• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
২০ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে এনডিই রেডিমিক্স

ফাইল ছবি

অপরাধ

২ লাখ চার হাজার টন লাইমস্টোন খালাস

২০ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে এনডিই রেডিমিক্স

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৬ নভেম্বর ২০১৯

অবৈধ সুবিধা নিয়ে প্রায় দুই লাখ টন লাইমস্টোন খালাস করেছে মেসার্স এনডিই রেডিমিক্স কনক্রিট লিমিটেড নামে একটি কনক্রিট প্রতিষ্ঠান। এতে সরকারের প্রায় ২০ কোটি টাকা রাজস্ব লোকসান হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নিবন্ধন নম্বর : ০০১১১১৮৮৪-০৪০৩।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকা পশ্চিম কাস্টমস ও ভ্যাট কর্তৃপক্ষ সাভার এলাকায় অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটিতে অভিযান পরিচালনা করেছে। একটি কংক্রিট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিনব কৌশলের আশ্রয়ে নেওয়া ২০ কোটি টাকা ফাঁকির তথ্য উদ্ঘাটন করেছে। গতকাল ঢাকা পশ্চিমের একটি দল ওই ভ্যাটের কারখানায় আকস্মিক পরিদর্শন করে এই তথ্য উদ্ঘাটন করে। ঢাকা পশ্চিমের ভ্যাট কমিশনার ড. মইনুল খান বাংলাদেশের খবরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

পরিদর্শনকালে দেখা যায়, এটি একটি রেডিমিক্স কংক্রিট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। এই ইউনিট উৎপাদনে কাঁচামাল হিসেবে ক্রাশড পাথর, সিমেন্ট, এডমিক্সার, বালি এবং পানি ব্যবহার করে থাকে।

ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কর্তৃপক্ষ রেডিমিক্সের বিষয়ে বিশেষজ্ঞের মতামত নিয়ে জানতে পারেন, এর উৎপাদনে কোনোক্রমেই লাইমস্টোন নামের উপকরণ ব্যবহার হয় না। এ বিষয়ে বুয়েটের মতামত আমলে নেওয়া হয়। অন্যদিকে পরিদর্শনের সময় প্রতিষ্ঠান প্রতিনিধির বিবৃতিও গ্রহণ করা হয়। তিনি স্বীকারোক্তি দেন, রেডিমিক্স কনক্রিট উৎপাদনে ওই প্রতিষ্ঠান কর্তৃক লাইমস্টোন ব্যবহার করেনি।

কাঁচামাল হিসেবে লাইমস্টোন ব্যবহার না হওয়া সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটি ওই পণ্য আমদানি করেছে এবং আমদানির সময় এসআরও সুবিধা বিশিষ্ট এইচএস ২৫২১.০০.১০ ঘোষণা দিয়েছে। এ জন্য এনডিএ কর্তৃপক্ষ সাভার ভ্যাট বিভাগে মূসক-৭-এ উপকরণ হিসেবে পণ্যটির ব্যবহারের তথ্য প্রদর্শন করেছিল।

এর ফলে অধিক মুনাফার নিমিত্ত আমদানিকৃত সব লাইমস্টোন স্বল্প শুল্ককরাদি দিয়ে খালাস করে খোলাবাজারে বিক্রি করেছে। বিদ্যমান আইনের বিধান অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি যেহেতু চুন বা সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নয়, সেহেতু প্রতিষ্ঠানটি এসআরও সুবিধায় ওই কোড ব্যবহার করে লাইমস্টোন আমদানি করতে পারে না।

ঘোষিত মূসক-৭-এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পণ্যটি আমদানির সময় মোট রাজস্বের হার ৬৮ দশমিক ৮ বিশিষ্ট কোড ঘোষণা করার পরিবর্তে মোট ৩১ শতাংশ বিশিষ্ট কোড ঘোষণা করে। প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত ৫টি বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে পণ্য খালাস করে। এভাবে এসআরও সুবিধায় মোট ২০৪৯৮০ টন লাইমস্টোন অবৈধভাবে আমদানি করেছে।

আমদানিকৃত এসব পণ্যের মূল্য প্রায় ৫২ কোটি ৬২ লাখ টাকা এবং পরিশোধিত মোট রাজস্ব প্রায় ১৬ কোটি ৩১ লাখ টাকা। কিন্তু এসআরও সুবিধাবিহীন কোডের মোট রাজস্বের হার ৬৮.৮০% অনুযায়ী ওই পরিমাণ লাইমস্টোন আমদানির সময় পরিশোধযোগ্য মোট রাজস্বের পরিমাণ হতো ৩৬ কোটি ২০ লাখ টাকা।

প্রতিষ্ঠানটি এভাবে মিথ্যা কোড ও উপকরণ ঘোষণা দিয়ে আমদানি পর্যায়ে প্রায় ২০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনার ড. মইনুল খান ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানের কাঁচামালের ঘোষণায় লাইমস্টোনের নাম মূসক-৭ থেকে বাতিল করে দিয়েছে।

একই সঙ্গে, তিনি কাস্টম হাউস, চট্টগ্রামকে প্রতিষ্ঠানের নামে খালাসের অপেক্ষমাণ চালান ওই এসআরও সুবিধায় খালাস না করার জন্য অনুরোধ করেছেন। এ ব্যাপারে মূল্য সংযোজন কর আইন, ২০১২ ও দি কাস্টমস অ্যাক্ট, ১৯৬৯ অনুযায়ী পৃথক মামলা করা হয়েছে। পাশাপাশি আইন অনুযায়ী ফাঁকিকৃত রাজস্ব আদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads