• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
অবৈধ সিএনজি ব্যবসায় কতিপয় ট্রাফিক সার্জেন্ট

ছবি : সংগৃহীত

অপরাধ

অবৈধ সিএনজি ব্যবসায় কতিপয় ট্রাফিক সার্জেন্ট

  • আজাদ হোসেন সুমন
  • প্রকাশিত ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯

রাজধানীতে চলাচলের অযোগ্য ঘোষণা করে বাতিল সিএনজিগুলো ঢাকার বাইরে পাঠানো হয়েছে। সেসব সিএনজিকে নতুন রং ও ভুয়া নম্বর প্লেট লাগিয়ে আবারো রাজধানীতে নিজের নামে চালাচ্ছে ট্রাফিক সার্জেন্টদের একটি সিন্ডিকেট।

এসব সিএনজিতে সংশ্লিষ্ট গাড়ির মালিক দাবি করা সার্জেন্টের মোবাইল নম্বরও রয়েছে। রাজধানীর চারটি স্থানে ৫০০ টাকা করে দুই হাজার টাকা দিয়ে দিনভর চলছে এসব সিএনজি। অজ্ঞাত কারণে এসব সিএনজির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। এতে সাধারণ সিএনজি ব্যবসায়ীরা চালক হারাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। পাশাপাশি তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন।

জানা গেছে, রাজধানীতে একেকজন ট্রাফিক সার্জেন্টের নামে ১০-২০টা সিএনজি অটোরিকশা চলে। এগুলোর মধ্যে একটির মালিক হয়তো তিনি। আর বাকিগুলো রাজধানীর বাইরের, চোরাই, স্ক্র্যাব করা (বাতিল) ও একই নম্বরের। আবার কখনো নিজেদের ইচ্ছেমতো নম্বর লাগিয়েও চালানো হচ্ছে এসব সিএনজি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ডিজিটাল নম্বর প্লেট নকল করে একই নম্বরের গাড়ি বিভিন্ন রুটে চালানো হচ্ছে। একই নম্বর প্লেট হওয়ায় প্রকৃত দামের প্রায় অর্ধেকেরও কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে সার্জেন্টদের কাছে। নকল নম্বর প্লেট ও অটোরিকশা তৈরিরও একটি সিন্ডিকেট রয়েছে রাজধানীতে। ঢাকা-থ নামের যেসব নম্বর প্লেট রয়েছে তা ঢাকা মহানগরে চলাচলের অনুমতি নেই। আর ঢাকা মেট্রো-থ এর নম্বরগুলো বেশি নকল করা হচ্ছে। এই নম্বরের গাড়িগুলো ২০১৮ সালে প্রতিস্থাপন করা হয়। পুরনো নম্বর ব্যবহার করেই চালানো হচ্ছে সার্জেন্টদের নামে এসব গাড়ি। রাজধানীতে চারটি রুটে চলছে এসব অটোরিকশা।

একধিক চালক জানান, সাধারণত তারা রাস্তায় অটোরিকশা বের করলে নানা অজুহাতে তাদের মামলা জরিমানা দিয়ে নাজেহাল করেন সার্জেন্টরা। একপর্যায়ে তারা অটোরিকশা চালাতে অনীহা প্রকাশ করেন। আর এ সুযোগে সার্জেন্টরাই ওই চালককে প্রস্তাব দেন তাদের গাড়ি চালাতে। এতে কোনো মামলা বা জরিমানা করবে না সার্জেন্টরা। যে কারণে বাধ্য হয়ে রাজধানীর অনেক চালক সার্জেন্টদের গাড়ি চালাচ্ছেন। যেসব রোডে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসে ওই রোডে দায়িত্বরত সার্জেন্ট আগে থেকেই তাদের নির্দিষ্ট অটোরিকশাকে রোড ব্যবহারের জন্য নিষেধ করেন।

পুরনো গাড়ি মেরামত করে সার্জেন্টদের কাছে বিক্রি করে দালাল চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। এরা হলেন, মোহাম্মদপুরের সেলিম, কাশেম, নাছিম, সাকিল, শাহীন, কালু ও কালু ফাতরা। এছাড়া মিরপুর কালশী রোডের জনি ও রেজোয়ান। মাজার রোডে রানা, হারুন ও ফরিদ। মগবাজার এলাকায় ইমরান খন্দকার ও নান্টু। যাত্রাবাড়ীর জুরাইন এলাকায় আলামিন ও শাহীন।

রাজধানীর বেশ কয়জন সার্জেন্টের নাম জানা গেছে যাদের নামে সিএনজি অটোরিকশা চলছে। তাদের প্রত্যেকের নামে ১০ থেকে ১৫টি সিএনজি অটোরিকশা চলছে। তারা হলেন-সুমন, সাদ্দাম, মোকারম, ছামছুর, মোস্তফা, আলামিন, মালেক, রেজাউল, কিশোর, জনি, মেহেদি, মাওলা, রাছেল, সুকুমার, মোমিন, আহাদ, জাহিরুল, অজুদ, সাইফুল, ওয়্যারলেস অপারেটর মালেকসহ আরো অনেকে। 

বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, ‘ঢাকা মেট্রো-দ’ নামের যেসব নম্বর প্লেট ব্যবহার করে প্রাইভেট হিসেবে রাস্তায় চলছে এগুলোর মধ্যে ১১-০২১০, ১১-০১৫০, ১১-০২৩৯, ১১-০১৮৬, ১১-০১১২, ১১-০৪০১, ১১-০৪০২ থেকে ৬ পর্যন্ত সিরিয়ালের কোনো অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন নেই। এরপরও সার্জেন্টদের নামে চালানো হচ্ছে।

এ বিষয়ে ধানমন্ডি ট্রাফিক জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মো. আকরাম হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সিএনজি অটোরিকশা চালকরা মামলা থেকে বাঁচতে এভাবে সার্জেন্টদের নাম ব্যবহার করে। বিশেষ করে প্রাইভেট হিসেবে চলমান গাড়িগুলোই বেশি। একজনের নামে একাধিক অটোরিকশা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। যদি সুনির্দিষ্ট কারো নামে এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অবশ্য নগর ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মীর রেজাউল বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে খতিয়ে দেখে অভিযোগের সত্যতা পেলে অবশ্যই অভিযুক্ত সার্জেন্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads