• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
ছাত্রীকে হত্যাও করতে চেয়েছিল ধর্ষক মজনু

ছবি : সংগৃহীত

অপরাধ

ছাত্রীকে হত্যাও করতে চেয়েছিল ধর্ষক মজনু

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৯ জানুয়ারি ২০২০

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার মাদকাসক্ত মজনু (৩০) একজন ‘সিরিয়াল রেপিস্ট’ বা ক্রমিক ধর্ষক। ধর্ষণের পর ওই ছাত্রীকে হত্যার চেষ্টাও চালায় সে। গতকাল ভোরে ঘটনাস্থলের অদূরে শেওড়া থেকে মজনুকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছে এলিট ফোর্স র্যাব। ধর্ষককে আটক করতে নেওয়া হয় প্রযুক্তির সহায়তা। ভিকটিম ধর্ষককে শনাক্ত করেছেন। ধর্ষকের ভাঙা দাঁত তাকে চিহ্নিত করতে সহায়তা করেছে। ঘটনার রাতে ওই ছাত্রীকে নির্জন ফুটপাত থেকে পাঁজাকোলা করে তুলে পাশের ঝোপে নিয়ে ধর্ষণ করে মজনু। এ সময় দীর্ঘ তিন ঘণ্টা সে আটকে রাখে মেয়েটিকে। ভিকটিম ও গ্রেপ্তার মজনুর বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানান র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম। মজনুকে আটকের পর ভিকটিমের মাধ্যমে শনাক্ত করে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয় বলেও জানান তিনি।

গতকাল বুধবার ভোরে মজনুকে গ্রেপ্তারের পর দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে সারোয়ার বিন কাশেম এসব তথ্য জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন র্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল শফী বুলবুল।

র্যাবের গোয়েন্দাপ্রধান সারোয়ার বলেন, মজনু ধর্ষণের পর মেয়েটিকে হত্যার চেষ্টাও চালায়। তবে মেয়েটিকে অজ্ঞান করতে কোনো ক্লোরোফর্ম ব্যবহার করেনি সে।

তিনি বলেন, প্রযুক্তির সহযোগিতায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শেওড়া রেলক্রসিং এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই এলাকায় ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশনের পরিত্যক্ত ওয়াগনে থাকত মজনু।

সারোয়ার বিন কাশেম জানান, মজনুর বাড়ি নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার জাহাজমারা গ্রামে। প্রায় ১০ বছর আগে ঢাকায় আসা মজনু ঢাকার বিমানবন্দর, শেওড়া এলাকায় কখনো দিনমজুর, কখনো হকারের কাজ করত। তবে এসব পেশার আড়ালে সে চুরি-ছিনতাই করত। আবার মাদকাসক্তও ছিল। এর চেয়েও ভয়ংকর ঘটনাও ঘটাতো মজনু। সেটি হচ্ছে ধর্ষণ। ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী নারীদের সে টার্গেট করত। এ ধরনের নারীদের কৌশলে নিয়ে শেওড়া এলাকায় রাখত। এরপর এই নারীদের ধর্ষণ করত মজনু। এভাবে পাঁচ-ছয়জনকে ধর্ষণ করেছে। সে একজন ‘সিরিয়াল রেপিস্ট’। বেশ কিছুদিন আগে তার স্ত্রী মারা যায়। পরে আর বিয়ে করতে পারেনি।

র্যাব পরিচালক বলেন, ঘটনার দিনও ধর্ষণের আগে শিকারের অপেক্ষায় মজনু ওই এলাকায় ওঁৎ পেতে ছিল। তার আগে সে কুর্মিটোলা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য গিয়েছিল। পরে ওই নির্জন জায়গায় মজনু অবস্থান নেয় কাউকে না কাউকে শিকারের জন্য। এ অবস্থায় মজনু ভিকটিককে পেয়ে তার পিছু নেয়।

ঘটনা ঘটানোর পর সে নরসিংদী চলে যায় এবং পরে ঢাকায় ফিরে এসে মঙ্গলবার সারা দিন বনানী স্টেশনে ছিল জানিয়ে র্যাব পরিচালক বলেন, ঘটনার পর মজনু ঘটনাস্থল থেকে চলে যায় রাস্তার ওপারে শেওড়ার রেলস্টেশন এলাকায়। সেখানে অরুণা নামের এক নারীর কাছে ভুক্তভোগী ছাত্রীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া মোবাইল ফোনটি বিক্রি করে। স্যামসাং জে-৭ মডেলের ফোনটির জন্য পনেরোশ টাকা দাবি করলেও অরুণা ৫০০ টাকায় কিনে নেন সেটি। এর মধ্যে ওই নারী ১০০ টাকা বাকি রেখে নগদ ৪০০ টাকা দেন মজনুকে। এরপর মজনু ওই রাতে পাড়ি দেন নরসিংদী জেলায়। নরসিংদী রেলস্টেশন এলাকায় ঘটনার পরদিন সোমবার পুরো দিন কাটিয়ে দেয় সে। সেখান থেকে মঙ্গলবার সকালে আবার ঢাকায় চলে আসে। এরপর বুধবার ভোরে ধরা পড়ে মজনু। এ ঘটনায় এত কিছু হয়ে যাচ্ছে, আটকের আগপর্যন্ত সে অবগত ছিল না।

ব্রিফিংয়ে লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, মোবাইলক্রেতা অরুণাকে আটক করা হলে তিনি জানান, কেনার সময় মোবাইল ফোনটি বন্ধ ছিল। মেরামতের জন্য অরুণা সেটি খায়রুল নামের একজনের কাছে দিয়েছিলেন। পরে খায়রুলকেও আটক করা হয়। অরুণা ও খায়রুলের কাছেই মজনুর শারীরিক গঠনসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পাওয়া যায়। এই তথ্যের ভিত্তিতে মজনুকে আটক করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মজনু তার এসব অপকর্ম ও হিংস্রতার কথা স্বীকার করেছে। ধরা পড়ার পরও মজনু নির্বিকার ছিল।

র‍্যাবের পরিচালক সারওয়ার বলেন, মজনু একজন বিকৃত মানসিকতার লোক। তাকে শনাক্ত করেছেন ধর্ষণের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আটকের পর গ্রেপ্তার ব্যক্তির ছবি ধর্ষণের শিকার ছাত্রীকে দেখানো হয়েছে। তিনি তাকে ধর্ষক বলে শনাক্ত করেছেন। আমি মেয়েটির সঙ্গে কয়েকবার কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, আমি দুনিয়ার সমস্ত মানুষের চেহারা ভুলব, কিন্তু এর চেহারা ভুলব না।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, মজনুর মুখের সামনে দুটি দাঁত ভাঙা ছিল। ১২ বছর আগে ট্রেন থেকে পড়ে দাঁত দুটি ভেঙে যায়। ধর্ষণের শিকার মেয়েটির দেওয়া বিবরণের সঙ্গে অরুণা ও খায়রুলের দেওয়া মজনুর চেহারার বিবরণ মিলে যায়। ভিকটিম এবং ওই দুজনের বক্তব্যের সূত্র ধরে র্যাব নিশ্চিত হয় আসল অপরাধী মজনু। এরই সূত্র ধরে মজনুকে আটকের জন্য অভিযান শুরু করে র‍্যাব।

মজনুকে গ্রেপ্তারের পর মেয়েটির অন্যান্য সামগ্রী তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ঢাবির ওই ছাত্রী গত রোববার রাতে কুর্মিটোলা এলাকায় ধর্ষণের শিকার হন। তিনি বান্ধবীর বাসায় যাচ্ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে কুর্মিটোলা বাস স্টপেজে নেমে অন্য যানবাহনের জন্য ফুটপাত ধরে হাঁটছিলেন। তখন হঠাৎ তাকে পেছন থেকে মুখ চেপে ধরে ফুটপাতের পাশের ঝোপে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই ধর্ষণের শিকার হন ওই ছাত্রী। ধর্ষণের শিকার ছাত্রী বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে চিকিৎসাধীন।

ঢামেকে ভর্তির পর সেখানকার ফরেনসিক মেডিসিনের প্রধান জানিয়েছিলেন মেয়েটিকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে।

পরে সোমবার সকালে ধর্ষণের এ ঘটনায় ছাত্রীর বাবা অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেন। এদিকে মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে মামলাটির দায়িত্ব ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখাকে (ডিবি) দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সূত্র।

ধর্ষণের এ ঘটনায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ-মানববন্ধন হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads