কুমিল্লায় শতাধিক গ্রাহকের আনুমানিক ৪০ কোটি টাকা নিয়ে নিয়ে গোল্ড ডায়মন্ড প্রপার্টিজ কোম্পানি নামের একটি ডেভেলপার কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক দুই ভাই উধাও হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে কুমিল্লা নগরীতে গ্রাহকদের মাঝে হাহাকার শুরু হয়েছে। গ্রাহকদের মাঝে রয়েছে রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক, সাংবাদিক ও ব্যবসায়ী। অনেকে সারা জীবনের সঞ্চয় এবং ব্যাংক ঋণ করে টাকা দিয়েছেন। গত শুক্রবার রাত থেকে গোল্ড ডায়মন্ড প্রপার্টিজ কোম্পানির চেয়ারম্যান পিন্টু সাহা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্টু সাহা পরিবারসহ নিরুদ্দেশ হয়ে গেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর তাল পুকুর পাড়ে তিনটি, নওয়াব ফয়জুন্নেছা স্কুলের পাশে একটি, বাগিচাগাঁয়ে একটি, পুরাতন চৌধুরী পাড়ায় একটি, মিশনারী স্কুলের পাশে একটিসহ তাদের ১০/১২টি নির্মাণাধীন প্রকল্প রয়েছে।

নগরীর ছাব্বি অ্যান্ড রিজভী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মো.সুলতান সফিউল্লাহ রিজভী বলেন, গোল্ড ডায়মন্ড প্রপার্টিজ কোম্পানির চেয়ারম্যান ও এমডি দেশ ছেড়ে ভারত চলে গেছে বলে তিনি জেনেছেন। মিশনারী স্কুলের পাশের নির্মাণাধীন নাজমা পার্ক হেভেনে ফ্ল্যাট দেওয়ার কথা বলে তার থেকে ৩২ লাখ ৭০ হাজার টাকা নিয়েছে। ভবনের কাজ শেষ হয়নি।  তিনি তার টাকা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। এ নিয়ে জমির মালিকের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করবেন। নতুবা আইনের আশ্রয় নিবেন।

তিনি বলেন,তারা এক ফ্ল্যাট তিনবারও বিক্রি করেছে। কোথাও ফ্ল্যাটের দাম ৫০লাখ হলেও তারা ১০লাখ করে ১০জন থেকে নিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিলো টাকা হাতিয়ে নেয়া।

নাজমা পার্ক হেভেনের জমির মালিক ওমর জামান বলেন,তারা উধাও হয়ে গেছে কি না তিনি নিশ্চিত নন। আরও কয়েকদিন পর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। চুক্তি ছিল তাকে ৪০ ভাগ দিয়ে বাকী ৬০ভাগ তারা নেবে। তারা কাজে সময় নিচ্ছিল। তিনি দেড় কোটি দামের বাড়ি ভেঙ্গে ভাড়া বাসায় আছেন। আর  গ্রাহকদের বিষয়ে বলেন,গ্রাহকদের সাথে তার কোনো চুক্তি হয়নি। এই বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারবেন না।

কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত বলেন, রাণীর দিঘির পাড়ের একটি ভবনে ফ্ল্যাট দেওয়ার কথা বলে তার থেকে ৪২লাখ টাকা নিয়েছে। এছাড়া ফয়জুন্নেছা স্কুলের পাশের একটি ভবনে ফ্ল্যাট দেবে বলে তাদের পরিচিতজনদের থেকে টাকা নিয়েছে। গোল্ড ডায়মন্ড প্রপার্টিজ কোম্পানির মালিক পক্ষ উধাও হয়ে গেছে বলে তিনি শুনেছেন। বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার অবগত হয়েছেন। এখন তিনি দেশের বাইরে আছেন। এমপি সাহেব দেশে আসলে মালিক পক্ষের সাথে বসে বিষয়টি সুরাহা করবেন বলেও তিনি জানান।

বিএনপি নেতা জাফর ইকবাল জানান, নাজমা পার্ক হেভেনে ফ্ল্যাট দেওয়ার কথা বলে তার ভাগিনা থেকে ২০লাখ টাকা দিয়েছে। তিনি এই বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চান।

 নগরীর রানীর বাজারে গোল্ড ডায়মন্ড প্রপার্টিজ কোম্পানির অফিসের সামনে গিয়ে তালা মারা দেখা যায়। একই এলাকায় তাদের পৈত্রিক বহুতল ভবন রয়েছে। সেখানে দুই ভাইয়ের বাসায় তালা। তারা কখন কোথায় গেছে কেউ বলতে পারে না।  তাদের মেজো ভাই পিয়াস সাহা বলেন, তারা দুইজন শনিবার থেকে স্ত্রী সন্তানসহ বাসায় নেই। কোথায় গেছে জানেন না। তাদের ফোনও বন্ধ। মানুষ তাদের টাকার জন্য তার নিকট আসছে। তিনি তাদের ব্যবসার বিষয়ে কিছু জানেন না। বাড়িটিও তারা ইউসিবিএল ব্যাংকে বন্ধক রেখেছে বলে তিনি জানান।

 কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, গোল্ড ডায়মন্ড প্রপার্টিজ কোম্পানির নিকট একটি পক্ষ টাকা পেত, তিনি দরবার করে ২৬লাখ টাকার মধ্যে ১৪লাখ টাকা উদ্ধার করেছিলেন। এখন শুনেছেন তারা দেশ ছেড়ে চলে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থরা যোগাযোগ করলে তিনি মালিক পক্ষের সাথে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করবেন বলে জানান।

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো.আবুল ফজল মীর বলেন,বিষয়টি এখনও তার নলেজে আসেনি। ক্ষতিগ্রস্থরা যোগাযোগ করলে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।