• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯

অপরাধ

মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভোটার হচ্ছেন রোহিঙ্গারা

স্কুল-কলেজের সনদ থাকায় সুবিধা

  • মাহাবুবুর রহমান, কক্সবাজার
  • প্রকাশিত ০৫ জানুয়ারি ২০২১

প্রশাসনের শত বাধা পেরিয়ে নানা ধরনের কাগজপত্র প্রদর্শনসহ হরেক রকমের প্রক্রিয়ায় ভোটার আইডি কার্ড পাচ্ছে রোহিঙ্গারা। অভিযোগ রয়েছে, মূলত আগে এসে স্থায়ী হওয়া রোহিঙ্গারা তাদের নাম-পরিচয় গোপন করে, বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য দিয়ে, জনপ্রতিনিধি এবং নির্বাচন অফিসের কতিপয় কর্মচারীকে ম্যানেজ করে ভোটার আইডি কার্ড সংগ্রহ করে।

রোহিঙ্গা ছেলেমেয়েদের হাতে বাংলাদেশি স্কুল-কলেজ-মাদরাসার সার্টিফিকেট থাকায় সহজেই তারা ভোটার হতে পারছে বলে মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্টরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়ার এবিসিঘোনার আমজাদ হোসেন ও তার স্ত্রী রাশেদা বেগম দুজনেই রোহিঙ্গা। এলাকাবাসীর মতে, তারা প্রায় ১৫ বছর আগে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসেছেন। বর্তমানে তাদের ছেলে ইউনুচসহ সবাই আইডি কার্ডধারী; এমনকি অনেকে পাসপোর্টধারী। একইভাবে এবিসিঘোনা সংলগ্ন আশুঘোনার আমির হোসেন মিয়ানমারের নাগরিক হলেও তার ছেলে মোহাম্মদ সেলিমের আইডি কার্ডে পিতার নাম ছৈয়দ হোসেন ও মাতা গোলতাজ বেগম বলে উল্লেখ আছে। তারা সবাই এখন বাংলাদেশি ভোটার। একই এলাকার রূপবান, লাইট হাউজপাড়ার রেহেনা বেগমসহ অনেক প্রকৃত রোহিঙ্গার হাতে এখন বাংলাদেশি আইডি কার্ড রয়েছে।

শহরের পাহাড়তলী এলাকায় আগে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে অন্যতম সাইফুল খলিফা (হালিমাপাড়া), কামাল ফকিরের ছেলে আবদুল্লাহ এবং তার পুরা পরিবার, রহমত উল্লাহ (টমটম চালক) ও তার এক ছেলে (বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী) এবং স্ত্রী মহেশখালী থেকে ভোটার হয়েছেন। আবদুল মালেক (হালিমাপাড়া), এনায়েত উল্লাহ (হালিমাপাড়া), ফয়েজ উল্লাহ (রোহিঙ্গা হয়ে ভোটার আইডি করায় জেল খাটা), মৌলবী নুরুল হোসাইন, মৌলবী আহমদ কবির (এনজিও কর্মকর্তা), আবুল হোসেন পেটান, তার ভাই হাসান, নুর বাহার (স্বামী আসাদ উল্লাহ, মালয়েশিয়া প্রবাসী) সত্তরঘোনা, জাহেদ হোসেন (নতুন বাজার, পাহাড়তলী), শওকত মিস্ত্রি (সত্তরঘোনা) এবং হাফেজ আহামদ (জেল ফেরত, সত্তরঘোনা) ভোটার আইডিকার্ডধারী।

এসব রোহিঙ্গা আবার বিভিন্নভাবে ভুয়া সনদ এবং নানা জেলা থেকে কাগজপত্র সংগ্রহ করে রোহিঙ্গাদের ঢাকা-চট্টগ্রামে পড়ার সুযোগ করে দেন। এ কাজের মূল পৃষ্ঠপোষক ‘রোহিঙ্গা ইব্রাহিম’ পরিচয় গোপন করে ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়েছেন।

এ ছাড়া সৌদি প্রবাসী নুরুল ইসলাম (পিতা ইয়াকুব আলী, মাতা মাহমুদা খাতুন) ঈদগাও ইসলামপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ভোটার হিসেবে পাসপোর্ট করেছেন (পাসপোর্ট নাম্বার বি কিউ ০০৭১৮৪৬১)। পাহাড়তলী সত্তরঘোনার বাসিন্দা রোহিঙ্গা জমির হোসাইন (পিতা আলী হোসাইন, মাতা মোস্তফা খাতুন ও স্ত্রী ছমুদা খাতুন) এ ই-০১৮৯৪০২ নম্বর পাসপোর্ট নিয়ে প্রবাসে রয়েছেন। একই এলাকার মোহাম্মদ ইউচুপ (পিতা আবদু শুক্কর, মাতা জামরুপ বেগম ও স্ত্রী রাজিয়া বেগম) রোহিঙ্গা হয়েও পাসপোর্ট পেয়েছেন (নাম্বার এ ই ৬১৮৮২৬৩)।

বৈদ্যঘোনা এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগে এসে বর্তমানে স্থানীয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া রোহিঙ্গার মধ্যে অন্যতম আশরাফ আলী খলিফা, নুর মোহাম্মদ মিস্ত্রি ও জাহেদের বাপ হুন্ডি ব্যবসায়ী। 

খুরুশকুল হামজার ডেইল এলাকা খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগে আসা রোহিঙ্গা মোহাম্মদ কালু, ইউচুপ, আবদুল হাকিম, ইউচুপ আলী, কালাবদা, সোনামিয়া, মোহাম্মদ দিলু, আনোয়ার হোসেন, আবদস ছবি, ছলিম উল্লাহ, মোহাম্মদ ছৈয়দ, নুর হোসেন, আবুল হোসেন, জাহেদ (লামাঝিপাড়া), হাফেজ আহামদ, আবুল হোসেন, নজির হোসেন, সলিম (লামাঝিপাড়া) ও জুবায়ের (কুনারপাড়া) এখন স্থানীয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছেন। এসব ব্যাপারে কক্সবাজার পৌরসভার কাউন্সিলর সালাউদ্দিন সেতু বলেন, মূল সমস্যা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার সার্টিফিকেট সংগ্রহে থাকছে। এসব কারণে তারা সরকারি সুবিধাগুলো আদায় করছেন। অনেক সময় ভোটার হয়ে যাচ্ছেন। আমি মনে করি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করানোর সময় রোহিঙ্গা শিশুদের আলাদা পরিচিতি এবং তাদের নামের পাশে এবং সার্টিফিকেটে মিয়ানমারের নাগরিক শব্দটি লেখা থাকা জরুরি। এতে তারা লেখাপড়া করতে পারলেও বাংলাদেশের সুযোগ-সুবিধা নিতে পারবে না।

একই মত দেন কাউন্সিলর ইয়াছমিন আক্তার। তিনি বলেন, জমির খতিয়ান, স্কুল-কলেজের সার্টিফিকেট ও বাবা-চাচার আইডি কার্ড দেখালে অনেক সময় রোহিঙ্গারা ভোটার হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। তাই এখনো সময় আছে গোড়ায় কাজ করতে হবে; তারা যেন স্কুল-কলেজের সার্টিফিকেট না পায়; সে জন্য সরকারকে কাজ করতে হবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন জেলা সভাপতি এম এ বারী বলেন, বর্তমানে কক্সবাজারের মানুষ নাগরিক সুবিধা নিতে যে হয়রানি এবং ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন তা খুবই লজ্জাজনক। অথচ এতকিছুর পরও রোহিঙ্গারা ঠিকই ভোটার হচ্ছেন। বিশেষ করে রোহিঙ্গা ছেলেমেয়েদের ভোটার হওয়ার প্রবণতা বেশি। এ জন্য জনপ্রতিনিধিরা কখনো দায় এড়াতে পারেন না। তারা অনেক সময় রোহিঙ্গা পরিচয় জেনেও প্রভাবশালীদের তদবির এবং নিজেদের ভোটার বাড়ানোর জন্য রোহিঙ্গাদের ভোটার করছেন।

জেলা নির্বাচন অফিসার এস এম শাহাদাত হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা ভোটার ঠেকাতে সরকার সব রকমের উদ্যোগ নিয়েছে। আগে কোনো রোহিঙ্গা ভোটার হয়ে থাকলে সেটা কেউ আমাদের জানালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads