• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯

অপরাধ

অসতর্কতায় হ্যাক হচ্ছে আইডি

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ০২ মার্চ ২০২১

টার্গেট ফেসবুকের ১০ হাজার থেকে লাখ লাখ ফলোয়ারের আইডি। এরপর দু-তিন জনের গ্রুপ মিলে হ্যাকের চেষ্টা। একপর্যায়ে সফলও হয় তারা। শুরু হয় আইডির ব্যক্তির সঙ্গে দরকষাকষি। যদি চাহিদামতো টাকা দেয় তাহলে আইডি ফেরত আর না হলে অশ্লীল কিছু আপলোড দিয়ে সন্মানহানির চেষ্টা। মান-সম্মানের ভয়ে অনেকেই টাকা দিয়ে আইডি ফেরত নেয়। আবার এই চক্রই আইডিটি অন্য কারো কাছে বিক্রি করে দেয়। বর্তমানে একটি চক্র ফেসবুক আইডি হ্যাকিংয়ে জড়িয়ে পড়েছে।

সম্প্রতি সাংস্কৃতিক অঙ্গনের এক পরিচিত ব্যক্তির আইডি হ্যাক করে চক্রটি। পরে তার কাছ থেকে ২ লাখ টাকা দাবি করে। তিনি টাকা না দিয়ে থানায় জিডি করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের শরণাপন্ন হন। সাইবার ক্রাইম ইউনিটের একটি টিম কয়েকদিনের চেষ্টায় হ্যাকার গ্রুপের প্রধানকে গ্রেপ্তার করে।

সাইবার ক্রাইম ইউনিট সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার ব্যক্তি একজন পেশাদার হ্যাকার চক্রের নেতা। তাদের কাজই হলো বেশি ফলোয়ারের আইডি খুঁজে বের করে হ্যাক করা। ফেসবুকের টু অথেনটিকেশন থাকা সত্ত্বেও এরা খুবই কৌশলে আইডি হ্যাক করে ফেলে। আইডির ব্যক্তির অসতর্কতার কারণে মূলত হ্যাক হয়ে থাকে। এই চক্রটি বয়সে কিশোর ও তরুণ। আইডি হ্যাক করে তারা টাকা কামায়। অর্থাৎ তাদের আইডি হ্যাক করা নেশার মতো।

ভুক্তভোগী জানায়, হঠাৎ করে মেইলে নোটিফেকশন আসার পর তিনি দেখলেন তার আইডি অ্যাকসেস তার হাতে আর নেই। পরে তাদের সাথে যোগাযোগ করলে ২ লাখ টাকা দাবি করে। তিনি জানান, এ বিষয়ে থানায় জিডি করে সাইবার ক্রাইম ইউনিটে যোগাযোগ করি। এরপর তাকে আটক করা হয়। পরে আইডিও ফেরত পান। সাইবার ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নাজমুল ইসলাম বলেন, এক ধরনের  চক্রই আছে যারা আইডি হ্যাক করে। এদের টার্গেট বেশি ফলোয়ারের আইডি। এরপর হ্যাক করে টাকা চাওয়া, টাকা না দিলে অশ্লীল কিছু দিয়ে হ্যাক করা আইডি ব্যক্তির মান-সম্মান হানি করা।

তিনি বলেন, ফেসবুক প্রায়ই সিকিউরিটির জন্য নতুন নতুন ফিচার দেয়। এগুলো একটু ফলো করলে হ্যাকের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এছাড়া টু অথেনটিকেশন দেওয়া থাকলেও অনেক সময় অসতর্কতায় আইডি হ্যাক হয়ে যায়। এখান থেকে রক্ষা পেতে মাঝে মাঝে পাসওয়ার্ডও চেঞ্জ করতে হয়।  

র্যাব-২ এর কোম্পানি কমান্ডার পুলিশ সুপার (এসপি) মহিউদ্দিন ফারুকী জানান, সম্প্রতি চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানসহ বেশ কয়েকজন চলচ্চিত্র তারকার ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়, এর মধ্যে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে কয়েকটি আইডি ফেরত আনা হয়। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান এবং ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) প্রাযুক্তিক সহায়তায় ‘টিম সিলেট’ নামে একটি হ্যাকার গ্রুপকে শনাক্ত করা হয়। এই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা প্রায় ২০ জন, যারা ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হ্যাকিংয়ে জড়িত।

আটকদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি জানান, তারা ‘টিম সিলেট’ নামের হ্যাকার গ্রুপের সক্রিয় সদস্য এবং সম্প্রতি চলচ্চিত্র শিল্পী মিশা সওদাগর, জায়েদ খান, রিয়াজ, শাহনুর, আঁচল, রেসি, কেয়া, মাহি, বিপাশাসহ বেশ কয়েকজন নামি শিল্পীর ফেসবুক আইডি হ্যাক করেছে। একইসঙ্গে তারা প্রতিনিয়ত সাধারণ ফেসবুক ব্যবহারকারীদের আইডি হ্যাক করে আসছিল। হ্যাক করা আইডি ফেরত পেতে তারা ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয়। হ্যাকিং করে প্রতি মাসে তারা প্রত্যেকে এক থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করেন।

র্যাব জানায়, এ গ্রুপের মূল হোতা নাসির যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক সাইবার অপরাধী, যিনি কিছুদিন আগে সাইবার অপরাধের দায়ে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। নাসিরই ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে হ্যাকার গ্রুপে লোক নিয়োগ করেন। এরপর অনলাইনে ভিডিও টিউটরিয়ালের মাধ্যমে ফেসবুক আইডি হ্যাক করার প্রক্রিয়া শেখান। আইডি ফেরত দিতে সতর্কতার সঙ্গে অর্থ লেনদেনসহ সব প্রক্রিয়াটি নাসির সমন্বয় করেন। দেশে তিনি মীর মাসুদ রানা, সৌরভ, বাবলু রহমান, আতিক, জেইনা রাইহান, আফরাজ মিম আশা, সারাকা মজুমদার, সিনথিয়া, তানভি, সুমাইয়া, রুবিসহ একটি সাইবার অপরাধীচক্র গড়ে তুলেছেন।

ফেসবুক আইডি হ্যাক করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে র্যাব জানায়, যে ফেসবুক আইডিটি হ্যাকাররা দখলে নিতে চায়, সেটির বিরুদ্ধে হ্যাকাররা বার বার ফেসবুকে মিথ্যা কারণ দেখিয়ে রিপোর্ট করে আইডি নিষ্ক্রিয় করে দেয়। পরে দুর্বল পাসওয়ার্ড কিংবা ‘টু স্টেপ ভেরিফিকেশন’ না থাকায় নিজেদের তৈরি ফেইক ই-মেইল দিয়ে ফেসবুকের কাছে অ্যাকাউন্টের মালিক দাবি করে আইডি দখলে নেয়।

দ্বিতীয়ত, হ্যাকাররা টার্গেটেড আইডির জন্য প্রয়োজনীয় ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, জন্ম নিবন্ধন তৈরি করে ফেসবুকে দেয়। এরপর ফেসবুক তাদের ভুয়া ই-মেইলে অ্যাকাউন্ট রিকভারি লিঙ্ক দেয়। লিঙ্কটি ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট পাসওয়ার্ড রিসেট করে অ্যাকাউন্টের পূর্ববর্তী তথ্য, যেমন ই-মেইল, ফোন নম্বর পরিবর্তন করে দেয়। একইসঙ্গে অ্যাকাউন্টে তিনটি বিশ্বস্ত অ্যাকাউন্ট অ্যাড করে দেয়, যা হ্যাকারদের নিজেদেরই ফেইক অ্যাকাউন্ট। ফলে মূল আইডির মালিকের পক্ষে অ্যাকাউন্ট রিকভারি বা ফেরত পাওয়া সম্ভব হয় না।

তৃতীয়ত, হ্যাকার গ্রুপ টার্গেটেড ফেসবুক আইডির মালিক বা তার পরিচিত কারো সঙ্গে যোগাযোগ করে আইডি ফেরত পেতে টাকা দাবি করে। অন্যথায় আইডির ওয়ালে বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ ছবি পোস্ট করে বা মেসেঞ্জারে তার বন্ধুদের কাছে স্পর্শকাতর ছবি বা মেসেজ পাঠিয়ে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করতে থাকে।

অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নাজমুল আলম বলেন, সাইবার জগতে এ ধরনের হ্যাকার গ্রুপকে আইনের আওতায় আনতে কাজ করছে সাইবার ক্রাইম ইউনিট। আমাদের পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থাও এ ধরনের কাজ করে থাকে। যদি আইডি হ্যাক হয় দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শরণাপন্ন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।   

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads