিক্রুটমেন্ট হচ্ছে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা জঙ্গিবাদ ছড়ানোর সহায়ক হিসেবেই আছে। তাই বাংলাদেশ কোনোভাবেই আশঙ্কামুক্ত নয়। তিনি বলেন, সিরিয়ায় আইএস’র পতনের ফলে জঙ্গিরা নতুন হামালার পরিকল্পনা করছে। তারা তাদের শক্ত অবস্থানের জানান দিতে চায়। তাদের খলিফা বাগদাদি তো আগেই বলে দিয়েছে, কারো সিরিয়া আসার দরকার নেই, নিজ নিজ অবস্থান, নিজ নিজ দেশ থেকে সংগ্রাম চালিয়ে যাও। আমাদের দেশেও জঙ্গিদের অনুকূল পরিবেশ আছে। তাই সবাইকে সর্বোচ্চ মাত্রায় সতর্ক থাকতে হবে। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads