• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
ভিক্ষুকের সন্তান চুরি করে লাখ টাকায় বিক্রি

প্রতীকী ছবি

অপরাধ

ভিক্ষুকের সন্তান চুরি করে লাখ টাকায় বিক্রি

  • চট্টগ্রাম ব্যুরো
  • প্রকাশিত ০৪ নভেম্বর ২০১৯

চট্টগ্রাম নগরীর কাজীর দেউড়ির মোড় থেকে পাঁচ মাস আগে এক ভিক্ষুকের সন্তান চুরির ঘটনায় শিশুচুরি চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন এ তথ্য জানিয়েছেন।

গ্রেপ্তার তিনজন হলো- মো. আফসার প্রকাশ জাফর সাদেক (৩৫), পারভীন আক্তার (৩৫) এবং নগরীর ন্যাশনাল হাসপাতাল ও সিগমা ল্যাবে কর্মরত রেডিওলজি বিভাগের টেকনোলজিস্ট সুজিত কুমার নাথ (৪৫)।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন জানান, চট্টগ্রাম নগরীতে হাসপাতাল থেকে শিশু চুরি করা একটি চক্রের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। চক্রটি নগরীর হতদরিদ্র ও ভাসমান মানুষের শিশু চুরি করে নিঃসন্তান দম্পতিদের কাছে বিক্রি করে। এ সময় তারা ক্রেতাদের কাছে ওই শিশুর চরিত্র গোপন করে রাখে। পুলিশের ভারপ্রাপ্ত ওই কর্মকর্তা আরো জানান, গত ২৭ মে নগরীর কাজীর দেউড়ি এলাকায় কোলে দুই মাসের শিশু নিয়ে ভিক্ষা করছিলেন শেফালী বেগম নামে এক নারী। এক যুবক তাদের ভালো পোশাক কিনে দেওয়ার কথা বলে রিয়াজউদ্দিন বাজারে নিয়ে যান। সেখান থেকে কৌশলে শিশুটিকে চুরি করে নিয়ে যায়। এই ঘটনায় শেফালী ২৮ মে কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলা তদন্তের সূত্রে গত শনিবার বিকেলে কক্সবাজারের কলাতলী থেকে প্রথমে আফসার এবং পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম নগরীর মেহেদীবাগে ন্যাশনাল হাসপাতালের সামনে থেকে সুজিত এবং নগরীর অক্সিজেন এলাকার সৈয়দপাড়ার এক বাসা থেকে পারভীনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী নগরীর দামপাড়ায় পল্টন রোডে জনৈক পবন কান্তি নাথের বাসা থেকে চুরি যাওয়া শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।

ওসি মহসীন জানান, নিঃসন্তান পবন কান্তি নাথ এক লাখ ৩০ হাজার টাকায় আফসারের কাছ থেকে বাচ্চাটি কিনে নিয়েছিলেন। বাচ্চাটি দত্তক নেওয়ার সময় আফসারের সঙ্গে ১০০ টাকার স্ট্যাম্পে পবনের চুক্তিও হয়।

নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মেহেদী হাসান বলেন, বিভিন্ন হাসপাতালের আয়া-নার্স, হাসপাতালের আশপাশে থাকা দালাল এবং বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মচারীরা মিলে গড়ে তোলা একটি সিন্ডিকেটের সন্ধান পেয়েছি। তারা হতদরিদ্র মানুষের, বিশেষ করে নারীদের কাছ থেকে বাচ্চা চুরি করে চুক্তির মাধ্যমে নিঃসন্তান দম্পতির কাছে বিক্রি করে। চুক্তির সময় বাচ্চাটির মা-বাবা মারা গেছে এবং তাদের নিকটাত্মীয়ের বাচ্চা হিসেবে পরিচয় দেয়। এতে দম্পতিরা সেই বাচ্চা কিনে লালন-পালনে উৎসাহিত হন।

সূত্র জানায়, চলতি বছরের আগস্টে ইপিজেড থানায় একটি শিশু চুরির মামলায় মো. ইকবাল হোসেন (২৮) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ইকবালকে কোতোয়ালি থানার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ইকবাল জানায়, সে এবং আফসার দুজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় থাকে। রোগীর রক্ত লাগলে কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তারা টাকার বিনিময়ে সহযোগিতা করে। আফসার ফার্মেসি থেকে ওষুধও সরবরাহ করে এবং রাতে ব্লাড ব্যাংকের নিচে ঘুমায়। আট মাস আগে আফসারসহ সংঘবদ্ধ চক্র মিলে ইপিজেড এলাকায় এক নারীকে জুস খাইয়ে তার বাচ্চা চুরি করে বিক্রি করে। এরপর কাজীর দেউড়ি থেকে শেফালী বেগমকে রিয়াজউদ্দিন বাজারের সফিনা হোটেলের কাছে নিয়ে তার বাচ্চাও চুরি করা হয়।

এদিকে কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান বলেন, কাজীর দেউড়িতে যেখানে শেফালী ভিক্ষা করছিল এবং রিয়াজউদ্দিন বাজারে বাচ্চা নিয়ে যাবার ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি। সেখানে দেখা যায়, ইকবাল বাচ্চাটিকে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে সে জানিয়েছে, বাচ্চা সে চুরি করলেও আশপাশে আফসার দাঁড়িয়েছিল। এই ঘটনায় সে আদালতে জবানবন্দিও দেয়।

কামরুজ্জামান আরো বলেন, আফসার ও ইকবালের সঙ্গে হাসপাতালের আয়া-নার্স এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মচারীদের ভালো যোগাযোগ আছে। হাসপাতালে অনেক নিঃসন্তান নারী আয়া-নার্সদের কাছে দত্তক নেওয়ার জন্য বাচ্চা চান। তখন আয়া-নার্সরা আফসার ও ইকবালদের মতো দালালদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আফসার-ইকবালরা দুভাবে বাচ্চা সংগ্রহ করে। প্রথমত, অনিচ্ছাকৃতভাবে গর্ভধারণের পর প্রসব করা বাচ্চা তারা নিয়ে নেয়। এ জন্য তাদের সঙ্গে আয়া-ধাত্রী, গর্ভপাত করায় এমন ক্লিনিকের কর্মচারীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকে। দ্বিতীয়ত, তারা বাচ্চা চুরি করে বিক্রি করে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads