পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরের ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ানোর জন্য প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষেদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে তিন পার্বত্য জেলায় সীমান্ত সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এসব জেলার সঙ্গে ভারত ও মিয়ানমারের মোট ৫৪০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে নির্মাণ করা হবে ৩১৭ কিলামিটার চারটি পৃথক সড়ক। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬৯৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ সময় পরিকল্পনা সচিব জিয়াউল ইসলাম, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম, আইএমইডি সচিব মফিজুল ইসলাম এবং ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য জুয়েনা আজিজসহ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী জানান, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরের ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ানোর জন্য প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আরো ১৫টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৯ হাজার ৬৮০ কোটি ৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৯ হাজার ৫৯১ কোটি ৩ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার তহবিল থেকে ৮৯ কোটি ২ লাখ টাকা দেওয়া হবে।
নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দুজন কর্মকর্তার মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করেছে একনেক। সম্প্রতি কাঠমান্ডুতে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত দুজন হলেন সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সিনিয়র সহকারী নাজিয়া আফরিন চৌধুরী এবং সহকারী প্রধান উম্মে সালমা। এই দুই দক্ষ কর্মকর্তার শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে তা সর্বসম্মতিতে গৃহীত হয়। এ সময় মন্ত্রী তার মায়ের মৃত্যুর কথা তুলে ধরেন এবং সবাইকে দোয়া করতে বলেন।
পায়রা বন্দরের ব্যয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, প্রায় ১০ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করতে হচ্ছে। তাছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন এবং নতুন অঙ্গ যুক্ত হওয়ায় পায়রা বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পটির দুই হাজার কোটি টাকার বেশি বাড়ছে। আমরা এ বন্দরটিকে পূর্ণাঙ্গ গভীর সমুদ্রবন্দরে রূপান্তর করতে চাই। সেজন্য এর প্রথম পর্যায়ের কার্যক্রমগুলো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আাামাদের এখন ফাইনাল লক্ষ্য হচ্ছে উন্নত দেশে যাওয়া। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা উন্নত দেশে যেতে চাই। মন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, উড়িরচরে বসবাসকারী জলদস্যুরা যদি আত্মসমর্পণ করে তাহলে তাদের কাজ দেওয়া হবে। এ ছাড়া চরকুকরি মুকরিতে নদীভাঙন বাঁধে গাছ লাগানোর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে, জেলা মহসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ, ব্যয় ৫৫৮ কোটি টাকা। ভবেরচর-গজারিয়া-মুন্সীগঞ্জ জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ, ব্যয় ৮০ কোটি টাকা। সিলেট সিটি করপোরেশনের অবকাঠামো নির্মাণ, ব্যয় ৫৪৭ কোটি টাকা। জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা কার্যালয়ের ২০ তলা ভিত বিশিষ্ট ২টি বেজমেন্টসহ ১০ তলা প্রধান কার্যালয় নির্মাণ, ব্যয় ২৪৯ কোটি টাকা। নোয়াখালী সদরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ, ব্যয় ২১৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ডাক অধিদফতরের সদর দফতর নির্মাণ, ব্যয় ৯২ কোটি টাকা। ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলাধীন তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙন হতে বকসী লঞ্চঘাট হতে বাবুরহাট লঞ্চঘাট পর্যন্ত প্রতিরক্ষা ও ড্রেজিং এবং কুকরি-মুকরি দ্বীপ বন্যা নিয়ন্ত্রণ, ব্যয় হবে ৫২৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। মেঘনা নদীর ভাঙন হতে ভোলা জেলার লালমোহন উপজেলাধীন লর্ডহার্ডিঞ্জ ও ধলিগৌরনগর বাজার রক্ষা, ব্যয় ৪৩২ কোটি টাকা। নোয়াখালী জেলার হাতিয়া ও সুবর্ণচর উপজেলাধীন স্বর্ণুদ্বীপ মেঘনা নদীর ভাঙন হতে রক্ষাকল্পে নদী তীর সংরক্ষণ, ব্যয় ৮৮ কোটি টাকা। বিএডিসির উদ্যান উন্নয়ন বিভাগের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে উদ্যান জাতীয় ফসল সরবরাহ ও পুষ্টি নিরাপত্তা উন্নয়ন, ব্যয় ১১০ কোটি টাকা। এক্সপানশন অব ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটাল, ব্যয় ৪২০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ভূমি জরিপ শিক্ষার উন্নয়ন, ব্যয় ২৭৯ কোটি লাখ টাকা। বাংলাদেশ সরকারের জন্য নিরাপদ ই-মেইল ও ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টার স্থাপন, ব্যয় ১১৬ কোটি টাকা এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট, ঢাকা স্থাপন, এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৯১২ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
