• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯

গ্রামের মানুষ কায়িক পরিশ্রম বেশি করে। ফলে তাদের পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়া বেশি দরকার

ছবি : সংগৃহীত

অর্থনীতি

খাদ্য গ্রহণে বড় বৈষম্য

* পরিমাণ ও পুষ্টিমানে পিছিয়ে দরিদ্ররা * ধনীদের দৈনিক মাথাপিছু খাদ্য গ্রহণ ১ হাজার ৩১ গ্রাম * দরিদ্ররা খাচ্ছেন ৮১৬ গ্রাম

  • মো. জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ১০ এপ্রিল ২০১৮

২০১০ সালে দেশের মানুষের মাথাপিছু খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ ছিল দৈনিক এক কেজি। ২০১৬ সালে খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ নেমে এসেছে ৯৭৫ গ্রামে। ভাত, গম ও আলুর মতো মৌলিক খাবার গ্রহণের প্রবণতা কমে আসছে। ফলে খাদ্য খাতে ব্যয়ের হার তুলনামূলক কমে বাড়ছে অন্য খাতে। সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এ তথ্যের ভিত্তিতে মানুষের জীবনমানের উন্নতি হচ্ছে বলে দাবি করা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। তবে খাদ্য গ্রহণে ধনী ও দরিদ্র মানুষের মধ্যে বড় ধরনের ব্যবধান এখনো রয়েই গেছে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর খানা আয় ব্যয় জরিপের সর্বশেষ ফলাফলের প্রাথমিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দেশের দারিদ্র্যসীমার ওপরে থাকা লোকজন প্রতিদিন ১ হাজার ৩১ গ্রাম খাবার গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। আর দরিদ্র মানুষের মাথাপিছু খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ দৈনিক ৮১৬ গ্রাম। এ হিসাবে দারিদ্র্যসীমার মধ্যে থাকা লোকজন প্রতিদিন ২১৫ গ্রাম খাবার কম পাচ্ছেন। তাছাড়া দরিদ্র মানুষের খাদ্য তালিকার বড় অংশ জুড়ে থাকছে ভাত। আর মাছ, মাংসের মতো দামি খাবার তুলনামূলক বেশি পাচ্ছেন ধনী মানুষরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণে শহরের চেয়ে গ্রামের মানুষ পিছিয়ে পড়ছে। ২০১০ সালে গ্রামের মানুষ গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ৫ গ্রাম খাদ্য গ্রহণ করত। ২০১৬ সালে তা ৯৭৪ গ্রামে নেমে এসেছে। গ্রামে ভাত, আলু, আটা ইত্যাদি শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণের পরিমাণ অনেকটাই কমে গেছে। এ ছাড়া কমেছে দুধ ও ফলজাতীয় খাদ্য গ্রহণের পরিমাণও।

অন্যদিকে ২০১০ সালে শহরের লোকেরা গড়ে প্রতিদিন ৯৫৮ গ্রাম খাদ্য গ্রহণ করত। ২০১৬ সালে এর পরিমাণ বেড়ে ৯৭৯ গ্রামে দাঁড়িয়েছে। ২০১০ সালে গ্রামের মানুষের খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ শহরের চেয়ে বেশি ছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগে পল্লী অঞ্চলের মানুষ দৈনিক ৪৪১ গ্রাম ভাত খেলেও বর্তমানে তারা দৈনিক ৩৮৬ গ্রাম ভাত খাচ্ছেন। এ ছাড়া দৈনিক আলু গ্রহণের পরিমাণ ৭১ দশমিক ৫০ গ্রামের স্থলে নেমে এসেছে ৬৫ দশমিক ৮৯ গ্রামে। আটা ও ময়দাজাত খাদ্য আগে ২৩ দশমিক ৩০ গ্রামের স্থলে নেমে এসেছে ১৭ দশমিক ৪৪ গ্রামে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. খুরশীদ জাহান বলেন, গ্রামের মানুষ কায়িক পরিশ্রম বেশি করেন। ফলে তাদের পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়া বেশি দরকার। কিন্তু গ্রামের লোকদের পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ যদি কমে যায়, তাহলে তা তাদের কাজের ধরন ও অবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

তিনি আরো বলেন, আগে গ্রামের লোকেরা বেশিরভাগ সময় নিজস্ব উৎপাদিত খাদ্য গ্রহণ করতেন। কিন্তু এখন সবাই চাষাবাদ না করা ও ব্যবসায়িক মনোভাবের হওয়ার কারণে অনেকেই উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত নেই। তাদের অনেকে ব্যবসা বা শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন।

প্রতিবেদনের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, খাদ্য গ্রহণে সবচেয়ে ধনী ও দরিদ্র মানুষের মধ্যে বড় ধরনের বৈষম্য বিরাজ করছে। এতে বলা হয়েছে, দরিদ্র মানুষের খাদ্য তালিকার বড় অংশ জুড়ে রয়েছে ভাত, ডাল ও শাক-সবজি। আর ধনী লোকজন গরু, মুরগি ও খাসির মাংস গ্রহণে বড় ব্যবধানে এগিয়ে আছেন ধনীরা। মাছ গ্রহণেও অনেক এগিয়ে তারা। দুধ, ফলের মতো পুষ্টিকর খাবারও জুটছে ধনীদের পাতে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দরিদ্র লোকজন দৈনিক ১১ দশমিক ৯৫ শতাংশ আটা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। আর দারিদ্র্যসীমার ওপরের লোকজন আটা গ্রহণ করছেন প্রতিদিন গড়ে ২২ দশমিক ৩৫ গ্রাম করে। দরিদ্র মানুষের দৈনিক ১০ দশমিক ৭৩ গ্রাম ডাল গ্রহণের বিপরীতে ধনীরা ডাল খেতে পারছেন ১৭ দশমিক ১৬ গ্রাম। ধনীরা প্রতিদিন ২৯ দশমিক ৩০ শতাংশ খাবার তেল পেলেও দরিদ্র লোকজন পাচ্ছেন ১৮ দশমিক ৮০ গ্রাম করে।

বিবিএস সূত্র জানায়, দারিদ্র্যসীমার মধ্যে থাকা লোকজন দৈনিক মাত্র দেড় গ্রাম করে গরুর মাংস খেতে পাচ্ছেন। ধনী লোকজন গরুর মাংস পাচ্ছেন প্রতিদিন ৯ দশমিক ৪৮ গ্রাম করে। নামমাত্র খাসির মাংস গ্রহণেও বড় ব্যবধানে এগিয়ে ধনীরা। আর দরিদ্র মানুষ দৈনিক ৮ দশমিক ১৬ গ্রাম মুরগির মাংস গ্রহণের বিপরীতে ধনীরা পাচ্ছেন ২০ দশমিক ২৬ গ্রাম করে।

এতে আরো বলা হয়েছে, দরিদ্র লোকজন দৈনিক ৮ দশমিক ১৬ গ্রাম ডিম গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন। আর ধনীরা প্রতিদিন ডিম খাচ্ছেন গড়ে ১৫ দশমিক ২৬ গ্রাম। ধনীদের প্রতিদিন গড়ে ৬৯ দশমিক ৭৪ গ্রাম মাছ গ্রহণের বিপরীতে দরিদ্ররা পাচ্ছেন মাত্র ৪০ দশমিক ২০ গ্রাম। দরিদ্ররা দৈনিক ১১ দশমিক ১৭ গ্রাম দুধ পেলেও ধনীরা পাচ্ছেন ৩২ দশমিক ৪৮ গ্রাম।

মাথাপিছু ফল গ্রহণেও বড় ব্যবধানে এগিয়ে ধনীরা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দরিদ্র মানুষের ১৫ দশমিক ১৯ গ্রাম ফল গ্রহণের বিপরীতে ধনীরা ফল পাচ্ছেন প্রতিদিন গড়ে ৪২ দশমিক ৩৭ গ্রাম।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads