• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯

অপরাধ

৩৪ ধরনের নির্যাতনের শিকার নারীরা

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ২৯ আগস্ট ২০১৯

নারী ও শিশুর প্রতি নির্যাতন ও সহিংসতা বন্ধে সরকার ২০১০ সালে আইন করে। আইনে নারী ও শিশুর প্রতি অপরাধ বন্ধে রাখা হয়েছে জেল ও জরিমানাসহ বিভিন্ন শাস্তি। তবে সরকারি ও বেসরকারি হিসাব বলছে, দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন কমছে না বরং নারী ও শিশু নির্যাতনের ধরন পাল্টেছে। সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে বেড়েছে পাশবিক নির্যাতনের ঘটনা।

হিসাব বলছে, বর্তমান সময়ে সারা দেশে বিভিন্ন ধরনের সহিংসতাসহ নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। এই পরিস্থিতি গণমানুষের জীবনে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নের পথে নারী ও শিশুর প্রতি বৃদ্ধি পাওয়া সহিংসতার চিত্র কোনোভাবেই কাম্য নয়। তবে এটি থামছে না।

নারী নেতারা বলছেন, দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে উন্নয়নের চালিকা শক্তি হিসেবে নারীর অবদান আজ অনেকটাই দৃশ্যমান। প্রতিটি স্তরে নারী কাজ করছে উন্নয়নের বাহক হিসেবে। তবে নারীকে এখনো সংগ্রাম করতে হচ্ছে সহিংসতা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের হিসাব বলছে, ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালের সর্বশেষ হিসাবমতে দেশে নারী নির্যাতনের ঘটনার তথ্য উঠে এসেছে ২৫ হাজার ৬৭২টি। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি। ঘরে ও বাইরে নারী নির্যাতিত হলেও অনেক ঘটনাই প্রকাশ করা হয় না সামাজিক সম্মানের কথা চিন্তা করে। নীরবে নির্যাতন সহ্য করে যেতে হয়। বেসরকারি হিসাবমতে, ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের মোট ঘটনা ঘটেছে ২৩ হাজার ১৩৯টি। আর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত নারী নির্যাতনের মোট ঘটনা ২ হাজার ৫৩৩টি।

বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৩৪ ধরনের নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে নারীর প্রতি। এর মধ্যে রয়েছে- ধর্ষণ, গণধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা, শ্লীলতাহানি, যৌন নিপীড়ন, অ্যাসিড নিক্ষেপ, অপহরণ, পাচার, আগুনে ঝলসে দেওয়া, যৌতুকের কারণে নির্যাতন, উত্ত্যক্ত, প্রেম প্রত্যাখ্যান থেকে নির্যাতন, ফতোয়া, পুলিশি নির্যাতন, জোরপূর্বক বিয়ের ঘটনা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মানুষের মধ্যে বাড়ছে অপরাধপ্রবণতা। একটি অপরাধ এখন কেবল একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে থাকছে না। ছড়িয়ে পড়ছে সমাজের অন্যত্র। ফলে একই অপরাধ একই কায়দায় সংঘটিত হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এমনকি সংবাদমাধ্যমে অপরাধের তথ্য জেনে সমাজের মানুষের মধ্যে একই ধরনের অপরাধ করার একটি খারাপ প্রবণতা বাড়ছে, যা সমাজের জন্য ভয়ংকর।

সমাজবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী ও সরকারের প্রতিনিধিরা বলছেন, একটি অপরাধ শুরু হলে সেটি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। দ্রুত সেটি সমাজের অন্যত্র ছড়িয়ে যায়। পরিস্থিতিটা এমন যে, ধর্ষণের খবর যেন ধর্ষণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। একবার কোথাও শিশু নির্যাতন শুরু হলে চারদিকে যেন বেড়ে যায় এমন পাশবিক কর্মকাণ্ড। নারী নির্যাতন কমাতে হলে আমাদের বড় আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। 

জানতে চাইলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক এ প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের মধ্যে একটি সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। মানুষের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। সমাজে সংঘটিত একটি অপরাধ দেখে আরেকজন একই অপরাধে সম্পৃক্ত হচ্ছে। ঘরে কিংবা বাইরে তারা একই অপরাধ করে যাচ্ছে। এটি নারীর ক্ষেত্রে হচ্ছে। নারীকে আমরা এখনো নিরাপদ করতে পারিনি। আমাদের অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। চেয়ারম্যান আরো বলেন, আইন প্রয়োগের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সামাজিক আন্দোলন শুরু করতে হবে নারী নির্যাতন কমাতে। পরিবার থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান- সব জায়গায় নৈতিক শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সামাজিকভাবে অপরাধীকে শক্র হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহ এহসান হাবীব বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সমাজে পরিবর্তন এসেছে। ফলে অপরাধের ধরনে পরিবর্তন এসেছে। আমরা বিশ্বায়ন থেকে দূরে নই। ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো, সংবাদমাধ্যম আমাদের সব কাছে এনে দিচ্ছে। ফলে আগে নারীকে কেন্দ্র করে যেসব ঘটনা আমরা চিন্তাও করতাম না তা এখন দেখতে হচ্ছে। নারী নির্যাতন বন্ধে আইন প্রয়োগ ও সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

গত ২০ আগস্ট উচ্চ আদালত বলছেন, দ্রুততম সময়ে অপরাধীদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে। আদালত বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ধর্ষণ, বিশেষ করে শিশু ধর্ষণ ও ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যার মতো ঘৃণ্য অপরাধ বেড়েই চলেছে। এক্ষেত্রে বিচার বিভাগও জবাবদিহির ঊর্ধ্বে নয়। একই সঙ্গে ধর্ষণসহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়েরকৃত মামলাসমূহ দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ছয় দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads