• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
রাজধানীর আশপাশে আত্মগোপনে জঙ্গিরা

প্রতীকী ছবি

অপরাধ

রাজধানীর আশপাশে আত্মগোপনে জঙ্গিরা

  • আজাদ হোসেন সুমন
  • প্রকাশিত ৩১ জুলাই ২০১৯

রাজধানী ও উপকণ্ঠ এলাকায় শতাধিক জঙ্গি আত্মগোপনে আছে। বিভিন্ন মেসে ও বাসাবাড়িতে ছদ্মবেশে অবস্থান নিয়ে সংগঠনকে পুনর্গঠন, নতুন সদস্য সংগ্রহসহ নানা ধরনের কার্যক্রমও চালাচ্ছে তারা। গোয়েন্দারা এ তথ্য জানলেও সুনির্দিষ্ট করে জঙ্গিদের চিহ্নিত করতে পারছে না। এ অবস্থায় পলাতক জঙ্গিদের সংগঠিত হওয়া নিয়ে চিন্তিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও। তাই তারা সতর্ক রয়েছে। আত্মগোপনে থেকে এসব জঙ্গি নাশকতার পরিকল্পনা করছে বলে গোয়েন্দাদের ধারণা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যমতে, জঙ্গি কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে জামা’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ-জেএমবি (পুরনো), নব্য জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ (হুজি), আনসার আল ইসলাম, হিজবুত তাহরিরসহ নিষিদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠীর তৃতীয় ও চতুর্থ সারির জঙ্গিরা সংগঠনের হাল ধরেছে। তাদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন দেশের বাইরে পলাতক শীর্ষ জঙ্গি নেতারা। পলাতক জঙ্গিদের হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে মুফতি মাহমুদ জানান, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে র্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে, থাকবে। ইতোমধ্যে বেশকিছু জঙ্গি জামিনে বেরিয়ে আত্মগোপনে গেছে। পলাতক জঙ্গিরা যাতে কোনো নাশকতা ঘটাতে না পারে সেজন্য র্যাবের সার্বক্ষণিক নজরদারি চলছে। জামিন নিয়ে আত্মগোপনে যাওয়া জঙ্গিসহ পলাতক জঙ্গিদের ডাটাবেজ তৈরি করছে র্যাব।

পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের

উপকমিশনার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান জানান, ইতোমধ্যে বেশকিছু জঙ্গি মামলার আসামি জামিন পেয়েছে বলে তথ্য রয়েছে। এসব জঙ্গি বাইরে এসে চুপচাপ বসে থাকবে না। নিজেদের সংগঠিত করতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছে। কিন্তু পুলিশের নিয়মিত মনিটরিং এবং অভিযানের কারণে জঙ্গিরা সংগঠিত হয়ে বড় ধরনের কোনো নাশকতা ঘটানোর মতো অবস্থানে নেই। তবে পলাতক জঙ্গিদের অপারেশনাল (জঙ্গি হামলা) সক্ষমতা না থাকায় তারা অনলাইনে যোগাযোগের মাধ্যমে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে বলে তথ্য রয়েছে। জেএমবি, নব্য জেএমবি, আনসার আল ইসলাম এবং হুজিসহ নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের ২ শতাধিক জঙ্গি জামিনে বেরিয়েছে বলে তথ্য রয়েছে।

জঙ্গি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতে, জামি’আতুল মুজাহিদিন (জেএমবি), নব্য জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ (হুজি), আনসার আল ইসলাম, হিজবুত তাহরিরসহ নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের ৭ শতাধিক জঙ্গি পলাতক রয়েছে। পলাতক জঙ্গিদের একটি ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে। ওই ডাটাবেজ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটে পাঠানো হয়েছে। এলাকাভিত্তিক ডাটাবেজের মাধ্যমে পলাতক জঙ্গিদের নাম-পরিচয় বের করা হয়েছে। শিগগিরই বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে এসব জঙ্গি গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া শুরু হবে।

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশে পালিয়ে থাকা দেড় শতাধিক পুরনো জেএমবি সদস্যের তথ্য রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। বিভিন্ন মামলায় জেলে থাকা পুরনো জেএমবির সদস্যদের মধ্যে ১৫ থেকে ২০ জন জামিন নিয়ে আত্মগোপনে রয়েছে। বিভিন্ন মামলায় নব্য জেএমবির ৭০ থেকে ৮০ জনের মতো পলাতক রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। সম্প্রতি ৩০ থেকে ৩৫ জনের মতো নব্য জেএমবির জঙ্গি গোপনে জামিন নিয়েছে। হরকাতুল জিহাদ (হুজির) অর্ধশতাধিক জঙ্গি দীর্ঘদিন ধরেই আত্মগোপনে রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার হওয়া হিজবুত তাহরিরের তিন শতাধিক জঙ্গি জেল থেকে জামিন নিয়ে আত্মগোপনে রয়েছে। দেশে ব্লগার, লেখক হত্যা করে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসা আনসার আল ইসলামের (আনসারউল্লাহ বাংলা টিম) প্রায় অর্ধশত জঙ্গি জামিন নিয়েছে বলে জানা গেছে।

গোয়েন্দা সংস্থা সূত্র জানিয়েছে, পলাতক জঙ্গিদের মধ্যে শতাধিক জঙ্গি রাজধানী ও উপকণ্ঠ এলাকা নারায়ণগঞ্জ, ডেমরা, সিদ্ধিরগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, সাভার, ধামরাই, নবাবগঞ্জ, দোহার ও আশপাশ এলাকায় ছদ্মবেশে অবস্থান করছে। সংখ্যায় তারা শতাধিক হবে। এরা নিজেদের আসল পরিচয় গোপন করে বিভিন্ন মেসে অবস্থান নিয়ে অনলাইনে সদস্য সংগ্রহসহ নানাবিধ অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। অপর একটি অংশ ছাত্রদের পড়ানোর নামে বিভিন্ন বাসায় লজিং থাকছে। সম্প্রতি মালিবাগ ও গুলিস্তানে পুলিশের ওপর ককটেল হামলা এসব আত্মগোপনে থাকা জঙ্গিদের কাজ বলে ধারণা পুলিশের।

এ ব্যাপারে পুলিশের এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের অ্যাডিশনাল ডিআইজি মনিরুজ্জামান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আত্মগোপনে থাকা এসব জঙ্গির অধিকাংশই হিজবুত তাহরিরের সদস্য। আমরা ইতোমধ্যে বেশ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। সে অনুযায়ী কাজও চলছে। তবে এটা মোটামুটি নিশ্চিত জঙ্গিরা এ মুহূর্তে বড় কোনো হামলা বা নাশকতামূলক তৎপরতা চালাতে সক্ষম নয়। তবে তারা যে কোনো সময় ককটেল ফোটানো বা ছোটখাটো ঘটনা ঘটাতে পারে। পুলিশ ও র্যাব সক্রিয় আছে, আমরা এন্টি টেরোরিজম ইউনিট সার্বক্ষণিক নজরদারি করছি। যেখানেই জঙ্গি সেখানেই অভিযান— এ মন্ত্রে দীক্ষা নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

আমাদের নেটওয়ার্কের আওতার বাইরে থাকা জঙ্গিদের খুব দ্রুতই শনাক্ত করার চেষ্টা করছি।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads