• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
বহাল তবিয়তে গাসিক হিসাবরক্ষক নজরুল

গাসিক হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম

সংগৃহীত ছবি

অপরাধ

সাড়ে ৩ কোটি টাকার চেক জালিয়াতি

বহাল তবিয়তে গাসিক হিসাবরক্ষক নজরুল

  • প্রকাশিত ০৩ জুলাই ২০১৯

চেক জালিয়াতি করে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের (গাসিক) হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম। তার বিরুদ্ধে একাধিক চেকে ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও বিভিন্ন দুর্নীতির বিষয় ধামাচাপারও অভিযোগ উঠেছে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি দেয় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিও) কেএম রাহাতুল ইসলামকে। ওই চিঠিতে দুদকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে বলা হলেও রহস্যজনক কারণে এখনো কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়নি। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে বিভিন্ন মহলে চেষ্টা-তদবির চালাচ্ছেন নজরুল।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অর্থ আত্মসাতের কথা স্বীকার করে বলেন, আমরা চাকরি করি, চাকরি করতে গিয়ে অনেক সময় অনেক কিছু করতে হয়। সবকিছু হয়েছে মেয়র মহোদয়ের নির্দেশে। তার আত্মীয়স্বজন ছাড়াও ঘটনার সঙ্গে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জড়িত। কারণ চেকে তারও স্বাক্ষর রয়েছে। তারা তো আর না বুঝে চেকে স্বাক্ষর করেননি। এখান থেকে আমি সামান্য কিছু টাকা কমিশন পেয়েছি। দাম্ভিকতার সঙ্গে নজরুল ইসলাম আরো বলেন, পত্রিকায় লিখে হয়তো সামান্য মানসম্মান নষ্ট করতে পারবেন। এর বেশি কিছু হবে না। দুদককে ম্যানেজ করতে পারলে পত্রিকায় যতই লেখেন, কোনো লাভ হবে না। কিছুদিন পর দুদক থেকে ছাড়পত্র নেওয়া হবে। তখন তো কোনো জবাব দিতে পারবেন না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কেএম রাহাতুল ইসলাম জানান, দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-ঢাকার সহকারী পরিচালক মো. মনিরুল ইসলামের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি আমি পেয়েছি। ওই চিঠিতে রেকর্ডপত্র/কাগজপত্রাদির মূলকপি সংরক্ষণপূর্বক সত্যায়িত ছায়াকপি সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। আমরা তা সরবরাহ করেছি। দুদক বিষয়টি তদন্ত করছে। তদন্তে নজরুল ইসলাম দোষী প্রমাণিত হবেন।

নিজেকে নির্দোষ দাবি করে তিনি আরো বলেন, সিটি করপোরেশনের সব হিসাব-নিকাষ তাদের কাছে। যেকোনো বিলের চেকে তারা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের ব্যাংক হিসাব নাম্বার বসিয়ে নিয়ে আসেন। সেটা কখনো যাচাই করে দেখা হয় না। তাদের ওপর বিশ্বাস করেই আমরা চেকে স্বাক্ষর করি। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাসিকের একাধিক সূত্র জানা যায়, নজরুল ইসলাম কতিপয় কর্তাব্যক্তির যোগসাজশে ভুয়া বিল, ভাউচার ও নোটশিট তৈরি করেন। পরে তৎকালীন মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নানের অসুস্থতার সুযোগে মেয়রের ফ্ল্যাক্সো সিল ব্যবহার করে সিটি করপোরেশনের কোটি কোটি টাকার চেক নজরুল ইসলাম তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট ‘ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি), টঙ্গী শাখা, হিসাব নং ০৭০৩২০১০০০০৭৭৭০৪-এ জমা করে। ওই অ্যাকাউন্টে ১৮-১০-২০১৮ ইং তারিখ পর্যন্ত নজরুল ইসলামের নামে জমা থাকা টাকার পরিমাণ ৩ কোটি ৪০ লাখ ৮৭ হাজার ৫৮৮.৬৪ টাকা।

গুঞ্জন রয়েছে, ওই হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার রাজধানীর রমনা থানা এলাকার সিদ্ধেশ্বরীতে এইচ-৬৩/৩ একটি ফ্ল্যাট, ফকিরাপুল এলাকায় দুটি ফ্ল্যাট বাড়ি ও বিলাসবহুল দুটি গাড়ি রয়েছে। দুর্নীতির টাকা দিয়ে তিনি ঘুরে বেড়ান দেশ-বিদেশে।

এমদাদুল হক খান 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads