• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
খাল দখল করে ইমারত নির্মাণ করেছেন প্রভাবশালীরা

ছবি: বাংলাদেশের খবর

অপরাধ

খাল দখল করে ইমারত নির্মাণ করেছেন প্রভাবশালীরা

  • আবুল হোসেন সরদার, শরীয়তপুর
  • প্রকাশিত ১৬ অক্টোবর ২০১৯

শরীয়তপুর শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালগুলো দখল করে বড় বড় ইমারত নির্মাণ করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। ফলে শহরের পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে সেখানকার সাধারণ মানুষ। এসব খাল উদ্ধারে কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই।

পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, খালগুলো পৌরসভার নয়। তবে উদ্ধারে প্রশাসনকে সহায়তা দেবে। জেলা পরিষদ বলছে, অচিরেই উচ্ছেদ অভিযান শুরু করবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, শহরের ভেতরের খালগুলো উদ্ধারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া গেলে আগামীতে উদ্ধারের কাজ চলবে।

পৌর এলাকার নাগরিক কামাল হোসেন সরদার ও শাহরিয়ার আলম জানান, শরীয়তপুর জেলা শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রধান খালগুলো স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা দখল করে নিয়ে বড় বড় ইমারত নির্মাণ করে বসবাস করছেন। খাল ভরাট করে খালের ওপর দোকানপাট নির্মাণ করে হরদম ব্যবসা বাণিজ্য করে যাচ্ছে। বিশেষ করে শরীয়তপুর শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ডাকবাংলো থেকে পৌর বাসস্ট্যান্ড হয়ে কীর্তিনাশা নদী পর্যন্ত খাল, পালং থানার পেছনে রাজগঞ্জ ব্রিজ থেকে কীর্তিনাশা নদী পর্যন্ত খাল, কোর্ট চত্বর থেকে মনোহর বাজার হয়ে কীর্তিনাশা নদী পর্যন্ত খাল, ডাকবাংলো থেকে পাকার মাথা পর্যন্ত পুরো খাল দখল করে পাকা-আধাপাকা ইমারত নির্মাণ করে সরকারের প্রায় শত কোটি টাকার জমি অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছে সরকারদলীয় ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তিরা। তাদের ভয়ে কেউ কোনো প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। এসব খাল ভরাট করে পাঁচতলা থেকে ছয়তলা পাকা ইমারত নির্মাণ করে বিভিন্ন প্লাজাসহ নানা নামে তারা স্থায়ীভাবে সুপার মার্কেট, বিপণিবিতান, বাড়িঘর ও দোকানপাট করে নিজে অথবা ভাড়াটিয়া দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। কেউ কেউ মার্কেট বানিয়ে ভাড়া দিয়ে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিচ্ছেন। এসব প্রভাবশালীর খাল দখলের কারণে শহরের পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। সামান্য বৃষ্টি হলেই শহরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে হাঁটুপানিতে তলিয়ে যায় আবাসিক এলাকাগুলো।

পৌর এলাকার নাগরিক আবদুল কুদ্দুছ মোড়ল বলেন, প্রভাবশালীরা খাল দখল করার কারণে শরীয়তপুর পৌরবাসী বারো মাসই পানিতে ডুবে থাকে। জরুরি ভিত্তিতে খালগুলো উদ্ধার করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা দরকার। বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আলী আজম মাদবর বলেন, শরীয়তপুর শহরের প্রধান খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় শহরের পানি সরে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। শহরে মধ্যে বারো মাস পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও পালং বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম বেপারী বলেন, প্রভাবশালীরা খাল ভরাট করে ইমারত নির্মাণ করেছে। এতে বাজারের মালপত্র পরিবহন করা কষ্ট হচ্ছে। আর আমরা যে দোকানপাট করেছি, সেটা আমাদের রেকর্ডীয়  মালিকানার জমি। এটা সরকারি খাল নয়।

শরীয়তপুর সুশীলসমাজের প্রতিনিধি সাবেক পৌর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ কোতোয়াল বলেন, শরীয়তপুর পৌর এলাকার প্রবহমান খালগুলো ভরাট করে একশ্রেণির প্রভাবশালীরা দখল করে নিয়েছে। সেখানে বড় বড় ইমারত নির্মাণ করেছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য কোনো ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে শহরের হাঁটুপানিতে তলিয়ে যায়। পৌর এলাকার ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাচ্চু বেপারী বলেন, বেশির ভাগ খাল অবৈধ দখল হয়ে গেছে। এ খাল দিয়ে একসময় নৌযান চলাচল করত। বাজারের মালপত্র পরিবহন করা হতো। খালগুলো সরকারি হয়ে থাকলে কাগজপত্র দেখে অবৈধ  উচ্ছেদ করা জরুরি। শরীয়তপুর পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম কোতোয়াল বলেন, খালগুলো পৌরসভার নয়। এ খাল ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত ও জেলা পরিষদের আওতায়। এ কারণে পৌর কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। খাল উদ্ধারে পৌর কর্তৃপক্ষ প্রশাসনকে সার্বিক সহায়তা দেবে।

জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছাবেদুর রহমান খোকা সিকদার বলেন, শরীয়তপুর জেলা পরিষদের যেসব জমি রয়েছে, তা আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর খোঁজখবর নিয়ে উদ্ধারের চেষ্টা করছি। জেলা পরিষদের খাল অবৈধ দখলদারদের অনুরোধ করছি সরকারি সম্পত্তি সরকারকে ছেড়ে দিতে। অন্যথায় অচিরেই উদ্ধারের অভিযান শুরু করব।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads