• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
নৌপথে বাড়ছে ডাকাতি

প্রতীকী ছবি

অপরাধ

নৌপথে বাড়ছে ডাকাতি

  • মোহসিন কবির
  • প্রকাশিত ৩১ ডিসেম্বর ২০২০

বর্ষা মৌসুমে নৌপথের যাত্রীদের বিরূপ আবহাওয়ায় ঝড়ের কবলে পড়ার আতঙ্ক তাড়া করে ফেরে। তাই নিরাপদ নৌভ্রমণের জন্য শীতকালকে বেছে নেন অনেকেই। কিন্তু এই সময়টাতে ডাকাতের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারানোর ভয় থাকে। এ যেন সিংহের হাত থেকে রেহাই পেয়ে বাঘের মুখে পড়ার মতো অবস্থা।

সম্প্রতি শীতলক্ষ্যা, মেঘনা, ধলেশ্বরী ও বুড়িগঙ্গা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ডাকাতির খবর পাওয়া গেছে। যাত্রীদের জিম্মি করে মারধরের পাশাপাশি বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায় ডাকাতরা। এমনকী একটি নৌযানে একাধিকবার ডাকাতির ঘটনাও ঘটছে। যাত্রীবাহী লঞ্চের পাশাপাশি ভাসমান তেলের পাম্প এবং পণ্যবাহী জাহাজগুলোকে টার্গেট করছে ডাকাতদল।

গত ২১ ডিসেম্বর ডাকাতের কবলে পড়ে যাত্রীবাহী লঞ্চ এমবি শাহ আলী। গত ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা চাঁদপুরের মতলবগামী ‘এমভি হূদয়’ যাত্রীবাহী লঞ্চে দ্বিতীয় দফা ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এর আগে একই স্থানে গত ১৯ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা ‘এমভি মকবুল-২’ লঞ্চে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া, গত ১৩ অক্টোবর গভীর রাতে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসমান তিনটি তেলের পাম্পে ডাকাতি হয়।

গত ২১ ডিসেম্বর সোমবার সকালে শরীয়তপুরের মান্দারহাট এলাকায় পদ্মানদীতে এমভি শাহআলী-৪ লঞ্চে ডাকাতির ঘটনায় প্রায় ৬০ জন যাত্রীর কাছ থেকে মোবাইল সেট, নগদ অর্থ, স্বর্ণালঙ্কারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করা হয়। এ সময় ডাকাতদের হাত থেকে রেহাই পাননি লঞ্চে থাকা সুরেশ্বর নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই জয়নালও। তার মোবাইল ফোন সেট ও টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয় ডাকাতদল। পালিয়ে যাওয়ার সময় লঞ্চের যাত্রীরা বিল্লাল নামের এক ডাকাত সদস্যকে আটক করে পুলিশে দেয়। আটক ডাকাত সদস্য বিল্লাল হোসেন নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলার পাইনাদী এলাকার আক্কাস আলীর ছেলে।

এমভি শাহআলী-৪ লঞ্চের মালিক আক্তার হোসেন জানান, শরীয়তপুরের সুরেশ্বর ঘাট থেকে লঞ্চটি চাঁদপুরে যাওয়ার পথে মান্দারহাট এলাকায় দুটি স্পিডবোটে করে ১৫-২০ জন ডাকাত দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র ও রামদাসহ ডাকাতরা গতিরোধ করে লঞ্চে উঠে পড়ে। যাত্রীদের জিম্মি করে মারধর করে এবং বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায় তারা।

নৌপথে ডাকাতির ঘটনায় বেড়ে যাওয়ায় আতংকিত যাত্রী ও লঞ্চমালিকরা। পাশাপাশি আতংকে রয়েছেন নৌপথের মালামাল পরিবহনকারী ব্যবসায়ীরা। অভিযোগ উঠেছে, এসব ঘটনায় লঞ্চমালিক বা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হলেও আসামিদের গ্রেপ্তারের খবর কম। এক-দুইজন ডাকাত সদস্য গ্রেপ্তার হলেও বাকিরা রয়ে যাচ্ছে অধরা। 

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল সংস্থা নারায়ণগঞ্জ জোনের চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান খান বাদল বলেন, ‘যে হারে ঘনঘন ডাকাতি বেড়েছে, গত ২৫ বছরেও এমনটা হয়নি। আগে শুধু থানা পুলিশ ছিল, এখনতো নৌপুলিশ ও কোস্ট গার্ড আছে, সাথে থানা পুলিশের ফাঁড়ির সংখ্যাও বেড়েছে। এরপরও এমন ঘটনায় আমরা শংকিত, বিস্মিত।’

তবে নদীপথে ৩টি ঘটনার বাইরে আর কোনো ডাকাতির ঘটনা জানা নেই নৌপথের নিরাপত্তায় নিয়োজিত নৌপুলিশের। এ প্রসঙ্গে নৌপুলিশ প্রধান উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আতিকুল ইসলাম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘এ পর্যন্ত ৩টি ঘটনা হয়েছে এবং এসব ঘটনায় মামলাও হয়েছে। এর বাইরে যদি আর কোনো ঘটনা হয়ে থাকে সেগুলো আমাদের জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এমভি শাহআলী-৪ লঞ্চে ডাকাতির পর নৌপুলিশের এসপি কামরুজ্জামান জানিয়েছিলেন, মূলত শীতকালে কুয়াশার কারণে নৌপথে ডাকাতি বেড়ে যায়। তবে এ বিষয়ে নৌপুলিশ প্রধান বলছেন ভিন্ন কথা। ডাকাতির ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিআইজি আতিক বলেন, নদীপথে বালুবাহী জাহাজসহ নৌযানগুলোতে তাদের তৎপরতার কারণে চাঁদাবাজি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এ কারণে হয়তো ডাকাতির ঘটনা বেড়েছে।

তিনি বলেন, ‘কমন কিছু চাঁদাবাজি ছিল বালুর ট্রাক থেকে ডাকাতির ঘটনা সেগুলোর সাইড অ্যাফেক্ট কিনা সেটা বাকিরা ধরা পড়লে বোঝা যাবে।’

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ এবং বাংলাবাজার এলাকার কয়েকটি গ্যাং বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, মেঘনা ও পদ্মানদীর বিভিন্ন পয়েন্টে সংঘটিত ডাকাতির মূলহোতা। এদের মধ্যে দুজনকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করেছে নৌপুলিশ। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে জানান ডিআইজি আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘২টি মামলায় সবাইকে শনাক্ত করা হয়েছে। তারা স্বীকারোক্তি দিয়েছে। গ্যাংয়ের ২ সদস্যকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের ধরার জন্য অভিযান চলছে।’

এদিকে আটককৃত ডাকাত নারায়ণগঞ্জ-সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদি নতুন মহল্লার আক্তার খানের ছেলে বিল্লাল হোসেন পুলিশের কাছে তার সহযোগী অন্য ডাকাতদের নাম পরিচয় প্রকাশ করেছে। তারা হলো-ফরিদ গাজী, রাজু সরকার, কবির খালাসী চৌধুরী, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা নবীনগর এতিমখানা এলাকার আমির জসিম, মহসিন সরকার, আব্দুল্লাহ, মুরাদ, খালেক, রাব্বী, জুবায়ের, নুর ইসলাম, রাঙ্গা বাচ্চু, ইব্রাহিমসহ অজ্ঞাত আরো ৩ থেকে ৪ জন। পরে এদের মামলার আসামি করা হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads