• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
প্রতারকরা হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা

সংগৃহীত ছবি

অপরাধ

এটিএম বুথে অ্যান্টি-স্কিমিং ডিভাইস নেই

প্রতারকরা হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ১০ জুলাই ২০১৯

দেশের বেশির ভাগ এটিএম বুথেই অ্যান্টি-স্কিমিং ডিভাইস নেই। আর এ সুযোগে দেশি-বিদেশি প্রতারকচক্র হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল অঙ্কের টাকা। গত ৩ বছরে তারা বিভিন্ন ব্যাংকের বুথ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। দেশি-বিদেশি শতাধিক প্রতারকচক্র ওই অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। ওই চক্রের সদস্যরা বাংলাদেশের মতো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। বিশ্বের কত দেশে কতটি সিন্ডিকেট এমন প্রতারণার সঙ্গে জড়িত, তা নিশ্চিত হতে একটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক টিম গঠিত হয়েছে। সিআইডি পুলিশের সার্বিক সহায়তায় আন্তর্জাতিক ওই টিম এটিএম বুথ জালিয়াতির দায়ে বাংলাদেশে গ্রেপ্তার হওয়া বিদেশিদের পর্যায়ক্রমে জিজ্ঞাসাবাদ করতে যাচ্ছে। পুলিশ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ২০১৬ সালে প্রথম প্রযুক্তিনির্ভর জালিয়াতির মাধ্যমে এদেশে এটিএম বুথ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ধরা পড়ে। ওই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি ইস্টার্ন ব্যাংক রাজধানীর বনানী মডেল থানায় একটি মামলা করে। মামলার অভিযোগে বলা হয়, অন্তত ২১ গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে এটিএম কার্ড ক্লোন করে অন্তত ১০ লাখ টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। দুদিন পর ১৪ ফেব্রুয়ারি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড (ইউসিবিএল) একই থানায় একই ধরনের অভিযোগে আরো একটি মামলা করে। ওই মামলার অভিযোগে বলা হয়, ব্যাংকটির এটিএম বুথে স্কিমিং ডিভাইস বসিয়ে গ্রাহকের এটিএম কার্ডের তথ্য চুরি করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটছে। তাছাড়া পল্লবী থানায় সিটি ব্যাংকের তরফ থেকে এমন অভিযোগে আরেকটি মামলা দায়ের হয়। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র জানা যায় ইউসিবিএল ছাড়াও ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড ও সিটি ব্যাংকের ৬টি বুথে স্কিমিং ডিভাইস বসিয়ে তথ্য চুরি করে একইভাবে কার্ড বানিয়ে প্রায় ২১ লাখ টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। স্কিমিং ডিভাইসটি অন্তত ১২শ এটিএম কার্ডের তথ্য সংগ্রহ করে। এর মধ্যে চক্রটি ৪০টি কার্ড তৈরি করে টাকা তুলে নিয়েছে। সূত্র জানায়, পুলিশি তদন্তের ধারাবাহিকতায় ওই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি জার্মানির নাগরিক পিওটর স্কেজেফান মাজুরেক (৫০), সিটি ব্যাংকের তিন কর্মকর্তা মোকসেদ আলী মাকসুদ (৪৫), রেজাউল করিম শাহীন (৪০) ও রেফাত আহমেদ রনিকে (৪২) গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্য মতে, চক্রটি শুধু বাংলাদেশেই সক্রিয় নয়; বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও সক্রিয়। তারা শুধু ২০১৬ সালেই বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থাৎ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৬শ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। যার মধ্যে ২০১৬ সালেই চক্রটি বাংলাদেশ থেকে অন্তত ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে দাবি করেছে। জালিয়াতচক্রটির সঙ্গে লন্ডনপ্রবাসী পলাতক দুই বাংলাদেশি ছাড়াও চার বিদেশি জড়িত।

সূত্র আরো জানায়, এ দেশের অধিকাংশ এটিএম বুথে অ্যান্টি-স্কিমিং ডিভাইস নেই। আর এই সুযোগটিই কাজে লাগায় দেশি-বিদেশি চক্র। তারা কার্ড প্রবেশ করানোর জায়গায় এবং এটিএম বুথের মনিটরের ওপরের দিকে সূক্ষ্ম ক্যামেরা বসিয়ে রাখে। সেই ক্যামেরায় ভিডিও হয় গ্রাহকের গোপন পিন নম্বর। ওই পিন নম্বর দিয়ে ক্লোন এটিএম কার্ড তৈরি করে এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে নেয় প্রতারকচক্র। বিগত ২০১৭ সালের ১০ মার্চ র্যাব-১০-এর হাতে আন্তর্জাতিক এটিএম কার্ড জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত ১১ জন গ্রেপ্তার হন। ওই চক্রের হোতা সোহেল। তিনি দুবাই থাকার সময় এরিন লিমো নামে যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিকের মাধ্যমে এটিএম কার্ড জালিয়াতির কৌশল শেখেন। ওই বিদেশিই তাকে এটিএম কার্ড জালিয়াতির বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন। এরিক লিমো ১২ বছর ধরে কার্ড জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত। দুবাইয়ে ৫ বছর সোহেল এরিক লিমোর সঙ্গে কার্ড জালিয়াতি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। সোহেল ও পিটার নামের এক বিদেশি ২০১৭ সালে বিভিন্ন এটিএম বুথ থেকে ৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে পিটার গ্রেপ্তার হয়। চক্রটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী আন্তর্জাতিক কার্ড জালিয়াতচক্রের যোগাযোগ আছে। সর্বশেষ চলতি বছর ১ জুন ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের খিলগাঁওয়ের এটিএম বুথ থেকে কার্ড জালিয়াতি করে তিন লাখ টাকা উত্তোলনের ঘটনায় ইউক্রেনের সাত নাগরিক- দেনিস ভিতোমস্কি (২০), নাজারি ভজনোক (১৯), ভালেনতিন সোকোলোভস্কি (৩৭), সের্গেই উইক্রাইনেৎস (৩৩), আলেগ শেভচুক (৪৬) ও ভালোদিমির ত্রিশেনস্কি (৩৭) ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন।

এদিকে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম জানান, গত বছর এপ্রিলে হাতঘড়ির বিশেষ ডিভাইসে এটিএম কার্ডের তথ্য চুরি করে সেই তথ্য দিয়ে ক্লোন এটিএম কার্ড বানিয়ে টাকা তুলে নেওয়ার সঙ্গে জড়িত শরিফুল ইসলাম নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় বিভিন্ন ব্যাংকের ১৪শ  ক্লোন এটিএম কার্ড, একটি ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ কার্ড রিডার ও রাইটার, তিনটি পজ মেশিন, তথ্য চুরির কাজে ব্যবহূত ডিজিটাল হাতঘড়ি, দুটি মিনিকার্ড রিডার ডিভাইস, ১৪টি পাসপোর্ট, ৮টি মোবাইল ফোনসেট, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের একটি নেক্সাস ক্রেডিট কার্ড, তিনটি জাতীয় পরিচয়পত্র, একটি পরচুলাসহ নানা সরঞ্জাম। শরিফুল শুধু গত বছরের শুরুতেই ব্র্যাক, সিটি, ইবিএল, ইউসিবিএল ও ব্যাংক এশিয়ার এটিএম কার্ড জালিয়াতি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। শরিফুল বিভিন্ন চেন শপে পজ মেশিন দিতেন। তিনি ওই মেশিনে বিশেষ ডিভাইস বসিয়ে দিতেন। গ্রাহকরা পজ মেশিনে ব্যাংকের এটিএম কার্ড পাঞ্চ করলে কার্ডের তথ্য থেকে যেত সেই ডিভাইসে। এভাবে গ্রাহকের এটিএম কার্ডের তথ্য চুরি করে ক্লোন এটিএম কার্ড তৈরি করতেন তিনি। আর সেই কার্ড দিয়ে এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে নিতেন। শরীফুল ইসলাম ডিপার্টমেন্টাল শপ স্বপ্নের বনানী শাখায় কাজ করতেন। সুবিধার জন্য বাঁ বা ডান হাতে বিশেষ ডিভাইসযুক্ত হাতঘড়িটি পরতেন।  পজ মেশিনের যাবতীয় তথ্য ব্লু টুথের মাধ্যমে হাতঘড়িতে থাকা মিনি কার্ড রিডার ও স্ক্যানারে জমা হতো। পরে বাসায় গিয়ে তার ল্যাপটপ ও ডিভাইসের মাধ্যমে কাস্টমারের তথ্যগুলো ভার্জিন কার্ড বা খালি কার্ডে স্থাপন করে ক্লোন এটিএম কার্ড বানাতেন তিনি। পরে সুবিধাজনক এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে নিতেন। তাছাড়া বুথে টাকা তোলার সময় সিসি ক্যামেরায় যাতে তার আসল চেহারা না ওঠে এজন্য সে বিশেষ ধরনের কালো সানগ্লাস ও পরচুলা ব্যবহার করতেন। অন্য চেহারা ধারণ করে এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে নিতেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads