• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
ছেলেধরা গুজবে প্রাণ গেল বাবার

ছবি : সংগৃহীত

অপরাধ

ছেলেধরা গুজবে প্রাণ গেল বাবার

  • নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২২ জুলাই ২০১৯

পরকীয়ায় জড়িয়ে বছর খানেক আগে বিদ্যুৎ মিস্ত্রি আ. মান্নান ওরফে সোহেলের সঙ্গে পালিয়ে যায় বাকপ্রতিবন্ধী সিরাজের স্ত্রী শামসুন্নাহার। সঙ্গে নিয়ে যান মেয়ে মিনজুকেও (৬)। অনেক খুঁজেও তাদের কোনো হদিস পাননি সিরাজ। ৫-৬ মাস আগে স্ত্রী শামসুন্নাহার তালাকনামাও পাঠান।

এদিকে কিছুতেই ভুলে থাকতে পারছিলেন না মেয়েকে। বিভিন্ন স্থানে খোঁজও করেছিলেন। কিন্তু পাননি। অবশেষে মেয়ের খোঁজ পেয়ে আর নিজেকে সামলাতে পারলেন না বাকপ্রতিবন্ধী সিরাজ। বাড়ির পাশের একটি মোবাইল ফোনের দোকান মালিকের কাছ থেকে ১০০ টাকা ধার নিয়ে মেয়ের জন্য চুড়ি ও লিপিস্টিক কিনে মেয়ের কাছে যান। কিন্তু সেই যাওয়ায় তার শেষ যাওয়া। সাবেক স্ত্রীর বর্তমান স্বামীর ভুল তথ্যে তাকে গণপিটুনিতে প্রাণ দিতে হলো।

শনিবার সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পূর্বপাড়া আল-আমিন নগর এলাকায় ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত হন হতভাগ্য বাবা বাকপ্রতিবন্ধী সিরাজ। সিরাজ পেশায় রাজমিস্ত্রির সহযোগী ছিলেন। সিদ্ধিরগঞ্জের সাইলো এলাকার ঠিকাদার মোহর চাঁনের বাড়িতে ভাড়া থাকেন। তার গ্রামের বাড়ি ভোলার লালমোহন থানার মুগিয়া বাজার এলাকায়।

সিরাজের ভাই ও এলাকাবাসীর দাবি পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। সহজ-সরল এ প্রতিবন্ধীর হত্যাকারীদের বিচার দাবি করে গতকাল রোববার বেলা ১১টায় এলাকায় মিছিল করেছেন এলাকাবাসী। সিরাজের স্বজন ও প্রতিবেশী সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১০ বছর আগে শামসুন্নাহারের সঙ্গে বিয়ে হয় বাকপ্রতিবন্ধী সিরাজের। ৬ বছরের এক মেয়ে রয়েছে তাদের। বাকপ্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করে সংসার চালাতেন। বছর খানেক আগে এলাকার বিদ্যুৎ মিস্ত্রি আ. মান্নান ওরফে সোহেলের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ান সিরাজের স্ত্রী শামসুন্নাহার।

সেই থেকে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন সিরাজ। স্ত্রীকে না পেলেও নিজের মেয়েকে খুঁজতে থাকেন। এক পর্যায়ে মেয়ের সন্ধান পান সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি আল আমিন নগর এলাকায়। একাধিকবার দেখেও আসেন মেয়েকে।

শনিবারও একইভাবে মেয়েকে দেখতে যান সিরাজ। মেয়ের সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে তার স্ত্রীর বর্তমান স্বামী আবদুল মান্নান ওরফে সোহেল তাকে দেখে ‘ছেলেধরা’ বলে চিৎকার দিলে এলাকাবাসী গণধোলাই দেন সিরাজকে। সেখান থেকে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। গতকাল তার মরদেহ সিদ্ধিরগঞ্জের সাইলোগেট এলাকায় নিয়ে গেলে কান্নায় ভেঙে পড়েন এলাকাবাসী। তাদের অনেককেই আক্ষেপ করে বলতে শোনা যায়, ‘এমন করে মানুষকে পিটিয়ে মারতে পারল লোকজন!’

তবে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (রোববার বিকালে) এ ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় কোনো মামলা হয়নি। মামলা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সেলিম মিয়া।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads