• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
শতকোটি টাকা কানাডায় পাচার করেছেন তাজুল

ছবি : সংগৃহীত

অপরাধ

শতকোটি টাকা কানাডায় পাচার করেছেন তাজুল

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৫ জুলাই ২০১৯

সাধারণ গ্রাহকের জমার ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং শতকোটি টাকা কানাডায় পাচার করেছেন আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম তাজুল ইসলাম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়াই সমবায় সমিতিকে ব্যাংক হিসেবে প্রচার করে গ্রাহকদের লভ্যাংশের ফাঁদে ফেলে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু লভ্যাংশ তো দূরের কথা আসলই পরিশোধ করেনি। কাডানায় থাকা দুই ছেলের নামে আত্মসাতের টাকা পাচার করেছেন তাজুল ইসলাম। গতকাল রোববার দুপুরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অর্গানাইজড ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম।

গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ এবং কানাডায় টাকা পাচারের অভিযোগে গত ১২ জুলাই ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা থানায় একটি মামলা করেছে সিআইডি। মামলা নং-২১। এ মামলায় তাজুল ইসলাম ও তার স্ত্রীসহ তিন সন্তানকে আসামি করা হয়েছে। একই ধারায় গত ২৫ মে বংশাল থানায় দায়ের করা মামলার তদন্ত চলছে। মামলা নং-৪৩। বংশাল থানার মামলায় গত ১০ জুলাই মতিঝিল এলাকা থেকে প্রধান আসামি এম তাজুল ইসলামকে (৬৯) গ্রেপ্তার করে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি।

গত ১১ জুলাই আসামি তাজুল ইসলামকে দুই দিনের রিমান্ডে পাঠান মহানগর হাকিম আদালত। গতকাল বিকালে তাজুল ইসলামের দুই দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করে আরো ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির (পরিদর্শক) নেয়াকত উল্লাহ। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম আশেক ইমাম এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুল হাই রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেডের কার্যক্রম ১৯৮৪ সালে শুরু হয়। প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম ছিল সম্পূর্ণ এমএলএম কোম্পানির মতো। এছাড়া ব্যাংক হিসেবে এই প্রতিষ্ঠনের কোনো স্বীকৃতি নেই। কিন্তু নামের শেষে ব্যাংক শব্দটি ব্যবহার করে সমিতির কার্যক্রম পরিচালনা করে, মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। এই ৩০০ কোটি টাকা প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান তাজুল ইসলামের ৫০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়। পরে এসব অ্যাকাউন্ট থেকে অনলাইনে ট্রান্সফার করে টাকা স্ত্রী ও তিন ছেলের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করেন তিনি। এর মধ্যে তার দুই ছেলে কানাডা থাকেন, যাদের কাছে ১০০ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। এছাড়া এসব টাকার কিছু অংশ দিয়ে তিনি দেশের বিভিন্ন এলাকায় মার্কেট ও জমি কেনেন।

গ্রাহকরা কেন এমন প্রতিষ্ঠানে টাকা জমা রাখতেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১২ শতাংশ সুদ ও ১৮ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে ১৬০টি শাখা থেকে টাকা নেওয়া হতো গ্রাহকদের কাছ থেকে। পরে টাকা দেওয়ার সময় হলে, গ্রাহকরা টাকা চাইলে তাদের আজ নয় কাল করে সময় দেওয়া হতো। একপর্যায়ে গ্রাহকরা না মানলে তাদের হুমকিও দেওয়া হতো।

এ ঘটনায় আরো কেউ জড়িত আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ঘটনায় তাজুল ইসলামের স্ত্রী ও তিন ছেলে জড়িত। তারাও মামলার আসামি। এছাড়া এ বিষয়ে মানি লন্ডারিং আইনেও একটি মামলা করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছি।

সিআইডি জানায়, এমএলএম কোম্পানি হয়েও ব্যাংক বলে ১১ হাজার ৪২৫ জন গ্রাহকের থেকে ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম। এছাড়া অনুমোদিত ২৬টি শাখার জায়গায় সমগ্র বাংলাদেশে ১৬০টি শাখা অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়।

ব্যাংকের হিসাব বিবরণী এবং স্টেটমেন্ট পর্যালোচনা করে সিআইডি জানতে পেরেছে, আসামিরা গ্রাহকদের জমাকৃত আনুমানিক ৩০০ কোটি টাকা নগদ ও অনলাইনে ট্রান্সফার করে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাবে স্থানান্তর করে নিজ নামে, স্ত্রী আফরোজা পারভীন এবং ছেলে সাজ্জাদুল ইসলাম তানভীরের পরিচালিত সাউদি বাংলা প্রপার্টিজ লিমিটেড, তানভীর এন্টারপ্রাইজ ও তানভীর অটো ব্রিক লিমিটেডের হিসাবে স্থানান্তর করে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের অন্যদের নামে চেক ইস্যু, ব্যবস্থাপনা কমিটির বর্তমান ও সাবেক সদস্য ও কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নগদে উক্ত টাকা উত্তোলন করে সংঘবদ্ধ প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করে বিভিন্ন ব্যাংকে হস্তান্তর করে।’

সিআইডি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, তাজুল ইসলাম ১৯৮৪ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডে কর্মরত ছিলেন। ১৯৮৪ সালে আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেডেরও কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০৫ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে যুক্ত হন তাজুল ইসলাম। 

এর আগে ২০১৭ সালে এম তাজুল ইসলামসহ ব্যবস্থাপনা কমিটির বর্তমান ও সাবেক ৩১ জন সদস্যের বিরুদ্ধে অর্থ তছরুপ ও সমিতির অর্থ আত্মসাতের কারণে সমবায় অধিদপ্তর সমবায় আইনের ৪৯ ধারা মোতাবেক ২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। তবে জরিমানার ওই অর্থ আজও সমিতির কোষাগারে জমা দেওয়া হয়নি।

আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম তাজুল ইসলাম কানাডার গ্রিন কার্ডধারী এবং তার ছেলে ফারহাদুল ইসলাম ছাব্বির ও রিয়াজুল ইসলাম রিজভী উভয়ই ২০১১ সাল থেকে কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads