• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
রাজনৈতিক আশ্রয় এবং পুলিশের সহযোগিতা

প্রতীকী ছবি

অপরাধ

কক্সবাজারে ৭ স্থানে জুয়া

রাজনৈতিক আশ্রয় এবং পুলিশের সহযোগিতা

  • মাহাবুবুর রহমান, কক্সবাজার
  • প্রকাশিত ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

কক্সবাজার শহরেও রমরমা চলে জুয়ার আসর। শহরজুড়ে প্রতিরাতে জুয়া উৎসব চললেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি; বরং এতদিন পুলিশের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে সেসব অপকর্ম চলত বলে জানা গেছে। এ সুযোগে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে জুয়ার বোর্ডের মালিকরা। তবে সংশ্লিষ্টদের দাবি, রাজনৈতিক আশ্রয়ে ও পুলিশের সহযোগিতায় দীর্ঘদিন ধরে এসব চলছে। এখন অনেকে বেঈমানি করছে। অন্যদিকে সরকারিদলের ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে এক শ্রেণির ব্যক্তি শহরজুড়ে পতিতালয় গড়ে তুলেছে। এর ফলে দিন দিন বিপথগামী হচ্ছে তরুণ-তরুণীরা। অভিযোগ আছে, এসব পতিতালয় থেকে একটি মহল নিয়মিত মাসোহারা আদায় করে।

গত ২২ সেপ্টেম্বর রাতে শহরের ঝাউতলা এলাকার হোটেল সি-কুইনে অভিযান চালিয়ে একটি জুয়ার আসর সিলগালা করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক ক্লাবের নাম দিয়ে জুয়ার বোর্ডটি চালাতেন কয়েকজন প্রভাবশালী। এর মধ্যে কক্সবাজারে যুবলীগের শীর্ষ পদবিধারীর নামই বেশি আলোচনায় উঠে আসছে। আর হোটেল সি-কুইনের মালিক জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা কবির আহমেদ।

সূত্রমতে, জুয়ার আসর এবং পতিতালয় নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড কিছু প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় পরিচালিত হওয়ায় সাধারণ মানুষ এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করারও সাহস পাচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরের লালদীঘির পাড়ের জিয়া কমপ্লেক্সের ৪র্থ তলায় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব নাম দিয়ে চলছে রমরমা জুয়ার আসর। নামে ক্রীড়া সংগঠন হলেও বাস্তবে খেলাধুলায় কোনো অংশগ্রহণ নেই প্রতিষ্ঠানটির। রাতদিন চলে শুধু জুয়া আর মাদকের আসর। এই ক্লাবটি পরিচালনা করেন কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা।

জিয়া কমপ্লেক্সের পূর্ব পাশে ফলের দোকানের পেছনে জাহাঙ্গীর নামে এক ব্যক্তি পরিচালনা করছে আরো একটি জুয়ার আসর। ওই জাহাঙ্গীর দীর্ঘদিন ধরে সাতকানিয়া বোর্ডিংয়ে এ আসরটি পরিচালনা করে এলেও সম্প্রতি সেখান থেকে জুয়ার আসর সরিয়ে এনেছে ফলের দোকানের পেছনে। ক্লাবের নাম দিয়ে হোটেল সি-কুইনের তৃতীয় তলায় একটি জুয়ার আসর নির্বিঘ্নে চলে এলেও তা গত ২২ সেপ্টেম্বর রাতেই গুঁড়িয়ে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হলিডের মোড়ে হোটেল এলি পার্কে চলছে জুয়ার আসর। বাস টার্মিনাল ও খুরুস্কুল মণ্ডলপাড়াতেও নির্বিঘ্নে চলছে আরো দুটি জুয়ার আসর। তবে এসব জুয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দাবি সবকিছু জানে পুলিশ; তারা নিয়মিত চাঁদাও নিত। এখন বেঈমানি করছে।

জমজমাট চলে হোটেল-মোটেল জোনে অবস্থিত দুটি ভ্রাম্যমাণ জুয়ার বোর্ড। এখানে সবচেয়ে বেশি ভিআইপিদের আনাগোনা থাকে। জুয়ার পাশাপাশি মাদকের আসরও বসে সেখানে। জানা গেছে, প্রতিটি জুয়ার আসর চলে পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে। মাসোহারা নিয়ে পুলিশ দেখেও না দেখার ভান করে থাকায় নির্ভয়ে চলে বোর্ডগুলো। তবে সম্প্রতি সরকার এসব বিষয়ে হার্ডলাইনে থাকায় অনেক জুয়ার বোর্ডের মালিক গা ঢাকা দিয়েছে।

শহরের লালদীঘির পাড়ের এক ব্যক্তি জানান, অধিকাংশ জুয়ার আসর শহরের প্রাণকেন্দ্রে হওয়ায় সাধারণ মানুষ বিব্রত হচ্ছেন। ২৪ ঘণ্টা চলে এসব জুয়ার আসর। ঘরের মালিক বাড়তি ভাড়ায় জুয়া খেলা চালানোর জন্য এসব ঘর ভাড়া দিয়ে থাকেন। যারা জুয়ার আসর চালাতে ঘর ভাড়া দেয় তাদের আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। এছাড়া এসব জুয়ার আসরের নেপথ্যে কারা তাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এদিকে জুয়ার আসর ছাড়াও হোটেল মোটেল জোনে ৮টি ও শহরে ৭টি মিনি পতিতালয় এলাকার পুরো পরিবেশ নষ্ট করছে। সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এলাকার একজন ব্যবসায়ী জানান, আমরা পতিতালয়গুলো নিয়ে অনেক সমস্যায় আছি।

হোটেল-মোটেল জোনের ৭টি মিনি পতিতালয়ের মধ্যে রয়েছে ঢাকার বাড়ি ও নিউ ঢাকার বাড়ি। এর মধ্যে একটি পরিচালনা করছে ঈদগাঁও এলাকার আবদুল জব্বার, আরেকটি পরিচালনা করছে একই এলাকার আসিফ। সবুজ হোটেল নতুন ও পুরাতন- এই দুটি হোটেল পরিচালনা করছেন স্থানীয় একজন প্রভাবশালী। তিনি শ্রমিক নেতা হিসেবে পরিচিত। এছাড়া হোটেল বেঙ্গলে চলছে অবৈধ কর্মকাণ্ড। এই হোটেলের সরওয়ার ইয়াবাসহ আটক হয়ে জেল হাজতে থাকলেও তার ছেলে জনি এই হোটেলটি পরিচালনা করছে। শহরের ঝাউতলায় দুটি ও লালদীঘির পাড়ে ৫টি হোটেল মিনি পতিতালয় হিসেবে চিহ্নিত। এসব হোটেলে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে আনা হচ্ছে রোহিঙ্গা যুবতীদের।

কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের নেতা নাজিম উদ্দিন জানান, এসব কর্মকাণ্ডের ফল কক্সবাজারের লোকজনকে এক সময় ভোগ করতে হবে। প্রশাসনকে কঠোর নজরদারির মাধ্যমে জুয়ার আসর ও পতিতালয় স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে। এসব কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের নাম প্রকাশ করা প্রয়োজন। সমাজের সবস্তরের মানুষ জানুক কারা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত।

কক্সবাজার পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন জানান, কোনো অপরাধী ছাড় পাবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে আছে। এছাড়া সমাজবিরোধী সব কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads