• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
রমরমা ‘চিকিৎসাবাণিজ্য’ ডা. বেলায়েত হোসেনের

প্রতীকী ছবি

অপরাধ

উচ্চতর যোগ্যতার ভুয়া তথ্য

রমরমা ‘চিকিৎসাবাণিজ্য’ ডা. বেলায়েত হোসেনের

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯

চিকিৎসাক্ষেত্রে উচ্চতর শিক্ষাগত ও চিকিৎসা পেশার যোগ্যতাসংক্রান্ত একাধিক ভুয়া তথ্য দিয়ে অভিনব জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন একজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক। রমরমা চিকিৎসাবাণিজ্য করতে এই তথ্য জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। এতে তার রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বেড়েছে মাসিক আয়। অভিনব এ কৌশল কাজে লাগানো ওই চিকিৎসকের নাম ডা. মো. বেলায়েত হোসেন খান। বর্তমানে তিনি রাজধানীর গ্রিনরোডে কমফোর্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রোগী দেখছেন নিয়মিত।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডা. মো. বেলায়েত হোসেনের পিএইচডি ডিগ্রি বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) স্বীকৃত নয়। কিন্তু বাণিজ্যের প্রসারে রোগীর সংখ্যা বাড়াতে তিনি তার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সনদে রাশিয়া থেকে পিএইচডি করা ও বিএমডিসির স্বীকৃতির উল্লেখ করছেন। এ ছাড়া তিনি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে অবসরে গেলেও রোগীদের দেওয়া ব্যবস্থাপত্রসহ অন্যান্য কাগজপত্রে ‘অবসরপ্রাপ্ত’ উল্লেখ করছেন না। অন্যদিকে তিনি সল্লিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয়প্রধান ছিলেন। কিন্তু কমফোর্টে তার ভিজিটিং কার্ডে ফরেনসিকের অধ্যাপক থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেননি। তিনি তার ভিজিটিং কার্ডে নিজের পরিচয় উল্লেখ করছেন লিভার, গ্র্যাস্ট্রো-এন্টারোলজি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হিসেবে। পাশাপাশি ভিজিটিং কার্ডে অবসরপ্রাপ্ত না লেখায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ধারণা, তিনি হয়তো এখনো সরকারি এই মেডিকেল কলেজে লিভার, গ্র্যাস্ট্রো-এন্টারোলজি ও মেডিসিন অধ্যাপক হিসেবে কাজ করছেন।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের সাবেক এই অধ্যাপকের তথ্য জালিয়াতি কাণ্ডে চিকিৎসক মহলে ব্যাপক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। তার সাবেক ও বর্তমান সহকর্মীরা বলছেন, চিকিৎসাপেশার একজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকের থেকে এমনটি আশা করা যায় না। বিষয়টির তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকরা এমনটা করলে নতুনরাও অসৎ পথে ধাবিত হবে।

বাংলাদেশের খবরের সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের কথা হয় ডা. বেলায়েত হোসেন খানের সঙ্গে। আলাপকালে তিনি জালিয়াতির প্রসঙ্গগুলো স্বীকার করলেও পুরো চিকিৎসাপেশার অনিয়মের প্রসঙ্গ টানেন। তিনি বলেন, শুধু আমিই এমনটা করছি না। অনেক চিকিৎসকই এটা করছেন। অনেকের ব্যাপারে খোঁজ নিলে এরকম অনেক অনিয়ম বেরিয়ে আসবে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেলায়েত হোসেন লিভার, গ্র্যাস্ট্রো-এন্টারোলজি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। কিন্তু কার্যত তার পিএইচডি ডিগ্রি বিএমডিসি অনুমোদন দেয়নি। বিএমডিসি থেকে এরই মধ্যে তাকে তলব করা হয়েছে। তবে তলবে হাজির হচ্ছেন না তিনি।

বাংলাদেশের খবরের পক্ষ থেকে বেলায়েত হোসেনের কাছে জানতে চাওয়া হয়, রাশিয়ার কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি তিনি ডিগ্রি অর্জন করেছেন—এ প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি এই চিকিৎসক। তিনি জানান, ২০০৮ সালে তিনি এই ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তবে তার পিএইডি ডিগ্রির সনদ আসলে তিনি সঠিকভাবে অর্জন করেছেন কি না-তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে। 

বিএমডিসি অনুমোদন দিয়েছে কি না—এ প্রশ্নে বেলায়েত হোসেন বলেন, বিএমডিসি অনেক ডিগ্রি অনুমোদন দেয় না অনেকের। তারাও দেদার লিখছেন। আমি লিখেছি বলে শুধু ভুল হবে কেন। অন্যদেরও ধরেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চিকিৎসা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ মেডিকোলিগ্যাল। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখার জন্য এই বিভাগের চিকিৎসকদের খুব বেশি কদর নেই। ফলে এই নৈতিক স্খলনের আশ্রয় নিয়েছেন বেলায়েত। এর মাধ্যমে বেড়েছে তার রোগীর পরিমাণ। কিন্তু সহকর্মীদের মন্তব্য, যে অধ্যাপক শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা পড়িয়েছেন তার এমন স্খলন অবশ্যই শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

দ্য মেডিকোলিগ্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ নামে এই বিভাগের চিকিৎসকদের একটি সংগঠন রয়েছে। এই সংগঠনের কয়েকজন বলেন, বেলায়েত হোসেন খানের তথ্য জালিয়াতির কাণ্ডে আমরা লজ্জিত। সংগঠনটির নেতারা এ ব্যাপারে তাকে সতর্কও করেছেন। কিন্তু তিনি কারো কথাই আমলে নিচ্ছেন না। 

জানতে চাইলে সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. সেলিম রেজা বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ডা. মো. বেলায়েত হোসেন খানকে সংগঠনের পক্ষে সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু তিনি কারো কথাই শুনছেন না। তার এই ঘটনায় আমরা বিব্রত। আইনি প্রক্রিয়ায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি এখন সামনে এসেছে। বিএমডিসি তার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারে। ডা. বেলায়েত যা করছেন তা রোগীদের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads