• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
প্রতিবন্ধী কিশোরী ধর্ষণের প্রতিবাদ করায় খুন হন দোকানি নাছির

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

অপরাধ

প্রতিবন্ধী কিশোরী ধর্ষণের প্রতিবাদ করায় খুন হন দোকানি নাছির

  • চান্দিনা (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৩ জানুয়ারি ২০২০

কুমিল্লার চান্দিনায় মহাসড়কে ব্যবসায়ীর ছিন্নভিন্ন মরদেহ উদ্ধারের ঘটনার ১০দিন পর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। ঘটনার সঙ্গে জরিত দুইজনকে আটক করা হয়। তারা হলেন- উপজেলার নাওতলা গ্রামের মৃত সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে সানাউল্লাহ (২০) এবং বাখরাবাদ গ্রামের মাদুল মিয়ার ছেলে মোফাজ্জেল ওরফে মোয়াজ্জেম (২৪)।

ঘটনার বর্ণনা করে আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ মো. নূরুল ইসলাম।

তিনি জানান, বিভৎস এই খুনের ঘটনাটি ছিল একেবারেই ক্লু-লেস। আমাদের কাছে সামান্য একটু রক্তের দাগ ছাড়া আর কোনো ক্লু ছিলো না। তারপরও থানা পুলিশ, জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশসহ আমাদের একাধিক টিমের অক্লান্ত পরিশ্রম আর নিরবিচ্ছিন্ন তদন্তে অবশেষে আমরা সফল হয়েছি। এটা আমাদের অনেক বড় অর্জন।

হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণে তিনি জানান, সানাউল্লাহ ও মোয়াজ্জেম একই এলাকার বাসিন্দা। তারা দুজনেই ছিল ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক। ঘটনার দিন অর্থাৎ ১২ জানুয়ারি রাত সাড়ে দশটার সময় সানাউল্লাহ নিহত নাছিরের দোকানে চা খাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। সে দোকানের কাছাকাছি গেলে অপর আসামিরা মোয়াজ্জেমকে তার সঙ্গে ডেকে নেয়। দোকানে যাওয়ার পরে একই গ্রামের একটি প্রতিবন্ধী মেয়ের সঙ্গে অবৈধভাবে শারীরিক সম্পর্ক করে জরিমানা দেওয়ার ঘটনায় নাছির  সানাউল্লাহকে ভর্ৎসনা করে। এ সময় তাদের দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরবর্তীতে সানাউল্লাহ একটি সিগারেট ধরিয়ে নাছিরের দোকানদার একটু আড়ালে যায় এবং মোয়াজ্জেমকে ডাক দেয়। ওই সময়ই তারা দু'জনে মিলে নাছিরকে হত্যার পরিকল্পনা করে। সানাউল্লা বলে যখন সে নাসিরের উপর আক্রমণ করবে, তখন মোয়াজ্জেম দোকানের বিদ্যুতের লাইন খুলে  দিবে।

পুলিশ সুপার সৈয়দ মাে. নূরুল ইসলাম আরো জানান, পরিকল্পনানুযায়ী ওইদিন রাত ১২টা থেকে সাড়ে ১২ টার দিকে আসামী সানাউল্লাহ নাসিরের দোকানে যায়। এ সময় মোয়াজ্জেম তার দোকানের বৈদ্যুতিক লাইনের তার খুলে দেয়। পরে সানাউল্লাহ নাসিরের দোকানে থাকা একটি বটি দিয়ে তার মাথায় কোপ দেয়। এ সময় নাছির চিৎকার করে ওঠে এবং জীবন বাঁচানোর জন্য দোকান থেকে দৌঁড় দেয়। এতে সে মহাসড়কের উপরে চলে গেলে অজ্ঞাত একটি ট্রাক/বাস তাকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এরপর আসামীরা ওই রক্তাক্ত বটি নাছিরের দোকানের চা ধোয়ার পানিতে ধুয়ে পরিস্কার করে এবং তারা বাড়িতে চলে যায়। পরবর্তীতে ধারণা করা হচ্ছে সারারাত মহাসড়কের উপর দিয়ে চলাচল করা গাড়ির চাকায় একের পর এক পিষ্ট হয়ে নাছিরের মরদেহটি ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আসামীরা পুরো ঘটনাটি স্বীকার করেছে বলে জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) সাখাওয়াত হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আজিমুল আহসান, নাজমূল হাসান রাফি, চান্দিনা থানা অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মো. আবুল ফয়সল প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নাওতলা আলিম মাদ্রাসা সংলগ্ন একটি মার্কেটে চা ও পিঠার ব্যবসা করত নাওতলা গ্রামের রবিউল্লাহর ছেলে নাছির উদ্দিন। গত ১২ জানুয়ারি রাতের কোন এক সময়ে হত্যাকারীরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। পরদিন সকালে মহাসড়কের দেড় কিলোমিটার জুড়ে মরদেহের বিচ্ছিন্ন অংশ উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহ উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ সড়ক দুর্ঘটনা বলে সন্দেহ করলেও নিহতের পিতা রবিউল্লাহ দাবী করেছেন তার ছেলেকে খুন করা হয়েছে। প্রমাণ হিসেবে তিনি দোকানে রক্তের চিহ্ন দেখান পুলিশকে। সোমবার রাতে নিহতের পিতা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে চান্দিনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে মাঠে নামে চান্দিনা থানা পুলিশসহ জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি), সিআইডি ও পিবিআই।গত বুধবার ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে  চান্দিনা এলাকা থেকে মোয়াজ্জেমকে আটক করতে সক্ষম হয় পুলিশ। আর মোয়াজ্জেম এর দেওয়া তথ্যমতে জানা যায় সানাউল্লাহ ও মোয়াজ্জেমই তাকে হত্যা করে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads