• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
জঙ্গি তৈরির নতুন ফাঁদ

ফাইল ছবি

অপরাধ

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম

জঙ্গি তৈরির নতুন ফাঁদ

  • এমদাদুল হক খান
  • প্রকাশিত ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিত্যনতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে জঙ্গি কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। জঙ্গিবাদ বা উগ্রবাদের সমর্থনে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজ খুলে তৎপরতা চালাচ্ছে জঙ্গিরা। এরপর ধর্মীয় বিভিন্ন পোস্ট দেওয়া হয়। এতে অনেকেই ভিজিটের পাশাপাশি লাইক ও কমেন্ট করে। এখান থেকে টার্গেট ব্যক্তিকে খুঁজে নিজেদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করে জঙ্গিরা। প্রথমে টার্গেট করা ব্যক্তির সঙ্গে মেসেঞ্জারে চ্যাটিং করে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। এরপর তাকে ধীরে ধীরে মোটিভেটেড করে নিজেদের দলে ভেড়াচ্ছে। এভাবেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সদস্য সংগ্রহের পথ বেছে নিয়েছে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের হাতে গ্রেপ্তার একাধিক জঙ্গি সদস্য এসব তথ্য জানিয়েছে।

পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) উপ-কমিশনার মো. ছানোয়ার হোসেন বাংলাদেশের খবরকে জানান, জঙ্গিদের বেশকিছু এক্সপার্ট গ্রুপ অনলাইনে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনায় সক্রিয় রয়েছে। এরা আইটি বিষয়ে বেশ পারদর্শী। এরা ইন্টারনেটে বিভিন্ন নামে ওয়েবসাইট-ব্লগ খুলে এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জঙ্গিবাদের প্রচারণা চালিয়ে আসছে।

পুলিশ কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন বলেন, একসময় জঙ্গিরা গ্রামের সহজ সরল ব্যক্তি বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মগজ ধোলাই করে নিজেদের দলে ভেড়াত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে তারা বিভিন্ন কৌশল পরিবর্তন করছে। বর্তমানে জঙ্গিরা নতুন সদস্য সংগ্রহের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে বেছে নিয়েছে। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রথমে ধর্মীয় বিভিন্ন পোস্ট দেয়। সেগুলোতে কেউ কেউ লাইক বা শেয়ার দেন। বেশি লাইক ও শেয়ার দেওয়া ব্যক্তিকেই টার্গেট করে জঙ্গিরা। তারা বুঝতে পারে ওই ব্যক্তিকে সহজে দলে ভেড়ানো যাবে। প্রথমে তার সঙ্গে চ্যাটিং করে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। এরপর বিভিন্ন ধর্মীয় আলোচনার মাধ্যমে টার্গেট করা ব্যক্তিকে মোটিভেটিভ করে নিজেদের দলে নিতে সক্ষম হয় জঙ্গিরা। একবার জঙ্গিবাদে কেউ জড়িয়ে পড়লে সেখান থেকে কেউ সহজে ফিরে আসতে পারে না।

সিটিটিসি কর্মকর্তা ছানোয়ার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্মীয় কোনো স্ট্যাটাসে লাইক, কমেন্ট বা শেয়ার না করার জন্য সাধারণ মানুষকে অনুরোধ জানান।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি মিডিয়া সোহেল রানা জানান, জঙ্গিবাদে জড়িত প্রায় সাড়ে ৭০০ জনের কার্যক্রম বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রায় ৮০ শতাংশ লোক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে। কুমিল্লায় পুলিশের ওপর হামলাকারী দুই জেএমবি সদস্য ধর্মীয় মতবাদে বিশ্বাসী ছিল। একপর্যায়ে তারা অনলাইনের মাধ্যমে খুব সহজে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। তাই ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পুলিশের যোগাযোগ থাকলে অনলাইন কিংবা ফেসবুকের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়ানো বা উদ্বুদ্ধ করার সম্ভাবনা কম থাকবে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্যানুযায়ী, ধর্মীয় উগ্রবাদ প্রচারের অভিযোগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের ৩০টি পেজ ও আইডি চিহ্নিত এবং তা অপসারণে ডিএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিট ব্যবস্থা নিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় গ্রেপ্তার সোমা ও তার বোন আসমাউল হুসনা সুমনা অনলাইনে আইএস-আলকায়েদার ছড়িয়ে রাখা উপকরণ দেখে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন। হামলা চালানোর আগে বাসায় পুলিশ এলে তাদের ওপর হামলা করতে তিনি ছোট বোনকে নির্দেশও দেন। অনলাইনে সক্রিয় এমন সদস্য সংখ্যা অন্তত ২৫০ জন। এর অনেকে চুপচাপ ঘাপটি মেরে আছেন। এ ছাড়া ৮-১০ জনের একটি গ্রুপ কথিত হিজরতের নামে বাড়ির বাইরে আছে।

সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও থেকে র্যাবের হাতে আটক হয় জঙ্গি সদস্য নাজমুল ইসলাম শাওন। সে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। একই পেশার মানুষদের মাঝে অনলাইনে উগ্রবাদী মতাদর্শ প্রচারের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে যোগদান করে বলে র্যাবের কাছে স্বীকার করে সে। নাজমুল ইসলাম শাওন র্যাবকে জানায়, ২০১৫ সালের মার্চে ফেসবুকের মাধ্যমে আবু আবদুল্লাহ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। আবদুল্লাহর হাত ধরে তার জেএমবিতে যোগদান। এরপর জেএমবির অন্য সদস্য সুলায়মান ওরফে আজাহারের সঙ্গে পরিচয় হয়। শাওনের তথ্যানুযায়ী, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনলাইনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে প্রায় ৪০-৫০ জন সমমনা উগ্রবাদীর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে।

গুলশান হামলার ঘটনায় যেসব জঙ্গির পরিচয় পাওয়া গেছে তাদের অধিকাংশ তরুণ, প্রযুক্তি আসক্ত ও ধনী পরিবারের সন্তান হওয়ায় সহজেই সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে পেরেছে। এর মধ্যে জঙ্গি রোহান ইমতিয়াজের বাবার দাবি, তার বিশ্বাস, ২২ বছর বয়সী সন্তানকে অনলাইন ব্যবহার করে দলে ভেড়ানো হয়েছে।

ইমতিয়াজ ফেসবুক ব্যবহার করে সব মুসলমানকে সন্ত্রাসী হওয়ার আবেদন করে এবং এতে যুক্তরাজ্য, কানাডা, মালয়েশিয়াতে নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত ভারতের এক প্রচারকের উদ্ধৃতি ব্যবহার করে।

রোহানের বাবা ইমতিয়াজ খান বুলবুল একটি সংবাদ সংস্থাকে বলেন, ‘আর সবার মতোই সাধারণ মুসলমান ছিল তার ছেলে। হয়তো ইন্টারনেট ব্যবহার করে তাকে ভুল বোঝানো হয়েছে। সে কী কী ব্রাউজ করে তা কখনো পরীক্ষা করে দেখিনি। কেউ তাকে ব্রেন ওয়াশ করেছে।’

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads