• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

অপরাধ

ক্যাসিনোতে উড়ত কোটি কোটি টাকা

ভাগ পেতেন বিদেশে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী

  • এমদাদুল হক খান
  • প্রকাশিত ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

রাজধানীর ক্যাসিনোগুলোতে উড়ত কোটি কোটি টাকা। এসব ক্যাসিনোয় গিয়ে অনেকেই হয়েছেন সর্বস্বান্ত। অবৈধ এসব ক্যাসিনো চলেছে প্রভাবশালীদের পৃষ্ঠপোষকতায়। ছড়িয়ে পড়েছে ঢাকার বাইরের শহরগুলোতেও। তবে সরকারের হঠাৎ কঠোর পদক্ষেপে থমথমে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বন্ধ থাকছে প্রায় সব ক্যাসিনো।

রাজধানীতে যতগুলো আধুনিক বৈদ্যুতিক ক্যাসিনো জুয়ার বোর্ড আছে, সেগুলো অপারেট করতে চীন ও নেপাল থেকে আনা হয় অভিজ্ঞ লোক। তারাই এই বোর্ড নিয়ন্ত্রণ করত। বিনিময়ে প্রতি মাসে বেতন পেত তারা। দীর্ঘদিন ধরে চলা এসব ক্যাসিনোতে প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেই লোকজনের সমাগম ঘটত। জুয়ার পাশাপাশি এখানে চলত মাদকের রমরমা ব্যবসা। গত বুধবার যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর এ রকম চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে।

সম্প্রতি যুবলীগ নেতাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করার পরই নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বুধবার বিকাল থেকে ভোর রাত পর্যন্ত রাজধানীর একাধিক ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র্যাব। এ সময় গ্রেপ্তার করা হয় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়াসহ দুই শতাধিক নারী-পুরুষকে। র্যাবের এই অভিযানের পরই দেশজুড়ে আলোচনায় চলে আসে ক্যাসিনো ব্যবসা। অভিযানের খবরে কোনো কোনো ক্যাসিনো আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়। যারা নিয়মিত ক্যাসিনোতে যেতেন তারাও ভয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। আতঙ্ক শুরু হয়েছে যারা নিয়মিত মাসোহারা পেতেন তাদের মধ্যে। গ্রেপ্তার আতঙ্কে আত্মগোপনে গেছেন কোনো কোনো যুবলীগ নেতা। গতকাল বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন, অবৈধ ক্যাসিনোতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এই অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রাজনীতিবিদ হোক আর প্রশাসনের কেউ হোক, কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। 

তিনি বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নিশ্চিত হয়ে ক্যাসিনোতে গতকাল অভিযান চালানো হয়েছে। আরো কারা কারা এই ক্যাসিনোতে জড়িত, তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।

ডিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেছেন, রাজধানীতে অবৈধ জুয়ার আড্ডা বা কোনো ধরনের ক্যাসিনো পরিচালনা করতে দেওয়া হবে না। এসবের নেপথ্যে যত প্রভাবশালীই জড়িত থাকুক না কেন, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশ কঠোর হবে। র্যাব অভিযান শুরু করেছে, পুলিশও অভিযান শুরু করবে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। এরই মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার জুয়ার বোর্ড ও ক্যাসিনোর তালিকা করা শুরু হয়েছে বলেও জানান ডিএমপি কমিশনার।

তিনি বলেন, আমি এ সপ্তাহেই কমিশনার হিসেবে কাজ শুরু করেছি। যারা এই বিষয় দেখেন তাদের নির্দেশ দিয়েছি— কোথায় কী হচ্ছে, কারা পরিচালনা করছে তার তালিকা করে জানাতে বলেছি। তারা কাজ করছেন। ইতোমধ্যে একটি জোনের তালিকা আমি পেয়েছি। অন্য জোনের তালিকাও করা হচ্ছে। র্যাব যেমন অভিযান শুরু করেছে, তেমনি পুলিশের ভূমিকাও একই রকম। স্পষ্ট করে বলছি, রাজধানীর কোথাও জুয়ার বোর্ড কিংবা ক্যাসিনো চলতে দেওয়া হবে না।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ক্যাসিনোতে যারা জুয়া খেলতে আসেন তারাই মাদক সেবন করছেন। ক্যাসিনো যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে সেখানে মাদক সেবনও বন্ধ হবে। ক্যাসিনো বন্ধ করেও যদি কেউ মাদকের কারবার চালানোর চেষ্টা করে, তবে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কমিশনার বলেন, নির্মল বিনোদন হলে পুলিশ সহযোগিতা করবে। কিন্তু সেখানে বিনোদনের নামে যদি অশালীন ও অবৈধ কিছু চলে, মাদক সেবন হয়, তাহলে সেখানেও একই রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। নজরদারিতে থাকবে।

এতদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কেন, জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে আমরা কঠোর। সেটা যে পর্যায়েই হোক না কেন। জোনাল ডিসিদের নির্দেশনা দিয়েছি এ ধরনের ঘটনা মোটেই সহ্য করব না। এরপরও যদি কেউ জুয়ার বোর্ড কিংবা ক্যাসিনো পরিচালনা করে বা জড়িত থাকে বলে জানতে পারি, তাহলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশে ক্যাসিনো কালচার শুরু করেছিলেন সাদেক হোসেন খোকা এবং মির্জা আব্বাস। ’৯১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ব্রাদার্স ইউনিয়নে ক্যাসিনো কালচার শুরু হয়েছিল। ব্রাদার্স ইউনিয়নের এই জুয়ার আসরে বিএনপির অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিও যেতেন। ব্রাদার্স ইউনিয়নের ক্যাসিনোর মাধ্যমেই সাদেক হোসেন খোকার উত্থান। সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য সে সময় মির্জা আব্বাসও মতিঝিলের ক্লাবগুলো দখল করেন। তখন আরামবাগ ক্লাব ও ওয়ান্ডারার্স ক্লাবেও ক্যাসিনো শুরু করা হয় মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে। মির্জা আব্বাস আর সাদেক হোসেন খোকার পদাঙ্ক অনুসরণ করে মোসাদ্দেক আলী ফালু মোহামেডান ক্লাবেও ক্যাসিনো শুরু করেছিলেন। তবে সেখানে ভিন্নরূপে শুরু করা হয়েছিল হাউজি ব্যবসা। ৯১-৯৬ সালে বিএনপির আমলে একমাত্র আবাহনী ছাড়া অন্য সবগুলো ক্লাবেই জুয়া-ক্যাসিনোর বাজার বসানো হয়েছিল। বিএনপির প্রভাবশালী তিন নেতার তত্ত্বাবধানেই এগুলো চলছিল। এরা হলেন— সাদেক হোসেন খোকা, মির্জা আব্বাস এবং মোসাদ্দেক আলী ফালু। বিএনপি চলে যাওয়ার পর ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও এই ক্লাবগুলোর নিয়ন্ত্রণ ছিল বিএনপির হাতেই। তখনো পুলিশের নাকের ডগায় বসেই এই ক্যাসিনোগুলো চলেছে। সাদেক হোসেন খোকা তখন এমপি থাকার কারণে কেউ তাকে স্পর্শ করেনি। মির্জা আব্বাসের ক্যাসিনোও চলেছে ঠিকঠাক মতোই। আর মোসাদ্দেক আলী ফালু তখন অনেক প্রভাবশালী হওয়ার কারণে মোহামেডানে হাউজি এবং জুয়ার আসরের পরিধি বেড়েছিল বহুগুণে। মোহামেডান ছাড়াও মোসাদ্দেক আলী ফালু তখন রহমতগঞ্জ ক্লাবও দখল করে নিয়েছিলেন। সেখানেও দেদার চলে ক্যাসিনো ব্যবসা।

২০০৬-এ বিএনপির পতনের পর ওয়ান-ইলেভেন সরকার এলে এই ক্যাসিনো বাণিজ্য লন্ডভন্ড হয়ে যায়। সব ক্লাবেই তখন জুয়ার আসর বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রথম দুই বছর কোনো ক্যাসিনো ছিল না। এরপর আস্তে আস্তে ধাপে ধাপে ক্যাসিনোগুলো আবার চালু করা হয়।

একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, প্রত্যেকটি ক্যাসিনোর সঙ্গে স্থানীয় থানা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যোগসাজশ আছে। তাদের সাথে আঁতাতের মাধ্যমেই এই ক্যাসিনোগুলো পরিচালিত হয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে ক্যাসিনোর কথিত মালিকদের সুসম্পর্কের কথা সবাই জানত। এজন্যই ক্যাসিনো নিয়ে কেউই মুখ খুলত না।

থানার পাশে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ব্যবসা চালিয়ে আসছিল মতিঝিলের ইয়াংমেন্স ক্লাব। অভিযোগ রয়েছে, এসব কাজে সহযোগিতা করত খোদ পুলিশ।

মতিঝিলের ইয়াংমেন্স ক্লাব, যেখান থেকে মতিঝিল থানার দূরত্ব মাত্র ৩০০-৪০০ গজ। বুধবার এ ইয়াংমেন্স ক্লাবে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য ও টাকাসহ ১৪২ জনকে আটক করা হয়। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এ ক্লাবটি গত ৪ থেকে ৫ বছর প্রশাসনের নাকের ডগায় অবৈধভাবে ক্যাসিনো ব্যবসা চালিয়ে আসছিল। অলৌকিক কারণে এর আগে কখনো অভিযান চালায়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

স্থানীয়দের অভিযোগ, স্থানীয় থানা পুলিশ টাকার বিনিময়ে ক্লাবের কর্মকর্তাদের ক্লাব পরিচালনায় সহযোগিতা করে আসছে। এমনকি অভিযান হতে পারে এমন তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করে কয়েক ঘণ্টা ক্লাবের কার্যক্রম বন্ধও রেখেছিলেন তারা। একজন বলেন, থানার পাশেই এত বড় ক্যাসিনো, পুলিশের তো জানারই কথা।

প্রশাসনের নাকের ডগায় ক্লাব এবং সামাজিক সংগঠনের আড়ালে কীভাবে আইনবহির্ভূত এসব কাজ চলছিল? এমন প্রশ্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে।

র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, আমরা ক্যাসিনোতে চীন ও নেপালি নাগরিকদের পেয়েছি। এখানে তারা চাকরি করেন বলে জানিয়েছে। তবে সত্যি তাদের ওয়ার্ক পারমিট আছে কি না, তা আমরা খতিয়ে দেখছি।

এর আগে, বুধবার বেলা ৩টার দিকে প্রথমেই মতিঝিল থানার পেছনে ফকিরাপুল এলাকার ইয়ংমেন্স ক্লাবে অভিযান চালায় র্যাব। সে সময় কয়েকজন চীনা ও নেপালি নাগরিককে সেখানে পাওয়া যায়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে তাদের তথ্য রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে নেপালের দুজনার নাম হলো ভুপেস ও সঞ্জয়। তারা ক্যাসিনোতে কাজ করেন।

অভিযানে র্যাবের হাতে মেঘা ও লিজা নামের দুই তরুণী আটক হলেও তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ক্যাসিনোতে তারা ‘ডিলার’ পদে চাকরি করেন বলে জানিয়েছেন। লিজা বলেন, ক্যাসিনোতে দুই শিফটে জুয়া খেলা হয়। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা এবং রাত ৮টা থেকে সকাল ৮টা। জুয়ার বোর্ডগুলো চীনা নাগরিকরা চালু করে। নেপালিরা বোর্ড পরিচালনা করে। তারা এগুলো অপারেট করতে দক্ষ।

লিজা আরো বলেন, আমরা মাসিক ও দিন হিসেবে এখানে চাকরি করি। আমরা কখনো রিসেপশনে, কখনো বোর্ডে দায়িত্ব পালন করি।

মেঘা বলেন, প্রতি শিফটে ৭০-৮০ জন মানুষ খেলে। কখনো বেশিও আসে। তবে রাতের বেলায় বেশি মানুষ থাকে। সেখানে অনেকে মাদক সেবন করে বলেও তারা জানিয়েছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিন মতিঝিলের ক্লাবপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, বুধবার যে তিনটি (ইয়ংমেন্স ফকিরেরপুল, ওয়ান্ডারার্স ও দিলকুশা) ক্যাসিনোতে অভিযান পরিচালিত হয়েছিল, সেগুলোর আশপাশে উৎসকু জনতার ভিড়। তাদের বেশিরভাগই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্যাসিনো দেখতে চলে এসেছেন।

স্থানীয় দোকানদার ও এলাকাবাসীর কাছে অনেকেই নাম, ঠিকানা ও ক্যাসিনো কীভাবে চলে, তারা দেখেছেন কি না ইত্যাদি নানা প্রশ্ন করেন।

তাদের একজন শামসু মিয়া। মিরপুরের পল্লবী থেকে সকালে বাসে চেপে মতিঝিলে ছুটে এসেছেন। তিনি জানান, এককালে হাউজির নেশা ছিল। গত রাতে টিভিতে ক্যাসিনো শুনে দেখতে এলাম, এ জুয়া কীভাবে খেলে। কিন্তু র্যাব কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না।

অভিযানে এ তিনটি ক্লাব বন্ধ হলেও অভিযানের ভয়ে এমনিতেই বন্ধ করে রাখা হয়েছে মোহামেডান, আরামবাগ ও ভিক্টোরিয়া ক্লাব। মতিঝিলের তিনটি ক্লাবের একটিতে (দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব) বুধবার রাতেই সিলগালা করা হয়। বাকি দুটোতে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সিলগালা লাগানোর প্রস্তুতি চলতে দেখা যায়।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, তারা এখনো বিশ্বাসই করতে পারছেন না যে, ক্ষমতাসীন দলের দোর্দণ্ড প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের মালিকানায় পরিচালিত ক্যাসিনোতে এমন অভিযান চলতে পারে।

তারা বলেন, হাউজি, ক্যাসিনো ও মাদকের কবলে পড়ে এ এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকার যুবকরা নষ্ট হয়ে গেছে। অনেকেই অজানা আশঙ্কায় সন্তানদের দেশের বাইরে পাঠাতে বাধ্য হয়েছেন। তবে ক্লাবপাড়ার এ ক্যাসিনোতে কয়দিন সিলগালা থাকবে, তা নিয়ে তারা সন্দিহান বলে জানান।

মতিঝিল ছাড়াও গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদ ক্লাবটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। গতকাল সকালে ক্লাবটিতে গিয়ে দেখা যায়, দরজায় তালা মারা। ক্লাবটিতে ১৫ জন আনসার সদস্য ডিউটি করেন। তাদের থাকার জন্য জায়গাটুকু ব্যতীত ক্লাবের ক্যাসিনো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে মতিঝিলের ক্লাবপাড়ার মতো মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদের সামনে উৎসুক জনতার ভিড় চোখে পড়েনি।

কোটি কোটি টাকার ক্যাসিনো সেটাপ, নারী-পুরুষ এনে সেগুলো পরিচালনা করাসহ নানা অবৈধ কাজ চলত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার ইয়ংমেন্স ক্লাবে। এত বড় আয়োজনের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ জানত না? জানলেও তারা চুপ ছিল কেন? আটকের পর র‍্যাব-৩ কার্যালয়ে নিয়ে খালেদ মাহমুদকে এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে র‍্যাব। ক্যাসিনো থেকে উপার্জনের টাকা কার কার কাছে যেত, সে নিয়েও প্রশ্ন করা হয় তাকে।

এর আগে বুধবার রাতে অবৈধ অস্ত্র, মাদক ও ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়াকে অস্ত্রসহ আটক করে র‍্যাব। আটকের পর তাকে র‍্যাব-৩-এর কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, রাতভর জিজ্ঞাসাবাদে মতিঝিলের ক্যাসিনো পরিচালনার বিষয়টি মতিঝিল থানা পুলিশ, মতিঝিল জোন, পুলিশ সদর দপ্তর ও ডিএমপি সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা জানতেন বলে দাবি করেন খালেদ। তবে পুলিশের সঙ্গে ক্যাসিনো পরিচালনার জন্য কোনো আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে কিছু বলেননি তিনি।

সূত্র জানায়, খালেদের ক্যাসিনোর বিষয়ে পুলিশ ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সংস্থা এবং রাজনীতিক, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জানতেন। তাদের ‘ম্যানেজ করে’ ক্যাসিনো চালাতেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন তিনি।

জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে র‍্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, তাকে আমরা সংক্ষিপ্ত সময়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। তবে তদন্তের স্বার্থে সেগুলো এখনই প্রকাশ করা যাবে না। বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম পাওয়া গেছে। ঢাকায় অবৈধভাবে কোনো ক্যাসিনো থাকতে দেবে না র‍্যাব।

জানা গেছে, বছরের পর বছর ধরে ক্লাবগুলোতে নিপুণ, চড়চড়ি, ডায়েস, ওয়ান-টেন, ওয়ান-এইট, তিন তাস, নয় তাস, রেমি, ফ্ল্যাশসহ বিভিন্ন ধরনের তাস খেলা বা কথিত ‘ইনডোর গেমস’-এর নামে জুয়া খেলা চলছে। ঢাকা এবং ঢাকার বাইরের ক্লাবগুলোর নাম সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে একাধিক সংবাদপত্রে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। ঢাকার ক্লাবগুলোর মধ্যে যাদের নাম সে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল সেগুলো হচ্ছে- ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাব, ক্লাব প্যাভিলিয়ন ফকিরাপুল, আরামবাগ ক্লাব, দিলকুশা ক্লাব, ডিটিএস ক্লাব, আজাদ বয়েজ ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব, বিজি প্রেস স্পোর্টস অ্যান্ড রিক্রিয়েশন ক্লাব, ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব, ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন সোসাইটি ক্রীড়াচক্র বিমানবন্দর কমান্ড।

রাজধানীর বাইরের ক্লাবগুলোর মধ্যে ছিল— বগুড়ার রহমান নগর ক্রিকেট ক্লাব, চাঁদপুরের মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, ভাই ভাই স্পোর্টিং ক্লাব, ফ্রিডম ফাইটার (৫ নম্বর গুপ্তি ইউনিয়ন পরিষদ), নোয়াখালীর শহীদ শাহ আলম স্মৃতি সংসদ হলরুম, সোনাইমুড়ী, নারায়ণগঞ্জের সানারপাড় বর্ণালী সংসদ, বরিশালের সেতুবন্ধন ক্লাব ও লাইব্রেরি, চট্টগ্রামের মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads