• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
ফেসবুকে নারী প্রতারকদের অভিনব ফাঁদ

ছবি : সংগৃহীত

অপরাধ

ফেসবুকে নারী প্রতারকদের অভিনব ফাঁদ

  • এমদাদুল হক খান
  • প্রকাশিত ২২ আগস্ট ২০১৯

প্রথমে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিক্যুয়েস্ট পাঠান। এরপর দু-এক দিন চ্যাটিং। আইডি ফেক নয়, সে বিশ্বাস অর্জনের জন্য দেন ভিডিও কল। এভাবে চলে আরো কয়েক দিন। হঠাৎ একদিন বলেন, আমি খুব বিপদে পড়েছি। রাজশাহী এসে আমার টাকা-পয়সা হারিয়ে ফেলেছি। বাড়িতে ফিরতে পারছি না। আমাকে দু-এক হাজার টাকা পাঠানো যাবে। ফেসবুকে বন্ধুত্ব। কয়েক দিনের কথায় ভালোই তো মনে হয়েছে। সামান্য দুয়েক হাজার টাকা তো। বিশ্বাস করে পাঠিয়ে দেন প্রিয় বন্ধুকে। কিন্তু এতেই যে তার বন্ধুত্ব শেষ হয়ে যাবে, তা কে জানত। টাকা পাঠানোর পর থেকেই আইডি ব্লক করে দেওয়া হয়। শত চেষ্টা করেও ওই বন্ধুকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এভাবেই প্রতিদিন বিভিন্নজনকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কয়েকজন নারী প্রতারক। প্রতিদিন তাদের টার্গেট ১৫ থেকে ২০ জন। এর মধ্যে ৭-৮ জন সাড়া দিলেই তাদের টার্গেট পূরণ হয়ে যায়।

আনিয়া জান্নাত মিষ্টি নামের এক নারী নিজেকে নাট্য ও চলচ্চিত্র নির্মাতা পরিচয় দেন। ফেসবুকের  মেসেঞ্জারের মাধ্যমে তিনি একদিন এক চলচ্চিত্র নির্মাতাকে বলেন, আমি দিনাজপুর শুটিং টিম নিয়ে এসেছি। এখানে এসে আমি আমার টাকা-পয়সা হারিয়ে ফেলেছি। এখন টিম নিয়ে ঢাকা ফিরতে পারছি না। তাই কিছু টাকা দরকার। প্রথম দিনের চ্যাটিংয়েই টাকা চাওয়ায় ওই চলচ্চিত্র পরিচালক প্রথমে কিছুটা বিস্মিত হয়ে যান। পরে ভাবেন, হয়তো বিপদে পড়তেও পারেন। তাকে দশ হাজার টাকা পাঠান। এরপর থেকে ওই নারীকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না।

এ ধরনের প্রতারণার শিকার দেলোয়ার হোসেন নামে এক সংবাদকর্মী জানান, বর্ষা হোসাইন নামে এক নারী তাকে ফ্রেন্ড রিক্যুয়েস্ট পাঠান। কয়েক দিন কথাও হয় তার সঙ্গে। একদিন তিনি ফেসবুকের মেসেঞ্জারে জানান, তিনি খুবই অসুস্থ। টাকার জন্য ডাক্তারের কাছে যেতে পারছেন না। দুই হাজার টাকা ধার চান। বলেন, সপ্তাহখানেক পরে টাকা ফেরত দেবেন। এরপর ০১৭৩১-৩৭৩০২৮ বিকাশ নম্বর দেন। সেই নাম্বারে দুই হাজার টাকা পাঠান দেলোয়ার। এরপরই তাকে ব্লক করে দেওয়া হয়। পরে বিকাশের ওই নম্বরে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেন না। কখনো ফোন ধরলেও কণ্ঠ শুনেই কল কেটে দেন। পরে জানতে পারি, তিনি অনেকের সঙ্গেই এ রকম প্রতারণা করেছেন।

আবু ইউসুফ নামে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এসব নারী প্রতারকের চাহিদা থাকে খুবই কম। তবে তাদের টার্গেটটা অনেক বড়। তারা যদি প্রতিদিন বিশজনকে টার্গেট করে ১০ জনের কাছ থেকে এক হাজার টাকা করে নিতে পারে, তাহলে প্রতিদিন তাদের আয় ১০ হাজার টাকা। তার মানে মাসে তিন লাখ টাকা। সামান্য দু-এক হাজার টাকা অনেকেই কিছু না মনে করেই দিয়ে দেয়। আর এই দু-এক হাজার টাকার জন্য কেউ থানা-পুলিশে অভিযোগও দিতে চান না। কিংবা লোকলজ্জার ভয়ে কেউ কারো কাছে বিষয়টি শেয়ারও করে না। তাই তারা প্রতারণা করেও সহজে পার পেয়ে যাচ্ছে।

ডিএমপির কাউন্টার টেররিজমের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) আ ফ ম এম কিবরিয়া বাংলাদেশের খবরকে জানান, কেউ এ ধরনের প্রতারণার শিকার হলে সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি করে সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগে অভিযোগ করলে তা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। তিনি ভার্চুয়াল মিডিয়ায় কাউকে না চিনে ফ্রেন্ড হিসেবে একসেপ্ট না করার পরামর্শ দেন।  

ডিসি কিবরিয়া বলেন, অপরিচিত কেউ ফেসবুক বা ডিজিটাল মিডিয়ায় টাকা-পয়সা চাইলে তা না দেওয়াই উত্তম। কারো সম্পর্কে না জেনে টাকা-পয়সা লেনদেন না করারও পরামর্শ দেন গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads