• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

অপরাধ

কিশোর গ্যাং আতঙ্কে ফেনীর মানুষ

সক্রিয় দুই শতাধিক স্পটে

  • সৌরভ পাটোয়ারী, ফেনী
  • প্রকাশিত ২১ অক্টোবর ২০১৯

ফেনীর উঠতি বয়সের বিপথগামী কিশোর গ্যাংদের আচরণ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে সচেতনমহল। মাদক বেচাকেনা, সেবন, ডিজে পার্টি ও চুরি-ছিনতাই নিয়ে ব্যস্ত থাকে এই গ্যাংয়ের কিশোররা। জেলা শহরে দুই শতাধিক স্পটসহ ছয়টি উপজেলার প্রতিটি স্কুল-কলেজের নির্জন রাস্তা, অন্ধকার গলি, পরিত্যক্ত কক্ষে এসব গ্যাংরা অনেকটা ফিল্মিস্টাইলে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।

জানা গেছে, ফেনীতে ছুরিকাঘাতে এক স্কুলছাত্রকে খুন, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধে কিশোরদের সম্পৃক্ততার অবিশ্বাস্য ও চাঞ্চল্যকর তথ্য রয়েছে ফেনীর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। সম্প্রতি পুলিশের হাতে ধরাও পড়ছে কম বয়স্ক কিশোর গ্যাংয়ের বেশ কিছু সদস্য। তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা বা বড় ভাই। আর এসব মারামারির ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করেন তারাই। 

কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা দলবেধে দিনের বেশির ভাগ সময় বিপণিবিতান, কোচিং সেন্টার এবং স্কুল-কলেজের সামনে অকারণে সময় কাটাচ্ছে। সুযোগ বুঝে গ্যাংয়ের সদস্যরা স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও বিপণিবিতানে আগত নারী ক্রেতাদের উত্ত্যক্ত করছে।

ফেনীতে কিশোর গ্যাংদের উল্লেখযোগ্য স্পটগুলো হলো-রামপুর শাহিন একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজের চারপাশে রাস্তা-গলি ফুটপাত মিলে ১০টি স্পট, রামপুর স্কুলের সামনে ও আশপাশে বেশ কয়েকটি স্পট, ডাক্তার পাড়ায় আইকন কোচিং সেন্টারের সম্মুখের গলি, ট্রাংক রোডের মুক্ত বাজারের আশপাশ ঘিরে কোচিং সেন্টারগুলোর সম্মুখে, পুরাতন পুলিশ কোয়ার্টারের বিভিন্ন গলি, শান্তি কোম্পানি রোডে শান্তি পাড়া, ফালাহিয়া লেনসহ ৭ স্পট, একাডেমি স্কুলের পাশে বিলোনীয়া পরিত্যক্ত রেলপথ, একাডেমি শহীদ সালাম স্টেডিয়ামের ছাদ, জয়নাল হাজারী কলেজ টু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, পাগলা মিয়া সড়ক, শহরের সেলিনা পারভীন সড়কের মাথা, রাজাঝি দিঘির পাড়, বিজয়সিংহ দিঘির পাড়, পুলিশ কোয়ার্টার আল কেমি প্রাইভেট হাসপাতালের গলি, পুরাতন পুলিশ কোয়ার্টার চক্ষু হাসপাতালের পেছনে বিসমিল্লাহ ম্যানশনের সামনে নিয়মিত আড্ডা।

এছাড়া এক নম্বর নাজির রোড আনোয়ার উল্লাহ সড়ক, মিজান রোড ফাজিল মাস্টার লেন, শর্শদি মোহাম্মদ আলি বাজারে স্কুল চলাকালীন সময়, ফতেহপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সমুখে নুরুল আলম ড্রানিং ফ্যাক্টরির সামনের সড়ক, লক্ষ্মীয়ারা হাইস্কুলের দক্ষিণ-উত্তর পাশ, গোডাউন কোয়ার্টার বালিকা বিদ্যানিকেতনের পেছনে কামাল হাজারী সড়ক, কদলগাজী রোড, রেলগেট, গাজী ক্রস রোড, আবু বক্কর সড়ক, শহরের হলি ক্রিসেন্ট গলি, উত্তর গোবিন্দপুর স্কুলের আশপাশ, শহরের গ্র্যান্ড হক টাওয়ারের পশ্চিমে আলিয়া মাদরাসা মার্কেট ও তার আশপাশের এলাকায় ব্যাপক আড্ডা, ফেনী পৌরসভার ১৪নং ওয়ার্ডের মেহেদি-সাঈদী দাতব্য চিকিৎসালয় এলাকা, মানিক কমিশনারের বাড়ির আশপাশ, রামপুর রাস্তার মাথাসহ বিভিন্ন স্পটে বখাটেরা আড্ডা দেয় স্কুল শুরুর আগে এবং ছুটির পর পর।

স্থানীয় সচেতন মহলের অভিযোগ, কিশোর গ্যাং দলের সদস্যদের চলাফেরা দেখতে অনেকটা আলাদা। তাদের পরনে থাকে টি-শার্ট, ছেঁড়া জিন্স প্যান্ট। চোখে সানগ্লাস। চুলে নিত্যনতুন স্টাইল। তাদের বিচরণ পাড়া, মহল্লা ও ফুটপাতের অলিগলি।

এসব বখাটে যখন-তখন প্যাকেট থেকে সিগারেট বের করে দামি লাইটার দিয়ে আগুন ধরিয়ে হিরোদের মতো টান দেয়। উচ্চস্বরে হিন্দি কিংবা ইংরেজি গান গায়। অধিকাংশের বয়স ১৮ বছরের নিচে হওয়ায় আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যায়। কিশোর হওয়ায় এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে  বিব্রত পুলিশ।

সম্প্রতি মাথিয়ারা মাদার কেয়ার স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ইমনের ছুরিকাঘাতে খুন হয় সহপাঠী আরাফাত শুভ ও শহরের পাঠান বাড়ি সড়কে শিশু আরাফাতকে হত্যা করে মাটিচাপা দেয় কিশোর সহপাঠী। পুলিশ তাদের আটক করে শিশু-কিশোর সংশোধনাগারে পাঠায়। এসব কারণে অযথা ঝামেলা এড়াতে পুলিশও কঠোর হচ্ছে না। এ অবস্থায় কিশোরদের অপর্কম নিয়ে অভিভাবক মহলে ছড়িয়ে পড়েছে উদ্বেগ-আতঙ্ক।

ফেনী জেলা গোয়েন্দ পুলিশের ইনচার্জ (ওসি) রণজিত কুমার বড়ুয়া জানান, ইতোপূর্বে আমরা অভিযান চালিয়েছি, এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। কিশোর অপরাধ মাদক বা ইভটিজিং দিয়ে শুরু হলেও আগামীতে তারা বড় ধরনের অপরাধ করবে। তা সমূলে ধ্বংস করতে হলে পুলিশের পাশাপাশি পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা ভূমিকা রাখতে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads