• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

অপরাধ

৫ হাজার টাকার জন্য মাকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা

  • বগুড়া প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯

বগুড়ার ধুনট উপজেলায় ঘরে হাত-পা বেঁধে পেট্রোল ছিটিয়ে আগুনে পুড়িয়ে খুকি খাতুন (৬৫) নামে এক বৃদ্ধ মাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। মাদক সেবনের টাকা না পেয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে মাদকাসক্ত ছেলে সোহানুর রহমান খোকন মন্ডল (৩২)। গত রোববার বিকালে চিকাশী ইউনিয়নের গজারিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও গ্রামবাসী জানায়, গজারিয়া গ্রামের আবদুস সামাদ মন্ডল ও খুকি খাতুনের ছোট ছেলে সোহানুর রহমান খোকন মন্ডল। সবার ছোট হওয়ায় বাবা-মায়ের প্রিয় ছিল খোকন। ছাত্রজীবনে বখে যাওয়া খোকন স্কুলের গন্ডি পেরোতে পারেনি। সে দীর্ঘদিন ধরে মাদক সেবন করত। একপর্যায়ে বখে যাওয়া খোকনকে সংসারে মনোযোগী করতে বিয়ে করানো হয়। দাম্পত্য জীবনে সে দুই সন্তানের জনক। কিন্তু জীবনকে কর্মমুখী করতে পারেনি খোকন। অন্যদিকে ব্যবসা, খামার ও বিভিন্ন কাজ শুরুর কথা বলে পরিবার থেকে দফায় দফায় টাকা নিয়ে মাদক সেবনে ব্যয় করেছে। টাকা দিতে না পারলে তার বাবা-মাকে নির্যাতন করত সে। এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করতে গিয়ে তার স্ত্রীও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ক্ষুব্ধ হয়ে স্বামীর সংসার ত্যাগ করে দুই সন্তানকে নিয়ে তিনি বাবার বাড়ি চলে যান।

প্রতিবেশীরা জানান, খোকন প্রায়ই নেশার জন্য বাবার কাছে টাকা চাইত। কিন্তু টাকা দিতে না পারলে মাকে ঘরের মধ্যে জিম্মি করে অস্ত্র দেখিয়ে বাবাকে ভয় দেখাত। বাধ্য হয়ে আবদুস সামাদ মন্ডল টাকা ম্যানেজ করে ছেলের কাছ থেকে স্ত্রী খুকি খাতুনকে উদ্ধার করতেন। গত বছর মাদক সেবনের অভিযোগে খোকন মন্ডলকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। কয়েক দিন কারাভোগের পর বাড়ি ফিরে আবারো মাদক সেবন শুরু করে। সে ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক সেবনে অভ্যস্ত। মাদকাসক্ত ছেলের হাত থেকে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন আবদুস সামাদ মন্ডল। ২০১৮ সালে কৌশলে খোকন মন্ডলকে পুলিশে ধরিয়ে দেন তিনি। কিন্তু কারাগারে সাক্ষাতের সময় স্বজনদের বিভিন্ন হুমকি ও ভয়ভীতি দেখালে আবদুস সামাদ মন্ডল বাধ্য হয়ে খোকনের জামিনের ব্যবস্থা করেন। ছেলের মাদকসেবনের ব্যয় মেটাতে তিনি প্রায় ৫ বিঘা জমি খুইয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, গত রোববার বিকাল ৪টায় ঘরের মধ্যে মাকে বন্দি করে খোকন মন্ডল। এরপর তার বাবার কাছে ৫ হাজার টাকা দাবি করে। কিন্তু তার বাবা টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে হাসুয়া (দেশীয় অস্ত্র) দেখিয়ে ভয় দেখায়। বাধ্য হয়ে সামাদ মন্ডল টাকা সংগ্রহের জন্য প্রতিবেশীদের কাছে ধরনা দেন। কিন্তু তিনি টাকা ম্যানেজ করতে পারেনি। এদিকে বাবা টাকা নিয়ে বাড়ি না ফেরায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে খোকন। নিজের মোটরসাইকেল থেকে পেট্রোল বের করে নিয়ে যায় ঘরে। ওই ঘরে মায়ের হাত-পা বেঁধে শরীরে পেট্রোল ছিটিয়ে দেয়। তারপর মায়ের শরীরে আগুন ধরিয়ে দিয়ে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। ঘরের মধ্যে আগুন জ্বলতে দেখে প্রতিবেশীরা ধাওয়া করে খোকন মন্ডলকে আটক করে। পরে তারা ওই ঘরে খুকি খাতুনকে দগ্ধ অবস্থায় দেখতে পান। এ সময় স্থানীয় লোকজন খোকন মন্ডলকে গণধোলাই দিয়ে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেন। অন্যদিকে দগ্ধ খুকি মন্ডলকে চিকিৎসার জন্য ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়ায় নেওয়ার পথে রাত ৮টায় খুকি খাতুন মারা যান।

ধুনট থানার ওসি ইসমাইল হোসেন বলেন, মাদকাসক্ত খোকন মন্ডল ঘরের মধ্যে হাত-পা বেঁধে পেট্রোল ঢেলে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় মায়ের চিৎকারের শব্দ নিয়ন্ত্রণ করতে মায়ের মুখে কাপড় গুঁজে দেয় এবং ঘরের উচ্চ শব্দে সাউন্ডবক্সে গান বাজানো হয়। গতকাল সোমবার ময়নাতদন্ত শেষে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। অভিযুক্ত ছেলে খোকন মন্ডলকে আটক করা হয়েছে। গণধোলাইয়ে আহত হওয়ায় পুলিশ হেফাজতে ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তার চিকিৎসা চলছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads