• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯

অর্থ ও বাণিজ্য

১১ কার্যদিবসে ৮১ শতাংশ দর বেড়েছে মুন্নু জুট স্টাফলার্সের

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১২ এপ্রিল ২০১৮

মূল্য সংবেদনশীল কোনো তথ্য নেই। তারপরও প্রতি কার্যদিবসে সর্বোচ্চ দরে লেনদেন হচ্ছে মুন্নু জুট স্টাফলার্স লিমিটেডের শেয়ারের। গতকাল বুধবারও এ কোম্পানির শেয়ার সর্বোচ্চ (সার্কিট ব্রেকার) দরে কেনাবেচা হয়েছে। এতে গত ১১ কার্যদিবসে এ কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে ৮১ শতাংশ। কোম্পানিটির ইতিহাসে এটিই সর্বোচ্চ দর। আয়ের তুলনায় অস্বাভাবিক দরে লেনদেন হওয়ায় এ কোম্পানির শেয়ারে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। শুধু গুজবে ভর করে এ শেয়ারের অস্বাভাবিক হারে দর বাড়ছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে মুন্নু জুট স্টাফলার্সের শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ৫৩ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩৭ পয়সা। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানির নিট মুনাফা বেড়েছে ৩১৩ শতাংশ। তবে কোম্পানির আয়ের তুলনায় অস্বাভাবিক হারে লেনদেন হচ্ছে এর শেয়ারদর। গতকাল এ কোম্পানির শেয়ারের সমাপনী দর ছিল ১ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের শুরু থেকেই সার্কিট ব্রেকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ দরে কেনাবেচা হতে দেখা গেছে। এক পর্যায়ে এ শেয়ারে কোনো বিক্রেতা পাওয়া যায়নি। গত ১১ কার্যদিবসের মধ্যে ১০ কার্যদিবসই মুন্নু স্টাফলার্সের শেয়ারদর সার্কিট ব্রেকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ দরে লেনদেন হয়েছে।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ২৫ মার্চ মুন্নু জুট স্টাফলার্সের শেয়ারের সমাপনী দর ছিল ৭৬৫ টাকা ৭০ পয়সা। আর ১১ কার্যদিবস পর শেয়ারদর উন্নীত হয়েছে ১ হাজার ৩৮৮ টাকা ৬০ পয়সায়। অস্বাভাবিক দরে কেনাবেচা হওয়ায় মুন্নু জুট স্টাফলার্সের শেয়ারে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা তৈরি হয়েছে। চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গতকাল এ কোম্পানির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) দাঁড়িয়েছে ৪৫৩ পয়েন্টে। অর্থাৎ এ কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করা অর্থ ফেরত আসতে ৪৫৩ বছর প্রয়োজন হবে। আর সবশেষ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ কোম্পানির পিই রেশিও দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৭৭ পয়েন্টে।

জানা যায়, মুন্নু জুট স্টাফলার্স উৎপাদন বাড়াতে নতুন যন্ত্রপাতি আনার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে বলে পুঁজিবাজারে গুজব রয়েছে। যদিও এ বিষয়ে কোম্পানির কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া অস্বাভাবিক দর বাড়ার প্রেক্ষিতে গত ৪ এপ্রিল কোম্পানিটি ডিএসইকে জানায় যে, তাদের কাছে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। কোম্পানির এমন তথ্য জানানোর পরও এর শেয়ার প্রতিদিনই সর্বোচ্চ দরে কেনাবেচা হচ্ছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পরিশোধিত মূলধনের স্বল্পতার কারণে এ কোম্পানির শেয়ারদর নিয়ে খুব সহজেই কারসাজি করা যায়। বর্তমানে এ কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন হচ্ছে ৪৬ লাখ টাকা। আর শেয়ার সংখ্যা হচ্ছে ৪ লাখ ৬০ হাজার। মোট শেয়ারের ৫৪ দশমিক ৭ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে।

মুন্নু জুট স্টাফলার্সের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, পরিচালন ব্যয় কমে আসায় চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে মুন্নু স্টাফলার্সের নিট মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩১৩ শতাংশ বেড়েছে। চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে কোম্পানির বিক্রি হয়েছে ৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ শতাংশ বেশি। উৎপাদন ব্যয় শেষে চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে কোম্পানির মোট আয় দাঁড়িয়েছে ৫৮ লাখ ৫৪ হাজার টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৪৯ লাখ ৭২ হাজার টাকা। চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে মোট আয় বাড়ার পাশাপাশি কোম্পানির পরিচালন ব্যয়ও কমেছে। এতে নিট মুনাফা আগের বছরের তুলনায় বেশি বেড়েছে।

২০১৬ সালের প্রথমার্ধে মুন্নু জুট স্টাফলার্সের পরিচালন ব্যয় ছিল ৪৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা, যা চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে ৩৭ লাখ টাকায় নেমে এসেছে। এতে চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে কোম্পানির পরিচালন মুনাফা দাঁড়ায় ২১ লাখ ৪১ হাজার টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৫ লাখ ৩২ হাজার টাকা। কর পরিশোধের পর চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে কোম্পানির নিট মুনাফা দাঁড়ায় ৭ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধের প্রতিবেদন প্রকাশকালে এ কোম্পানির শেয়ারদর ছিল ৬৬০ টাকা, যা এখন দ্বিগুণেরও বেশি দরে কেনাবেচা হচ্ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads