• মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪২৮
দুই বছরে ৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারকরা

প্রতীকী ছবি

অপরাধ

ব্যাংক লোনের জন্যই ভুয়া এনআইডি

দুই বছরে ৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারকরা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

ব্যাংকের লোনের জন্য ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করাই ছিল চক্রটির প্রধান কাজ। চক্রটি গত দুই বছরে ৬০ থেকে ৭০টি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে ব্যাংক থেকে লোনের মাধ্যমে অন্তত ৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতি লোনে ১০ পার্সেন্ট করে তারা কমিশন নিয়েছে। এতে ৫০ কোটি টাকার কমিশনে প্রায় ৫ কোটি টাকা তারা হাতিয়ে নিয়েছে। আর এ টাকা দিয়েই নিজেদের গাড়িবাড়িও করেছে প্রতারক চক্রের কয়েকজন সদস্য।

নির্বাচন কমিশনের দুই ডাটা এন্ট্রি অপারেটরসহ প্রতারক চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডের প্রথম দিনে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার রাজীব আল মাসুদ সাংবাদিকদের বলেন, আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তারা কাকে কাকে ভুয়া এনআইডি তৈরি করে দিয়েছিল, তা জানারও চেষ্টা চলছে।

এদিকে প্রতারক চক্রের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন এমন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, এই চক্রের মূল হোতা সুমন পারভেজ ও মজিদ। তারা গ্রাহক খুঁজে এনে নির্বাচন কমিশনের দুই কর্মী সিদ্ধার্থ ও আনোয়ারুলের কাছে নিয়ে যেত। তাদের তৈরি করে দেওয়া জাল এনআইডি দিয়ে মিল্টন নামে এক ব্যক্তি সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকের পুরান ঢাকার নর্থ সাউথ রোডের শাখা থেকে ৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। ইয়াছির নামে এক ব্যক্তি সিটি ব্যাংকের প্রগতি সরণি শাখা থেকে ১০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। সালেহ আহমেদ নামে এক ব্যক্তি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) থেকে ১৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। আবদুল মজিদ নামে এক ব্যক্তি এনআরবি ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ২০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। গ্রেপ্তার আবদুল্লাহ আল মামুন নিজেই ভুয়া এনআইডি দিয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ৯ লাখ ২৫ হাজার ও সিটি ব্যাংকের নিকেতন শাখা থেকে ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছে।

কর্মর্তারা বলছেন, এই চক্রের মাধ্যমে ভুয়া এনআইডি তৈরি করে আশিক নামে এক ব্যক্তি ট্রাস্ট ব্যাংক থেকে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা, জাভেদ নামে এক ব্যক্তি লঙ্কাবাংলার ধানমন্ডি শাখা থেকে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা ও জহুরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি মেঘনা ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। এরা ছাড়াও বাকি যারা ভুয়া বা জাল এনআইডি নিয়েছে, তারা প্রত্যেকেই কমবেশি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে। সব মিলিয়ে জালিয়াতি করে নেওয়া ঋণের পরিমাণ প্রায় ৫০ কোটি টাকা হবে বলে জানিয়েছে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা।

আলোচিত এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আমিরুল ইসলাম বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে একের পর এক নাম বেরিয়ে আসছে। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য যাচাইবাছাই করে যারা ভুয়া এনআইডি নিয়েছে, তাদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, এই চক্রের এক হোতা সুমন আগে আরএম গ্রুপে চাকরি করত। মজিদ ছিল ব্যবসায়ী। বছর দুয়েক আগে তারা নির্বাচন কমিশনের গুলশান ও খিলগাঁও কার্যালয়ের দুই ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের মাধ্যমে জাল এনআইডি তৈরির সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। যারা একবার ব্যাংক ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়েছে, তাদের সাধারণত দ্বিতীয়বার কোনো ব্যাংক ঋণ দিতে চাইত না। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এনআইডির মাধ্যমে ঋণ গ্রহীতার তথ্য সংরক্ষণ করত। এ কারণে এই চক্রটির মাধ্যমে ঋণ খেলাপি অনেকেই ভুয়া এনআইডি তৈরি করে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিত।

 গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এই চক্রের সঙ্গে কোনো কোনো ব্যাংকের কর্মকর্তাও জড়িত রয়েছে বলে তারা ধারণা করছেন। জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানিয়েছে, ইয়াছির নামে এক ব্যক্তি সিটি ব্যাংকের প্রগতি সরণি শাখা থেকে ১০ লাখ টাকা ঋণ নেওয়ার সময় ওই ব্যাংকের আরিফ নামে এক কর্মকর্তা ইয়াছিরকে ঋণ পেতে সহায়তা করে। এ কারণে আসামিদের কাছ থেকে ব্যাংক কর্মকর্তাদের কেউ এই চক্রের সঙ্গে জড়িত কিনা তাও জানার চেষ্টা চলছে।

ডিবিসূত্র জানায়, প্রতারক চক্রের মূল হোতা সুমন ও মজিদ জালিয়াতি করে ঢাকায় গাড়িবাড়িও কিনেছে। সুমনের উত্তরায় নিজের ফ্ল্যাট রয়েছে। মজিদের মিরপুরসহ রাজধানীতে একাধিক ফ্ল্যাট ও গাড়ি রয়েছে। দুই বছর ধরে তারা মূলত জাল এনআইডি তৈরির কাজই করত।

প্রসঙ্গত, গত শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে মিরপুরের চিড়িয়াখানা রোড এলাকার ডি ব্লক থেকে নির্বাচন কমিশনের দুই ডাটা এন্ট্রি অপারেটরসহ প্রতারক চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তারা হলো নির্বাচন কমিশনের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর সিদ্ধার্থ শংকর সূত্রধর (৩২) ও আনোয়ারুল ইসলাম (২৬); দুই দালাল সুমন পারভেজ ও মজিদ। এ ছাড়া আবদুল্লাহ আল মামুন নামে এক ব্যক্তি নিজের নামে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে ব্যাংক ঋণ নিয়ে স্ত্রীর নামে আরেকটি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র করতে গিয়ে হাতেনাতে গ্রেপ্তার হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads