• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

অপরাধ

সম্রাটের সম্পদের খোঁজে একাধিক টিম সিঙ্গাপুরে

ব্যবহার করতেন বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৩ অক্টোবর ২০১৯

বিদেশে যাতায়াতকালে দেশের সব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করতেন বহিষ্কৃৃত যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাট। বিধি মোতাবেক, তার ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের সুযোগ পাওয়ার কথা নয়। তবে প্রভাবের কারণে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো প্রশ্ন তোলেনি কখনো। রিমান্ডে র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছেন ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাবেক সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট।

সম্রাট আরো জানিয়েছেন, তিনি জুয়া খেলতে যেতেন সিঙ্গাপুরের মেরিনা বে ক্যাসিনোতে। সঙ্গে নিতেন লাগেজভর্তি ডলার। তার লাগেজ চেক করা হতো না। কখনোই তাকে দেহ তল্লাশির মুখোমুখিও হতে হয়নি।

র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট জানান, নিজের জুয়ার নেশা থেকে শুরু করে ঢাকার ক্যাসিনো সাম্রাজ্যের আদ্যোপান্ত সবিস্তারে খুলে বলছেন সম্রাট। তার গডফাদার কে, কীভাবে তিনি ক্যাসিনো জগতে এলেন এবং জুয়ার টাকা কার কার পকেটে গেছে সবার নামই তিনি বলছেন। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া নামের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। যাচাই-বাছাই শেষে তালিকা পাঠানো হচ্ছে সরকারের উচ্চপর্যায়ে।

সূত্র বলছে, ক্যাসিনো কিং সম্রাটের অর্থ-সম্পদের একটি লম্বা ফিরিস্তি পাওয়া গেছে। দুবাই, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে টাকা জমা রেখেছেন সম্রাট। তার ভাই বাদলের নামে রাজধানীর আশপাশে কয়েকটি প্লট ও ফ্ল্যাট কিনে রেখেছেন তিনি। এ ছাড়া ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের নেত্রী মৌসুমির সঙ্গে সম্রাটের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মৌসুমির নামে রাজধানীর গুলশানে হাতিরঝিলসংলগ্ন পুলিশ প্লাজায় একাধিক দোকান কিনেছেন।

এদিকে সম্রাটের বাড়ি, গাড়িসহ বিপুল অর্থকড়ির বিস্তারিত তথ্যানুসন্ধানে সরকারের একাধিক ইউনিট এখন সিঙ্গাপুরে। দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, তার সহযোগীরা কে কোথায় সেটি চিহ্নিত করাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। রিমান্ডে থাকা সম্রাট হুন্ডিকারবারি এবং ক্যাসিনো পর্যন্ত ডলার পৌঁছে দেওয়া তার সহযোগীদের ব্যাপারে যে তথ্য দিয়েছেন সেসবের সত্যতাও খোঁজা হচ্ছে। মিলিয়ন ডলারে জুয়া খেলে যিনি সিঙ্গাপুর ক্যাসিনোর ভিআইপি জুয়াড়ি পাইজা চেয়ারম্যানশিপ পেয়েছেন তার জবানিতে কয়েক কোটি টাকা বিদেশি ব্যাংকে জমা থাকার বয়ানকে অস্বাভাবিক হিসেবেই দেখছেন সবাই। সরকারি-বেসরকারি এমনকি সাধারণ জুয়াড়িরাও এতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, এটা অবিশ্বাস্য! দুদিন আগে রিমান্ডে বিদেশের দুই ব্যাংকে ৮০ কোটি টাকা জমা থাকার কথা স্বীকার করেছেন সম্রাট। এ ছাড়া জানিয়েছেন, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় তার বিলাসবহুল ফ্ল্যাট বাড়ি থাকার কথা। কিন্তু ওই বাড়ি কার নামে, কোথায় এবং কার জিম্মায় রয়েছে সেটি এখনো প্রকাশিত হয়নি।

সরকারি সূত্র বলছে, সিঙ্গাপুরে সম্রাটের নামে বাড়ি থাকার সম্ভাবনা জিরো। তবে স্ত্রী এবং এখানকার পিআর বা স্থায়ী নাগরিকত্ব অর্জনকারী তার সহযোগীদের নামে একাধিক বিলাসবহুল ফ্ল্যাট থাকা অমূলক নয়। এ ছাড়া সম্রাট বিপাকে পড়ার আগে অনেকের প্রিয়ভাজন ছিলেন। সিঙ্গাপুরে থাকা তাদের অর্থকড়ি, সহায়-সম্পত্তি নিরাপদ রাখতে তার সহযোগিতা লেগেছিল। সব মিলিয়ে এখানে সম্রাট ছিলেন ‘সম্রাটের’ মতোই। তার সাম্রাজ্য কতটা বিস্তৃত ছিল এখন সেটাই অনুসন্ধান করছে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা উইং।

সূত্রমতে, জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাটের দেশে-বিদেশে কত অর্থ রয়েছে তার সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়ার চেষ্টা ছিল। কিন্তু পাওয়া যায়নি। নানা চমকপ্রদ কথা বলে সম্রাট বিষয়গুলো এড়িয়ে গেছেন। দেশের ব্যাংকে অর্থ নেই এমন দাবিও তিনি করছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads