• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
শ্রীপুরে বালির স্তুপের নীচে মিলল শিশুর মরদেহ

শিশু জাহিদের স্বজনদের আহাজারি

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

অপরাধ

শ্রীপুরে বালির স্তুপের নীচে মিলল শিশুর মরদেহ

  • শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯

আব্বা আমার চামড়ার জুতা ছিড়া গেছে। ক্ষেতের মাশকেলাই ডাইল বেইচ্ছা জুতা কিনি? তোমার ক্ষেতের মালকেলাই কাইটা বেচ্ছা দেই। দুই তিন কেজি ডাইল অইলে জুতা কিনতে পারাম। বাবাও ছেলের জুতা কেনার সে আবদারে সাই দেয়। তবে মাশকেলাই ডাল বিক্রি করে আমার ছেলের জুতা কিনার শেষ ইচ্ছা পুরণ হলো না বলেই হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করেন গাজীপুরের শ্রীপুরে বালির নিচ থেকে খুঁজে পাওয়া খুন হওয়া শিশু জাহিদের বাবা আকতার হোসেন।

আজ শুক্রবার সকালে বাড়ির কিছু দূরেই বালির স্তুপের নীচ থেকে খোঁজ মেলে আগের দিন নিখোঁজ হওয়া স্কুলছাত্র জাহিদ হাসান দূর্জয়ের মরদেহ। উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের বিধাই গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সে তেলিহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল।

নিহতের স্বজনরা জানান, নিহত জাহিদ হাসান (১০) ও তার ছোটো ভাই জারিফ (৫) দাদা দাদীর সাথেই থাকত। এ বছরের শুরুর দিকে তাদের মা জেসমিন আক্তার প্রতিবেশি লাল মিয়ার ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের সাথে পালিয়ে বিয়ে করেন। এর পর থেকে দাদীই তাদের দেখাশোনা করত। তাদের মা জেসমিন পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই জাহাঙ্গীরের সাথে দ্বন্ধ তৈরি হয় নিহত জাহিদের বাবা আকতারের। এরি মধ্যে এ নিয়ে মামলা গড়িয়েছে আদালতে। দীর্ঘদিন ধরেই দুই পরিবারে মধ্যে এ নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। মাঝে মধ্যেই শিশু জাহিদ ও জারিফ মায়ের সঙ্গে দেখা করতে ওই (জাহাঙ্গীরের) বাড়িতে যেত। এ নিয়ে জেসমিনের বর্তমান স্বামী জাহাঙ্গীর ক্ষোভ প্রকাশ করতেন। সন্তানদের সঙ্গে মেলামেশায় নিষেধ করতেন। এ নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যেও চলত পারিবারিক দ্বন্ধ।

নিহত জাহিদের বাবা আকতার হোসেন বলেন, এ বছরের জানুয়ারির শুরুতেই আমার স্ত্রী জেসমিন প্রতিবেশি চাচাতো ভাই জাহাঙ্গীরের সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে। জাহাঙ্গীর আমাদের বাড়িতে এক সময় নিয়মিত যাতায়াত করতে। আমাদের পিকআপভ্যান চালাত সে। আমি গরুর ব্যবসা করতাম। পরে আমার বেশ কিছু জমানো টাকা পয়সা নিয়ে জাহাঙ্গীরের সাথে পালিয়ে যায় আমার স্ত্রী জেসমিন। পরে এ ঘটনায় মামলা করি। মামলার পর থেকেই আমাদের বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিত জাহাঙ্গীর ও তার পরিবারের লোকজন। বেশ কয়েকবার আমাদের বাড়িতে হামলাও চালায় তারা। মামলা তুলে নিতে আমাদের হত্যার হুমকি দিতো তারা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিহত শিশু জাহিদের সমস্ত শরীর বালির নীচে চাপা পড়ে ছিল। শুধু মুখের কিছু অংশ ছিল ওপরে। মরদেহ বাঁশ, বাঁশের কঞ্চি দিয়ে আড়াল করে রাখা হয়েছিল। খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে।

নিহত শিশু জাহিদের সহপাঠি মেহেদি জানান, গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিকালে আমরা একত্রে কবুতর উড়িয়েছি। খেলাধুলা করেছি। পরে সন্ধ্যার কিছু আগেই আমি বাড়িতে চলে আসি। সেও বাড়িতে যাবে বলে চলে যায়।

নিহত শিশু জাহিদের চাচি কামরুন নাহার কনা বলেন, সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামলেও যখন জাহিদ বাড়িতে ফিরছে না তখন আশপাশে খোঁজাখুজি শুরু করি আমরা। পরে আত্মীয়দের বাড়িতে খোঁজ মিলেনি। আশপাশে এ নিয়ে জানাজানি হলে রাতেই বিভিন্ন মসজিদের মাইকে হারিয়ে যাওয়ার খবর প্রচার করা হয়। পরে সকালে বাড়ির একটু দুরেই এক কারখানার সীমানা প্রাচীরের ভিতরে বালির স্তুপের নীচে লাশের সন্ধান মিলে। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।

শ্রীপুর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) আকতার হোসেন বলেন, দুপুরের পরে শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) ক্রাইম সিন সনাক্ত করার পরে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি জানান, ভারী কোনো বস্তু দিয়ে শিশুর ডান কানের ওপরে মাথায় আঘাত করার চিহ্ন রয়েছে। ময়না তদন্তের জন্য মরদেহ শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। শিশুর স্বজনদের থানায় আনা হয়েছে। প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads