• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯
বন্দুকযুদ্ধে নিহত বাড়লেও কমেছে মাদক উদ্ধার

প্রতীকী ছবি

অপরাধ

বন্দুকযুদ্ধে নিহত বাড়লেও কমেছে মাদক উদ্ধার

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৯ নভেম্বর ২০১৯

সারা দেশে বেড়েছে মাদকবিরোধী অভিযান। বেড়েছে মামলা ও গ্রেপ্তার। কিন্তু বাড়েনি নিষিদ্ধ মাদকদ্রব্য উদ্ধার। বরং কমেছে। চলতি বছর সারা দেশে সব ধরনের মাদকদ্রব্য উদ্ধারের পরিমাণ আগের চেয়ে বেশ কমে গেছে। ছেদ পড়েছে বিগত বছর ও দশকের মাদকদ্রব্য উদ্ধারের ক্রমবর্ধমান হারেও।

দেশে সরকারের জিরো টলারেন্স বা শূন্য সহিষ্ণুতা নীতিতে সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে অভিযানের নামে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ প্রাণ যাচ্ছে একের পর এক মাদক পাচারকারীর। ফলে আতঙ্কে বহু পাচারকারী আপাতত নিষ্ক্রিয় ও গা ঢাকা দেওয়ার কারণেই মাদকদ্রব্য উদ্ধারের পরিমাণ কমে গেছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। তবে বিষয়টিকে ইতিবাচক ও সাফল্য হিসেবে দেখছে জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। কিন্তু তাতেও থামছে না ভয়ংকর মরণ নেশা মাদকের অপ্রতিরোধ্য বিস্তার।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. জামাল উদ্দীন এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর শূন্য সহিষ্ণুতা নীতিতে সব বাহিনী একই সময়ে ব্যাপকভাবে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছে। এতে দেশে মাদকের প্রবাহ কমেছে। তাই উদ্ধারও কমে এসেছে।’ তবে এ অর্জন যাতে ধরে রাখা যায় সেজন্য মাদকবিরোধী চলমান ব্যাপক অভিযান আর বন্ধ হবে না বলেও জানান তিনি।

জানা যায়, জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পুলিশ, বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড নিয়মিতভাবে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে। তাতে মাদকদ্রব্য উদ্ধারের পাশাপাশি মামলাও হচ্ছে। গ্রেপ্তার হচ্ছে লাখো আসামি। গত বছর পর্যন্ত বিগত এক দশকে এসব সংস্থা এবং বাহিনীর যৌথ ও পৃথক অভিযান, মামলা, গ্রেপ্তার ক্রমেই বেড়েছে। সে সঙ্গে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে আসছিল ইয়াবাসহ অধিকাংশ মাদকদ্রব্য জব্দের পরিমাণ। অবশ্য কম প্রচলিত কিছু মাদক উদ্ধারের পরিমাণ একাধিক বন্দুকযুদ্ধে নিহত বাড়লেও বছরে কিছুটা ওঠা-নামা করলেও মোটামুটিভাবে প্রায় সব মাদকের উদ্ধারই এতদিন ধরে বেড়ে চলছিল। কিন্তু সর্বশেষ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ সব বাহিনীর সম্মিলিত মাদক উদ্ধারে ভাটা পড়েছে।

মাদক নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত রাষ্ট্রীয় প্রধান সংস্থা জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। সংস্থাটির সারা দেশের সম্মিলিত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গত ১০ বছর ৯ মাসে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দেশে মামলা হয়েছে ৬ লাখ ৭১ হাজার ৩০১টি। অবশ্য অভিযান পরিচালিত হয়েছে আরো বেশি। আর ওই মামলাগুলোতে আসামি হয় ৮ লাখ ৪৯ হাজার ২৮০ জন। ওই এক দশকের বেশি সময়ের মধ্যে প্রায় প্রতি বছরই মামলার সংখ্যা বেড়েছে। সে ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে সর্বমোট ১ লাখ ১৯ হাজার ৮৭৮টি মাদক মামলা রুজু হয়েছে। আর সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলতি বছরের ৯ মাসে ওই সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাখ ৬৫৬টিতে। অপরদিকে গত বছর মামলায় মোট ১ লাখ ৬১ হাজার ৩২৩ জন আসামি হয়। আর চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে মাদক মামলায় নাম উঠেছে ১ লাখ ৩২ হাজার ১৫৮ জনের।

কিন্তু প্রায় প্রতি বছরই অভিযান, মামলা ও আসামির সংখ্যা বাড়লেও কেবল এ বছরই অতীতের মাদকদ্রব্য উদ্ধারের ক্রমবর্ধমান ধারাবাহিকতা ভেঙেছে। গত কয়েক বছরের চেয়ে কমেছে মাদকদ্রব্য উদ্ধারের পরিমাণ। প্রায় মাদকের ক্ষেত্রেই ছোট হয়েছে জব্দ তালিকা। প্রথম ধরা পড়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ইয়াবার উদ্ধার পর্যন্ত সহস্র পেরিয়ে দ্রুত লক্ষ কোটির সংখ্যা ছাড়িয়েছে। গত ১০ বছর ধরে কেবলই বেড়েছে ইয়াবা উদ্ধারের পরিমাণ। এই ধাবাহিকতায় ২০১৮ সালে ৫ কোটি ৩০ লাখ ৪৮ হাজার ৫৪৮টি ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার হয়েছে। সেখানে এ বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে জব্দ হয়েছে অর্ধেকের কম; ২ কোটি ২১ লাখ ৫৯ হাজার ৬১২টি ইয়াবা ট্যাবলেট। অপরদিকে অতীতের ক্রমবর্ধমান ধারাহিকতায় গত বছর ৪৫১ কেজি হেরোইন উদ্ধার হয়েছিল। এ বছর জব্দ হয়েছে ২৭৬ কেজি। আর গত বছর ৬০ হাজার ২৯৫ কেজির স্থলে এবার গাঁজা উদ্ধার হয়েছে ২৪ হাজার ৭৮৮ কেজি। একইভাবে চলতি বছর ফেনসিডিল, বিদেশি মদ, বিয়ার, ইনজেকটিং ড্রাগ (অ্যাম্পুল) উদ্ধারের পরিমাণও বেশ কমেছে। তবে গত বছর ৭ কেজির বেশি আফিম ও ৭৫০ গ্রাম কোকেন উদ্ধার হলেও এ বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তা একেবারে উদ্ধার হয়নি।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অপারেশন’স বিভাগের এক কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘অর্থের লোভ ও জীবনে বিলাসিতার জন্যই কিছু লোক মাদক ব্যবসা করছে। অভিযান বা ‘বন্দুকযুদ্ধে’ যেখানে তাদের জীবন চলে যাচ্ছে সেখানে কীভাবে আর মাদক ব্যবসা করে। তাই অভিযান বাড়লে মাদকের পাচার ও বেচাকেনা কমে গেছে। এ কারণে মাদকদ্রব্য জব্দ বা উদ্ধারও কমছে।’ তবে অতীতের মতো সুযোগ বুঝে আবারো মাদক পাচার বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads