• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
তাড়াশে টিআর-কাবিখা প্রকল্পে হরিলুট

প্রতীকী ছবি

অপরাধ

তাড়াশে টিআর-কাবিখা প্রকল্পে হরিলুট

  • সোহেল রানা, সিরাজগঞ্জ
  • প্রকাশিত ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় টেস্ট রিলিফ (টিআর) ও কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্পের লাখ লাখ টাকা হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, কোনো কোনো প্রকল্পে বরাদ্দের অর্থের পুরোটাই আবার কোনো প্রকল্পে মাত্র ১০ থেকে ২০ শতাংশ কাজ করে বাকি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. আবদুল আজিজ ও তার ভাই আবু সাঈদ, ভাগনে আবদুস সবুর ওরফে মিল্টন, তাড়াশ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) নূর মামুনসহ গুটিকয়েক নেতা এবং জনপ্রতিনিধি নানা কৌশলে এ লুটপাট করেছে। তবে কাজ না হলেও কাগজে-কলমে শতভাগ কাজ দেখাতে কেউ কোনো কার্পণ্য করেনি। এদিকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম বরাদ্দের টিআর-কাবিখা কাজে ব্যাপক অনিয়ম হওয়ায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দ্বিতীয় কিস্তিতে তাড়াশ উপজেলায় স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. আবদুল আজিজের অনুকূলে টিআরের ৪৩টি প্রকল্প ও কাবিখার ৯টি প্রকল্প, সাধারণ বরাদ্দে টিআরের ২৩ এবং কাবিখার ৯টি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রায় এক কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কাগজে-কলমে প্রতিটি প্রকল্পে ১০০% কাজ দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ইতোমধ্যে রিপোর্টও প্রদান করা হয়েছে।

কিন্তু সরেজমিনে পুরোই উল্টো চিত্র দেখা যায়। উপজেলার মাধাইনগর ইউনিয়নের জাহাঙ্গীরগাতী দেলবারের বাড়ি হতে কবরস্থান পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের জন্য ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু গত দেড় বছরে ওই রাস্তায় এক ঝুড়ি মাটিও ফেলা হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা আল-আমিন, তাইবুর রহমান ও সবুর জানান, রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। শুনেছি মেরামতের জন্য এমপি টিআর বরাদ্দ দিয়েছে; কিন্তু কোনো কাজ করা হয়নি। পুরো টাকাই আত্মসাৎ করা হয়েছে।

একই ইউনিয়নের সেরাজপুর রহমানের বাড়ি হতে আলহাজ আজগর আলীর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের জন্য এমপি কোটায় টিআরের ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও সেখানে কোনো কাজ করা হয়নি। ওই গ্রামের আজগর আলী জানান, আমরা নিজেরা চাঁদা তুলে রাস্তা নির্মাণ করেছি। এখানে টিআরের কোনো কাজ হয়নি। তবে প্রায় সাত মাস আগে স্থানীয় ইউপি সদস্য লেবু দুই ট্রাক মাটি ফেলেছিল।

বারুহাস ইউনিয়নের কাজিপুর পূর্বপাড়া সাহেব আলীর বাড়ি হতে লয়মুদ্দীনের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের জন্য টিআরের ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও কোনো কাজ হয়নি।

প্রকল্পের সভাপতি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক জানান, আমি প্রকল্প সম্পর্কে কিছু জানি না। কোথাও সই দেইনি। কত টাকা বরাদ্দ তাও জানি না। শুনেছি এমপির ছোট ভাই আবু সাঈদ ও মিল্টন টাকা দিয়েছে, এলাকার যুবলীগ নেতা রফিকুল কাজ করেছে। তবে কত টাকা দিয়েছে তাও আমার জানা নেই।

একই ইউনিয়নের তাড়াশ-রানীর হাট রাস্তাসংলগ্ন আতাউরের বাড়ি হতে আলহাজ গাজী সাইদুর রহমানের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের জন্য ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু এক কোদাল মাটিও সেখানে ফেলা হয়নি।

আতাউর রহমান জানান, বিভিন্ন স্থানে ধরনা দিয়ে রাস্তাটি মেরামত করতে পারিনি। পরে এলাকাবাসীর সহায়তায় রাস্তাটি মেরামত করেছি। যদি বরাদ্দ দেওয়া হয়ে থাকে তবে পুরো টাকাই আত্মসাৎ করা হয়েছে।

বিনসাড়া-কুসুম্বি পাকা রাস্তায় লালমিয়ার বাড়ি হতে ঝিনাই গাড়ির পাড় পর্যন্ত রাস্তা মেরামতে ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও কোনো কাজ করা হয়নি। বিনসাড়া গ্রামের স্বেচ্ছাসেবক লীগের ওয়ার্ড সভাপতি শহীদুল ইসলাম জানান, বিগত ৫ বছরের মধ্যেও এ রাস্তায় কোনো মাটি বা মেরামত হয়নি।

কুসুম্বি আয়সা নাজাতুল্লাহ স্কুল অ্যান্ড কলেজ উন্নয়নে ৫০ হাজার টাকা অর্থ বরাদ্দ দেওয়া থাকলেও বাস্তবে কোনো কাজ হয়নি। স্কুল অ্যান্ড কলেজের কর্তৃপক্ষ জানান, কাজ তো দূরের কথা আমাদের প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ আছে কি না এ বিষয়টি আমরা জানিও না।

পালাশী মাদ্রাসা ভরাটে ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো কাজ করা হয়নি।

শুধু এমপির অনুকূলে বরাদ্দের প্রকল্পগুলো নয়, উপজেলার প্রতিটি প্রকল্পের অবস্থা একই রকম। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, টিআরের সব টাকা সংসদ সদস্যের ভাই আবু সাঈদ ও ভাগনে মিল্টন সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সহায়তা আত্মসাৎ করেছেন।

এ বিষয়ে পিআইও নূর মামুন বলেন, প্রাথমিকভাবে সুষ্ঠুভাবে কাজ হয়েছে বলে প্রতীয়মান হওয়ায় বিল প্রদান করা হয়েছে। যেহেতু অভিযোগ উঠেছে তাই পুনরায় প্রকল্পগুলো পরিদর্শন করার পর প্রকল্পগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারব। এর বেশি কিছু এখন বলা সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে সংসদ সদস্যের ভাই আবু সাঈদ জানান, প্রকল্পের কাজ হবে কি হবে না সেটা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস বুঝবে? এতে আপনাদের সমস্যা কী? আপনাদের কোনো সমস্যা হলে আমার সাথে যোগাযোগ করবেন।

এ বিষয়ে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকা তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইফ্ফাত জাহান মোবাইলে জানান, প্রকল্পের তদারকি করেছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নূর মামুন। প্রকল্পের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পূর্ণ হয়েছে বলে আমার বাসায় এসে স্বাক্ষর নিয়ে বিল প্রদান করেছেন।

তবে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল্লাহ জানান, অভিযোগ থাকলে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে সংসদ সদস্য ডা. আবদুল আজিজ জানান, টিআর-কাবিখা প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে কি না আমার জানা নেই। তবে কোনো অনিয়ম দুর্নীতি হলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads