• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
সারা দেশে গড়ে উঠছে কিশোর গ্যাং কালচার

ছবি : সংগৃহীত

অপরাধ

সারা দেশে গড়ে উঠছে কিশোর গ্যাং কালচার

  • আজাদ হোসেন সুমন
  • প্রকাশিত ০৯ আগস্ট ২০১৯

রাজধানীসহ সারা দেশে গড়ে উঠছে কিশোর গ্যাং কালচার। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অবর্তমানে এই কিশোররাই এখন আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণের দিকে ঝুঁকছে। খোদ রাজধানীতে রয়েছে কমপক্ষে অর্ধশত গ্যাং। মহল্লার কোনো কিশোরী স্কুলে যাওয়ার পথে এসব কিশোরই ‘টিজ’ করে। এসব নিয়ে আধিপত্য বিস্তারের জেরে খুনের ঘটনাও ঘটেছে একাধিক। এসব কিশোরের দল ইয়াবা, ফেনসিডিল, মদ, গাঁজাসহ নানা ধরনের নেশায় আসক্ত। নেশার টাকা জোগাড় করতে গিয়েও তারা চুরি, চাঁদাবাজি ছিনতাইসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। আবার বনিবনা না হলে তুচ্ছ ঘটনার জেরে বন্ধুর হাতে খুন হচ্ছে আরেক বন্ধু। একসময় ছিল আন্ডারওয়ার্ল্ডে আগ্নেয়াস্ত্রের ঝনঝনানি।  খোদ রাজধানীতে ছিল সরকারের পুরস্কার ঘোষিত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ অর্ধশত কিলারের সদর্প পদচারণা। টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, জমির জবরদখল, ব্যবসায়িক আধিপত্য— সব জায়গাতেই ছিল এদের দোর্দণ্ড প্রতাপ। শীর্ষ একাধিক ব্যবসায়ী এবং বহু রাজনৈতিক নেতার আশীর্বাদপুষ্ট ছিল এরা। প্রায় প্রতিদিন কারণে-অকারণে গর্জে উঠত এদের আগ্নেয়াস্ত্র। প্রায়ই তাজা রক্তের বন্যা বইত রাজধানীতে। এরপর বিএনপির শাসনামলে ‘অপারেশন ক্লিন হার্ট’ পরিচালনার নামে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠা করা হয়। একের পর এক অভিযান। বদলে যেতে থাকে আন্ডারওয়ার্ল্ডের প্রেক্ষাপট। একটা পর্যায়ে গিয়ে বদলে যায়ও।

প্রায় দুই যুগ পর এসে রাজধানীতে গ্যাং কালচার গড়ে ওঠে। পর্যায়ক্রমে পাড়া-মহল্লায় কিশোরের দল অপরাধে ঝুঁকতে থাকে। রাজধানী ঢাকার উত্তরায় আদনান কবীর নামে স্কুলপড়ুয়া এক কিশোরকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর কিশোরদের গ্যাং সম্পর্কিত নানা তথ্য সামনে আসে। উত্তরায় কিশোর আদনান হত্যার পর থেকেই এ বিষয়ে সবার টনক নড়েছে। নবম শ্রেণির ছাত্র কিশোর আদনান কবীর খুন হয় ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি। ঘটনাস্থল তার বাড়ির পাশে, স্কুলের সামনে। মাঠের ভেতরে থাকা কমিউনিটি পুলিশ, আশপাশের মুদি দোকানদার, লন্ড্রি, চা-বিক্রেতা, আদনানের স্কুল  থেকে দল বেঁধে বের হওয়া ছেলেমেয়েরা সবাই দেখল এমন ঘটনা। এই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে বের হয়ে এলো উত্তরায় কিশোর গ্যাং-এর কথা। সেখানকার ডিসকো গ্রুপ, নাইন স্টার গ্রুপের কথা। ডিসকো গ্রুপের হাতে নাইন স্টার গ্রুপের কিশোর আদনান নিহত হয়।

বের হয়ে আসে উত্তরার এই দুটি কিশোর গ্যাং-এর মতো রাজধানীতে আরো কিশোর গ্যাং-এর হদিস। জানা যায়, কেবল উত্তরায় নয়, ধানমন্ডি ও গুলশানেও এ ধরনের বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাং রয়েছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গড়ে উঠেছে এ ধরনের গ্যাং বা গ্রুপ। গ্রুপের নাম বিভিন্ন ‘হরর ফিল্ম’ ও ভিডিও  গেমস  থেকে নেয় তারা। স্কুল-কলেজের কিছু ছাত্র আড্ডা দিতে দিতে গড়ে ওঠে  ছোট  ছোট গ্রুপ। একসঙ্গে  ঘোরাঘুরি খাওয়া-দাওয়া খেলা আর আড্ডার মধ্য দিয়ে একসময় তারা সহিংস হয়ে ওঠে। ছোটখাটো সন্ত্রাস ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ পেছনে ফেলে এই কিশোররা ড্রাগ, খুন, ধর্ষণের মতো ভয়ংকর অপরাধে জড়িয়ে পড়ে একসময়। দেশে কিশোর অপরাধ আগেও ছিল। তবে বর্তমানের মতো এমন হিংস্রতা আগে খুব একটা  দেখা যায়নি। গত অর্ধ যুগ ধরে কিশোর অপরাধ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এর ধরন পাল্টে গেছে। তাদের অপরাধগুলো ক্রমেই হিংস্র, নৃশংস, বিভীষিকাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। খুন, ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যার মতো হিংস্র অপরাধ করার প্রবণতা উদ্বেগজনকভাবে  বেড়ে  গেছে এবং বেড়েই চলছে। সংঘবদ্ধভাবে দিনের আলোয় নৃশংসভাবে খুন করা হচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষার লক্ষ্যে এখনই এর লাগাম  টেনে ধরা দরকার বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

অপরাধ বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. জিয়া বলেছেন, কিশোর বয়সী  ছেলেমেয়েরা প্রভাবিত হয় সহজে। তাদের নতুন করে সবকিছু বুঝতে  শেখার এই সময়টাতেই যদি ‘ক্ষমতা’ বিষয়টি তাদের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া যায়, তবে তারা সহিংসতাকেই হাতিয়ার মনে করে। তিনি আরো বলেন, বর্তমান সময়ের কিশোররা উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে পশ্চিমা সংস্কৃতিতে আকৃষ্ট হচ্ছে এবং  সেই সংস্কৃতি নিজেদের মধ্যে ধারণ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু এই জায়গায় তারা ব্যর্থ হচ্ছে।  যে সংস্কৃতি তারা গ্রহণ করতে চাচ্ছে সেটা পুরোপুরি নিতে পারছে না। অন্যদিকে যারা নিচ্ছে তারাও এটার সদ্ব্যবহার করতে পারছে না। ফলে সমাজে এর কুপ্রভাব পড়ছে এবং কিশোর অপরাধ বাড়ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads