• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
বন্দিদের স্বজনের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র

আটককৃত প্রতারক রানু আক্তার (৩৫)

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

অপরাধ

বন্দিদের স্বজনের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র

  • কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৪ জানুয়ারি ২০২০

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেন্দ্রিক একটি প্রতারক চক্র বন্দিদের স্বজনদের কাছ থেকে নানা উপায়ে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা পয়সা।

আজ শনিবার এমন একটি প্রতারক চক্রের এক নারী সদস্যকে আটক করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।

প্রতারক নারীর নাম রানু আক্তার (৩৫)। পরে তাকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। প্রতারনার শিকার ভুক্তভোগী নাসিমা আক্তার এ ঘটনায় রানু সহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামী করে দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

নাসিমা আক্তার জানান, তার বাড়ি সাভারের হেমায়েতপুর এলাকায়। জমিজমা সংক্রান্ত একটি মামলায় তার ছোট ভাই হুমায়ুন কবিরকে কয়েকদিন আগে গ্রেফতার করে সাভার থানা পুলিশ। এরপর থেকে হুমায়ুন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। গত বৃহস্পতিবার ছোট ভাইকে দেখতে তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আসেন। এসময় এক মহিলা তার কাছে এসে কান্নাজড়িত কন্ঠে তার মোবাইল দিয়ে একটি কল করার অনুরোধ করেন। ওই মহিলা জানান, তার স্বামী কারাগারে বন্দি। তাকে দেখতে এসেছেন। কিন্তু মোবাইলের টাকা শেষ হয়ে গেছে। বাসায় জরুরী একটি ফোন করা দরকার। একথা বলে নাসিমা আক্তারের মোবাইল নিয়ে কোথাও ফোন দেন। এরপর তিনি সাভারে ফিরে যান।

নাসিমা আক্তার আরও জানান, শুক্রবার কারাগারের লোক পরিচয় দিয়ে তার মোবাইলে ফোন করে এক ব্যক্তি। এসময় ওই ব্যক্তি বলেন, ‘আপনার ভাই কারাগারের ভেতরে অন্য অসামাীদের সঙ্গে মারামারি করেছে। তার বিরুদ্ধে নতুন করে একটি মামলা হবে। পুলিশে খবর দেয়া হয়েছে। পুলিশ আসলে হুমায়ুনকে তাদের হাতে তুলে দেয়া হবে। যে মামলা দেয়া হচ্ছে এতে ৭ বছরেও সে জামিন পাবে না। এমনকি আপনার ভাইকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বান্দরবন কারাগারে চালান করে দেয়া হবে।’ ওই ব্যক্তি নাসিমা আক্তারকে আরও বলেন, এসব থেকে ভাইকে যদি রক্ষা করতে চান দ্রুত বিকাশ করে ৫০ হাজার টাকা পাঠান। এত টাকা পাঠাতে অপারগতা প্রকাশ করেন নাসিমা আক্তার। অনেক কথাবার্তার পর ভাইকে এ বিপদ থেকে রক্ষায় নাসিমা আক্তার ওই প্রতারকের দেয়া বিকাশ নাম্বারে ১০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন। শনিবার সাভার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জে ভাইকে দেখতে আসেন নাসিমা। ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাত শেষে জানতে পারেন তার সঙ্গে কোন মারামারির ঘটনা ঘটেনি। তিনি প্রতারিক হয়েছেন। সাক্ষাত শেষে কারা ক্যান্টিনের সামনে ওই মহিলাকে (যিনি নাসিমার মোবাইল দিয়ে কল করেছিল) দেখতে পান নাসিমা। এসময় তাকে ধরে ফেলেন তিনি। হৈচৈ শুনে কারা কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে রানু আক্তার নামের ওই নারীকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

পুলিশ হেফাজতে থাকা রানু আক্তার প্রতারনার কথা স্বীকার করে জানান, তার কাজ হচ্ছে ছলে বলে কৌশলে বন্দির সঙ্গে সাক্ষাতে আসা স্বজনদের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করা। টার্গেট করা স্বজনদের কাছ থেকে মুঠোফোন দিয়ে পরিবারের কথা বলে তিনি ফোন করে চক্রের অন্য সদস্যের কাছে। এতে করে সহজেই স্বজনের মোবাইল নাম্বারটি তাদের হাতে চলে আসে। পরে চক্রের সদস্যরা বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে স্বজনদের বাধ্য করেন বিকাশে টাকা পাঠাতে। ১২টি মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করতে পারলে তিনি ৫ হাজার টাকা কমিশন পান।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার শিল্পী আক্তার বলেন, কারারক্ষীদের কাছ থেকে খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এসময় এক নারী প্রতারনার শিকার হয়েছেন জানিয়ে অপর এক নারীকে আটক করেছেন বলে জানান। আমরা আটক নারীকে অফিসে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি প্রতারনার কথা স্বীকার করেন। পরে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়।

এ ব্যাপারে দক্ষিন থানার ওসি শাহ জামান বলেন, জেলখানা থেকে এক প্রতারক মহিলা সদস্যকে আটক করে থানায় প্রেরন করেছেন। ভুক্তভোগি নাসিমা আক্তার সুমি নামে বাদী হয়ে মামলা করেছেন। আসামীদের আটকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads