• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯

অপরাধ

আসছে মাদক যাচ্ছে স্বর্ণ

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ০৭ মার্চ ২০২১

সম্প্রতি সীমান্ত এলাকায় বেড়ে গেছে স্বর্ণের চালান ধরা পড়ার ঘটনা। গত ৪-৫ মাস সীমান্ত এলাকায় যে পরিমাণ স্বর্ণের ছোট ছোট চালান ধরা পড়েছে, তার সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে। আগে স্বর্ণের চালান যশোর ও কুমিল্লা সীমান্তে বেশি ধরা পড়ত। এখন কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় বেশি ধরা পড়ছে স্বর্ণের ছোট ও বড় চালান।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের সীমান্ত এলাকায় দিয়ে মাদক আসছে। আর এই মাদকের দাম টাকায় পরিশোধ না করে স্বর্ণের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ ফেনসিডিল ইয়াবার বিনিময়ে মাদক কারবারিরা এখন ব্যবহার করছে স্বর্ণের বার। পরিবহনের সুবিধায় তারা এ কৌশল বেছে নিয়েছে। যদিও কর্মকর্তারা বলছেন, সীমান্ত এলাকায় মাদক কারবারিদের দৌরাত্ম্য কমাতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এ জন্য একের পর এক মাদক উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী বিজিবির সদস্যরা সীমান্তের কাটাখালী ব্রিজ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫৬টি স্বর্ণের বার জব্দ করে। আটক করা হয় তিনজনকে। আটকরা হলেন কক্সবাজার সদর উপজেলার মনির আলম (৩৮), টেকনাফের হোয়াইক্যং এলাকার মামুনুর রশিদ (১৮), একই এলাকার নুর মোহাম্মদ (৩৬)।

কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আলী হায়দার আজাদ আহমেদ বলেন, গোপন সংবাদে উখিয়া টেকনাফ সীমান্তবর্তী কাটাখালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসব স্বর্ণের বার জব্দ করা হয়। জব্দ করা স্বর্ণের দাম প্রায় পাঁচ কোটি ৩০ লাখ টাকা। অপর অভিযানে টেকনাফ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন রাস্তার উত্তর পূর্ব পাশে এক বিশেষ অভিযানে ৪২ ভরি ১১ আনা ওজনের ৩টি স্বর্ণের বার জব্দ করে কোস্টগার্ড। এ সময় মো. সেলিম (৩৫) নামে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। উদ্ধার করা স্বর্ণের বারের আনুমানিক মূল্য ১৮ লাখ ৯১ হাজার ৭৫১ টাকা বলে কোস্টগার্ড জানায়। কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের স্টাফ অফিসার (অপারেশন) ডিকসন চৌধুরী জানান, অভিযানকালে টেকনাফ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন রাস্তায় অবস্থানরত একজন সন্দেহ হলে আটক করা হয়। পরে দেহ তল্লাশি করে ৩টি স্বর্ণের বার (৪২ ভরি ১১ আনা) উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া বিজিবির অভিযানে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রায় ৩ কেজি ও জানুয়ারি মাসে দুই কেজি স্বর্ণ জব্দ করা হয়। পাশাপাশি হরহামেশা দুটি-তিনটি করে স্বর্ণের বার জব্দের ঘটনা ঘটছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, সীমান্ত এলাকায় হঠাৎ করেই স্বর্ণের বারের চোরাচালান বেড়েছে, ধরাও পড়ছে। নজরদারি এড়িয়ে যে স্বর্ণের বারগুলো সীমান্তের ওপারে যাচ্ছে না, এ কথা শতভাগ বলা যাচ্ছে না। যেহেতু ধরা পড়ার ঘটনা বেশি ঘটছে সেহেতু বলা যায় সীমান্ত এলাকায় স্বর্ণের বার আসছে।

কর্মকর্তারা বলেন, আগে স্বর্ণের বার যশোর সীমান্তে বেশি উদ্ধার হতো। এখন কক্সবাজার, কুমিল্লাসহ দেশের অধিকাংশ সীমান্ত এলাকায় বেশি পাওয়া যাচ্ছে। সম্প্রতি রাজশাহী ও দিনাজপুর সীমান্তেও স্বর্ণ জব্দ করা হয়েছে।

কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে যে মাদক প্রবেশ করছে সেগুলোর মূল্য পরিশোধে স্বর্ণের বারগুলোকে ব্যবহার করা হচ্ছে। যেহেতু স্বর্ণের দাম বেশি আর পরিবহনও খুব সহজ এ কারণে ইয়াবা ফেনসিডিলের মূল্য পরিশোধে এগুলো ব্যবহার হচ্ছে।

টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাফিজ আক্তার বলেন, কিছুদিন আগে আমরা স্বর্ণের বার জব্দ করি। স্বর্ণের বার জব্দের ঘটনা নতুন। আমরা ধারণা করছি মাদক কারবারিরা ইয়াবার মূল্য পরিশোধ হিসেবে স্বর্ণের বার ব্যবহার করতে পারে। মাদকের মূল্য পরিশোধের জন্য এটি একটি কৌশল বলে মনে করেন তিনি।

ওই থানার এক কর্মকর্তা বলেন, কিছুদিন আগে ইয়াবাসহ এক রোহিঙ্গা দম্পতিকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকেও আমরা স্বর্ণ জব্দ করি। এতে মনে হয়েছে ইয়াবার মূল্য পরিশোধের জন্য এগুলো ব্যবহার করা হয়েছে।

বিজিবির কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল আলী হায়দার আজাদ আহমেদ বলেন, একটি স্বর্ণের বারের মূল্য ৫ লাখের বেশি। এক কোটি টাকার মাদক আনতে ২০টি বারের প্রয়োজন হয়। ২০টি স্বর্ণের অনায়াসে বহন করা যায়। কিন্তু ১ কোটি টাকা এক লোক সহজেই নিয়ে চলাফেরা করতে পারেনা। এ কারণে মাদকের টাকা পরিশোধে এগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে সাধারণত ফেনসিডিল বেশি আসে। আর মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে আসে ইয়াবা। ইয়াবা ও ফেনসিডিলের মূল্য পরিশোধে স্বর্ণের বার ব্যবহূত হচ্ছে। তিনি বলেন, পুরো সীমান্ত এলাকায় মাদক কারবারিদের ওপর আগের যে কোন সময়ের চেয়ে তীক্ষ নজরদারি রেখেছি। এ কারণে মাদক ধরা পড়ার ঘটনা বেশি ঘটছে। বিজিবি কক্সবাজার সীমান্ত এলাকায় লাখ লাখ পিস ইয়াবা জব্দ করে আসছে। তবে বিজিবির পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থার সদস্যরা তৎপর রয়েছে।

কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের স্টাফ অফিসার (অপারেশন) ডিকসন চৌধুরী জানান সমুদ্র এলাকায় নজরদারির কারণে ইয়াবার চালান ধরা সম্ভব হচ্ছে। গত কয়েক দিন আগে দুটি অভিযানে তিন লাখেরও বেশি ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান বলেন, মাদকের উপর আমরা কঠোর নজরদারীর রেখেছি। সম্প্রতি আমরা সর্বাধিক এক অভিযানে ১৪ লাখ ইয়াবা জব্দ করতে সক্ষম হয়েছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইয়াবা মূল্য পরিশোধে স্বর্ণের বারের ব্যবহারের কথা তিনি শুনছেন। সর্বোপরি এগুলো বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশ ও থানা পুলিশকে সতর্ক করা হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads