• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে নানা পন্থায় ত্রিপুরা থেকে আসছে মাদক

ছবি : বাংলাদেশের খবর

অপরাধ

কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে নানা পন্থায় ত্রিপুরা থেকে আসছে মাদক

  • খায়রুল আহসান মানিক, কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯

কুমিল্লাসহ আশেপাশের জেলাগুলোতে মাদকাসক্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বাড়ছে মাদকের চোরাচালানও। সারাদেশের মতো কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে অপ্রতিরোধ্য গতিতে দেশে ঢুকছে বিপুল পরিমাণ মাদক। মাদক চোরাচালান অব্যাহত রাখতে প্রতিনিয়তই নেয়া হচ্ছে নানা রকম ফন্দি-ফিকির । ব্যবহার করা হচ্ছে অভিনব কৌশল। মাদক চোরাচালান দমনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ ও র‌্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থা কাজ করলেও চোরাচালানীদের থামানো যাচ্ছে না।কুমিল্লায় মাদক চোরাচালানীরা মাদক চোরাচালান করতে গিয়ে প্রতিনিয়তই পাল্টাচ্ছে তাদের কৌশল।

সাম্প্রতিক সময়ে মাদক পাচারে নতুন কৌশল নিয়েছে তারা। ভারত থেকে রাতে আসা গরুর পেটের সাথে বেঁধে আনা হয় গাঁজা। চোরাচালানীদের ভাষায় এটি হলো ক্যাটল কেরিং। বড় পেঁয়াজের ভিতরের অংশ ফেলে দিয়ে এর ভিতরে আনা হচ্ছে ইয়াবা ট্যাবলেট। আখকে লম্বা লম্বিভাবে দুই ফালি করে ভেতরের রসালো অংশকে ফেলে দিয়ে ভেতরে ইয়াবা ঢুকিয়ে আনা হচ্ছে এ দেশে। এ ছাড়াও কনডমের মধ্যে ইয়াবা ট্যাবলেট ভরে মানুষের মুখ দিয়ে পেটে ঢুকিয়ে এবং কনডমের মধ্যে ইয়াবা ট্যাবলেট ঢুকিয়ে পায়ূ পথে পেটে ঢুকিয়ে এ দেশে আনা হচ্ছে। এ ছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে মৌসুমী ফল তরমুজ, কাঁঠাল, লাউ, কুমড়ার ভেতর ঢুকিয়ে ভারত থেকে আনা হচ্ছে ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাঁজাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য। মিষ্টি ও শাড়ির প্যাকেট, গিফট বক্স, দুধের কলসী, পানির বদনায় করেও পাচার হয়ে আসছে বিভিন্ন ধরনের মাদক। সিএনজি অটোরিক্সা, বেবী টেক্সী, ছোট যানবাহনের ইঞ্জিনের নিচে, মোটর সাইকেলের সিটের নিচে ও যানবাহনের টুল বাক্স, ট্রাকের পাটাতন, ট্রাক ও বাসের চালকের সিটের নিচের বাক্স করে ভারত থেকে পাচার হয়ে আসছে এ সব মাদক। বিভিন্ন পথে ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।

এ ছাড়াও লম্বা বাঁশকে মাঝখানে চিরে দুই ফালি করে এর ভেতর ফেনসিডিল, রিকোডেক্স সিরাপ, মদ, হুইস্কি, বিয়ার বোতল ঢুকিয়ে আনা হচ্ছে। লেপ, তোষক ও বালিশের ভেতর করে আসছে গাঁজা ও অন্যান্য মাদক। পুরুষের মাথায় পরা টুপির ভেতরে আনা হচ্ছে ছোট আকারের নেশা জাতীয় দ্রব্য। পুরুষ ও মহিলাদের কাপড়ের নিচে, শরীরে বাঁধা (চোরাচালের ভাষায় বডি ফিটিং) অবস্থায় মহিলাদের বোরখা, পেটিকোটের ভেতর বিশেষ পকেটে করে আসছে মাদক। এ ছাড়াও বাজারের ব্যাগে করেও আসছে এ সব মাদক দ্রব্য। প্রতিদিনই পরিবর্তিত হচ্ছে মাদক পাচারের ধরণ। সীমান্ত প্রহরী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, র‌্যাব, পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যদের হাতে কৌশলে বিভিন্ন পন্থায় পাচার হয়ে আসা এসব মাদকের চালান হরহামেশাই ধরা পড়ছে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মাদক আটক হচ্ছে না। এসবের পেছনের কুশলীরা ধরা পড়ছে কমই। তবে মাদকসহ ধরা পড়াদের অধিকাংশই বহনকারী বা কেরিয়ার। যারা নেহায়েত পেটের দায়ে সামান্য টাকার বিনিময়ে বহন করছে এসব সর্বনাশা মাদক। কিন্তু এ ব্যবসায় জড়িত হোতারা থাকছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। আইনের লম্বা হাতও তাদের ধরতে ব্যর্থ হচ্ছে। কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা মাদকদ্রব্যের মধ্যে রয়েছে হেরোইন, গাঁজা, ফেনসিডিল, হুইস্কি, বিয়ার, বিভিন্ন ধরনের মদ, রিকোডেক্স সিরাপ, ইয়াবা, সেনেগ্রাসহ নানা প্রকার মাদক ও যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট এবং বিভিন্ন ধরনের নেশা জাতীয় ইনজেকশান। আটক করা মাদক প্রায়ই ধ্বংস করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে মাদক দ্রব্য অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক, মোহাম্মদ মাঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, কিছুদিন আগেও ইয়াবা ট্যাবলেট মায়নমার থেকে কক্সবাজার হয়ে চট্টগ্রাম দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার হতো। বর্তমানে মিয়ানমার থেকে সরাসরি ভারতের ত্রিপুরা সীমান্ত দিয়ে কুমিল্লায় ঢুকছে। কুমিল্লা সীমান্তে মাদক চোরাচালান রোধে বি জি বি কাজ করছে। এর সাথে র‌্যাব, পুলিশ এবং আমরাও কাজ করছি। চোরাকারবারীরা নতুন নতুন কৌশলও অবলম্বন করছে। প্রতিনিয়তই তারা কৌশল পাল্টিয়ে অবলম্বন করছে নতুন নতুন কৌশল। তবে তারা যত কৌশল ও পদ্ধতি অবলম্বন করুক না কেন আমরাও পালটা কৌশল নিচ্ছি। মাদকসহ তাদেরকে ধরে ফেলছি। মাদক দ্রব্য চোরাচালান প্রতিরোধে আমাদের প্রয়াস সার্বক্ষণিক থাকবে। আমাদের সীমিত লোকবল দিয়ে তা পুরোপুরিরভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। এ জন্য জনগণকেও সচেতন হতে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads