• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
ইউপিডিএফ-জেএসএস দ্বন্দ্বে ৬ মাসে ৩৮ খুন

ছবি : সংগৃহীত

অপরাধ

পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র তৎপরতা

ইউপিডিএফ-জেএসএস দ্বন্দ্বে ৬ মাসে ৩৮ খুন

  • এ এইচ এম ফারুক
  • প্রকাশিত ০৮ জুলাই ২০১৯

এ বছরের প্রথম ৬ মাসে পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানে ৩৯ খুনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৩৮টি খুনের ঘটনা ঘটেছে পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠন জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এবং তাদের সংস্কার অংশের বিরোধে। একই সময়ে আহত হয়েছে আরো ৬৭ জন। এ সময় ১৫টি অপহরণ ও ১৯টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক উদ্ধার হয়েছে ৫৬টি বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র এবং ১৫৯৫ রাউন্ড বিভিন্ন ধরনের গুলি।

গতকাল রোববার পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক গবেষণা সংস্থা সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান পলাশ ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রণীত এক প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশন গত ছয় মাস গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে।

মেহেদী হাসান পলাশ সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশন সম্পর্কে বলেন, সংস্থাটি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক একটি গবেষণা সংস্থা। রাজধানী ঢাকার পুরানা পল্টনে এ সংগঠনের প্রধান কার্যালয় অবস্থিত। সংগঠনটি জন্মলগ্ন থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক সব ঘটনাবলির ওপর পর্যবেক্ষণ, মনিটরিং, রিপোর্ট প্রণয়ন ও কনসালটিং করে থাকে। 

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের প্রথম ৬ মাসে পার্বত্য চট্টগ্রামে রাজনৈতিক কারণে সংঘটিত ৩৯টি খুনের ঘটনার মধ্যে ৩৮টি খুন হয়েছে আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর মধ্যকার অভ্যন্তরীণ ও আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে এবং ১টি ঘটেছে জাতীয় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ-বিএনপি দ্বন্দ্বের কারণে।

আঞ্চলিক রাজনৈতিক কারণে সংঘটিত খুনের ঘটনাগুলোর মধ্যে উপজাতি কর্তৃক উপজাতি খুনের ঘটনা ঘটেছে ২৬টি, বাঙালি কর্তৃক বাঙালি খুনের ঘটনা ঘটেছে ৩টি এবং উপজাতি কর্তৃক বাঙালি খুনের ঘটনা ঘটেছে ৯টি। তবে এ সময়ে বাঙালি কর্তৃক কোনো উপজাতি খুনের ঘটনা ঘটেনি।

একই সময়ে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ১ জন, সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৭ জন, বজ্রপাতে ৩ জন, পানিতে ডুবে ২০ জন নিহত হয়েছে। এ সময়ে আত্মহত্যা করেছে ১১ জন। এ ছাড়াও এ সময়ে অজ্ঞাত বা অশনাক্ত কারণে ২৯ জন নিহত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের প্রথম ৬ মাসে আঞ্চলিক রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত বিরোধের কারণে আহত ৬৫ জনের মধ্যে উপজাতি কর্তৃক উপজাতি ১৪ জন, বাঙালি কর্তৃক বাঙালি ৩৫ জন, উপজাতি কর্তৃক বাঙালি ১৬ জন আহত হয়েছে। তবে এ সময়ে বাঙালি কর্তৃক কোনো উপজাতি আহত হয়নি। একই সময়ে ভূমিধসে ২ জন, বজ্রপাতে ৫ জন, পানিতে ডুবে ১ জন এবং সড়ক দুর্ঘটনায় ১৩৯ জন আহত হয়েছে। এ ছাড়াও অজ্ঞাত ও অন্য কারণে ৩৬ জন আহত হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের জানুয়ারি-জুন মাসের মধ্যে মোট ১৫টি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে আঞ্চলিক রাজনৈতিক কারণে ৯টি এবং অজ্ঞাত কারণে ১টি এবং অন্যান্য কারণে ৫টি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। আঞ্চলিক রাজনৈতিক কারণে অপহরণের ৯টি ঘটনার মধ্যে উপজাতি কর্তৃক উপজাতি অপহরণের ঘটনা ৮টি এবং উপজাতি কর্তৃক বাঙালি অপহরণের ঘটনা ১টি ঘটেছে। এ সময়ে বাঙালি কর্তৃক বাঙালি বা বাঙালি কর্তৃক উপজাতি অপহরণের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, জানুয়ারি-জুন ২০১৯ সালের মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১৯টি। এর মধ্যে উপজাতি কর্তৃক উপজাতি ৩টি, বাঙালি কর্তৃক বাঙালি ১৫টি এবং বাঙালি কর্তৃক উপজাতি ১টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও উপজাতি কর্তৃক কোনো বাঙালি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি।

২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সর্বমোট উদ্ধারকৃত ৫৬টি বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র এবং ১৫৯৫ রাউন্ড বিভিন্ন ধরনের গুলির মধ্যে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ৩৩টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৫৩৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে জেএসএস মূলের কাছ থেকে ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৪৪৬ রাউন্ড গুলি; ইউপিডিএফ মূলের কাছ থেকে ১৮টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৮৪ রাউন্ড গুলি, জেএসএস সংস্কারের কাছ থেকে ১টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়াও একই সময়ে অজ্ঞাত উৎস থেকে ১১টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ২৮ রাউন্ড গুলি এবং অন্যান্য উৎস থেকে ১২টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১০৩২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম সম অধিকার আন্দোলনে প্রতিষ্ঠাতা সাবেক এমপি ওয়াদুদ ভূঁইয়া বাংলাদেশের খবরকে বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে চাঁদাবাজিকে ঘিরে উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর একটি অংশ জেএসএস-ইউপিডিএফ এবং তাদের সংস্কার অংশ নামে মোট ৪টি সশস্ত্র গ্রুপ গড়ে তুলেছে। সক্রিয় গ্রুপগুলো চাঁদাবাজির জন্য অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের মজুদ ও ব্যবহার করছে। চাঁদার জন্য নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করে খুনোখুনিতে মেতেছে।

সরকার অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে এবং চাঁদাবাজদের আইনের আওতায় আনলে এসব খুনোখুনি বন্ধ হবে বলে আশা করছি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সাধারণ পাহাড়ি এবং বাঙালি এসব অস্ত্র ও চাঁদাবাজদের কাছে আজ জিম্মি। সব খুনোখুনি এবং রক্তপাত বন্ধে সরকারকে আন্তরিক হওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।

জেএসএসের মুখপাত্র সজিব চাকমা বলেন, পাহাড়ে খুনোখুনি হয় এটা সত্য। কিন্তু তা আঞ্চলিক সংগঠনের দ্বন্দ্বে হয় এমন নয়। নানাহ কারণে ঘটে। আর সম্প্রতি ইউডিডিএফ নিজেদের মধ্যে বিরোধ তৈরি করে দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে গেছে। তাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বেও কিছু খুনোখুনি ঘটেছে।

তিনি চাঁদাবাজির সঙ্গে জেএসএসের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, জেএসএসের মাধ্যমে সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। তাই জেএসএসকে বদনাম করার জন্য এমন অপপ্রচার চালানো হয়। ইউপিডিএফ মুখপাত্র নিরন চাকমা বলেন, ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক ধারায় অধিকার আদায়ের আন্দোলন করছে। বিভিন্ন সময় সরকারি বাহিনীর ছত্রছায়ায় থেকে ইউডিডিএফ নেতাকর্মীদের হত্যার ঘটনা ঘটছে। চাঁদাবাজির সঙ্গে ইউপিডিএফ জড়িত নয়। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সংগঠনে ডোনেশন দিয়ে থাকেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads