• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

অপরাধ

পাম্প অপারেটর দেলোয়ার এখন কোটিপতি

  • এমদাদুল হক খান
  • প্রকাশিত ২০ অক্টোবর ২০১৯

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের তৃতীয় শ্রেণির একজন কর্মচারীর বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতি আর অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মাস্টার রোলে পাম্প অপারেটর হিসেবে কাজ শুরু করলেও বিভিন্ন প্রভাব খাটিয়ে নানা অনিয়মের মাধ্যমে এখন দেলোয়ার হোসেন নামে ওই কর্মচারী উচ্চমান সহকারী হিসেবে কাজ করছেন। একই সঙ্গে তিনি প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকও। অভিযোগ রয়েছে, নানা অনিয়মের মাধ্যমে দেলোয়ার হোসেন এখন নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার মালিক। ঢাকা, খুলনাসহ বিভিন্ন এলাকায় একাধিক বাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লটও রয়েছে তার। শুধু দেশের মধ্যেই নয়, অস্ট্রেলিয়াতেও তিনি গড়ে তুলেছেন বাড়ি ও নানা কার্যক্রম। বর্তমানে একটি ডেভেলপার কোম্পানিরও মালিক। তবে তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দেলোয়ার হোসেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রথমদিকে দেলোয়ার র্যাবের হাতে আটক ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজানের মোহাম্মদপুর এলাকার ডিশ ব্যবসার বিল সংগ্রহকারী হিসেবে কাজ করতেন। এরপর ২০০৬ সালে কমিশনারের সুপারিশে তিনি মাস্টার রোলে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষে পাম্প অপারেটর হিসেবে চাকরি নেন। সেই থেকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে। কমিশনার মিজানের সুপারিশে নানা প্রভাব খাটিয়ে বর্তমানে তিনি উচ্চমান সহকারী। দেলোয়ার হোসেনের নানা অপকর্মের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন খোদ তারই অনেক সহকর্মীরা। কিন্তু কেউ ভয়ে তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পান না। চাকরিজীবনে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হলেও তার রয়েছে অঢেল সম্পদ। দেলোয়ার হোসেন তার মায়ের নামে টাঙ্গাইল হাউজিং এস্টেট থেকে একটি প্লট কেনেন। কিন্তু সেটা বেশিদিন রাখেননি। দ্রুতই বিক্রি করে দেন। এরপর স্ত্রীর নামে খুলনার বয়রা হাউজিং এস্টেটে শিল্পী-সাহিত্যিক কোটায় বরাদ্দ নিলেও বেতার-টেলিভিশনের কোনো সনদ সেখানে দাখিল করতে পারেননি। পরে প্লটটি বিক্রি করে দেন। কুষ্টিয়া হাউজিং এস্টেটে তার নিজের নামে সাড়ে তিন কাটা জমি দুই কিস্তিতে ১৪ লাখ টাকায় বরাদ্দ নেন। পরে ৪০ লাখ টাকায় সেটিও বিক্রি করে দেন।

অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদপুরের এক হুন্ডি ব্যবসায়ীর মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ায় তার শ্যালকের কাছে কোটি কোটি টাকা পাচার করছেন দেলোয়ার। এছাড়া লালমাটিয়ায় নামে-বেনামে ৩টি, মোহাম্মদপুরসহ বেশ কয়েকটি স্থানে আরো ৮/১০টি ফ্ল্যাট রয়েছে তার। তার বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট থাকলেও তিনি সেগুলোতে বসবাস করেন না। তিনি লালমাটিয়ার একটি ডুপ্লেক্স ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। চড়েন ল্যান্ডক্রুজারসহ কয়েকটি বিলাসবহুল গাড়িতে। দেলোয়ার হোসেন গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের তৃতীয় শ্রেণির একজন কর্মচারী হয়ে এত সম্পদের মালিক কীভাবে হলেন তার হিসাব কারো জানা নেই। ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান করে দেলোয়ারের বিপুল সম্পদের সন্ধান পেলেও রহস্যজনক কারণে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে। 

এ ব্যাপারে দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সব মিথ্যা ও বানোয়াট। আমার অফিসের একটি গ্রুপ আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য মিথ্যা অভিযোগ করছে।

তিনি আরো বলেন, দেশের নাগরিক হিসেবে আমার সম্পদ থাকতেই পারে। তবে সম্পদ সম্পর্কে যে সব তথ্য ছড়ানো হচ্ছে তা সঠিক নয়, মিথ্যা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, হাবিবুর রহমান মিজান আমার এলাকার কমিশনার। আমি ছোট থেকে মোহাম্মদপুর এলাকায় বেড়ে উঠেছি। একজন জনপ্রতিনিধির সঙ্গে যে ধরনের সম্পর্ক থাকার কথা মিজান কমিশনারের সঙ্গে আমার ততটুকুই সম্পর্ক রয়েছে, এর বেশি নয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads