• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯

কারচুপির দায়ে এক মাসে জরিমানার কবলে পড়েছে প্রায় দেড় শতাধিক ইটভাটা

ছবি: সংগৃহীত

অর্থ ও বাণিজ্য

বন্ধ হচ্ছে না ইটে কারচুপি

* প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি মালিকরা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৭ এপ্রিল ২০১৮

দফায় দফায় অভিযান চালিয়েও ইট তৈরিতে কারচুপি বন্ধ করা যাচ্ছে না। সুনির্দিষ্ট পরিমাপের চেয়ে ছোট আকারের ইট তৈরি করে ক্রেতাদের ঠকিয়ে যাচ্ছেন ভাটা মালিকরা। যদিও এর আগে প্রতারণা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতি এক মাসের সময় নিয়েছিল জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর থেকে। কিন্তু তিন মাস পেরিয়ে গেলেও বন্ধ হয়নি কারচুপি।

নির্ধারিত সময়ের পরে সঠিক পরিমাপের ইট তৈরি না হওয়াতে আবারো ইটভাঁটাগুলোতে অভিযান শুরু হয়েছে। গত এক মাসে দেশের বিভিন্ন ইটভাঁটা পরিদর্শন করে কারচুপি বহাল থাকায় এ পর্যন্ত জরিমানার কবলে পড়েছে প্রায় দেড় শতাধিক প্রতিষ্ঠান।

গত রোববার সাভারের আশুলিয়া এলাকায় কয়েকটি ইটভাঁটায় অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রজবী নাহার রজনী পরিচালিত একটি মোবাইল কোর্ট তৈয়বপুর এলাকায় দুটি ইটভাঁটাকে ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করে। বর্ষা ব্রিকস ও এশিয়ান ব্রিকস নামের দুটি ভাঁটায় ইটের কারচুপি করে পরিমাপে ছোট সাইজের ইট বিক্রি হচ্ছিল। একই দিনে অপর একটি অভিযানে সহকারী পরিচালক জান্নাতুল ফেরদাউস আশুলিয়ার জিরাবো এলাকায় সিটি ব্রিকসকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেন।

এসব অভিযানের দুই দিন আগেও ১২ এপ্রিল এ এলাকায় অভিযান পরিচালিত হয়েছিল। সেদিন জান্নাতুল ফেরদাউস আশুলিয়ার দেওয়ান ব্রিকসকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেছিলেন। এ ছাড়া একই কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শাহনাজ সুলতানা মোল্লা ব্রিকস ও এমএস ব্রিকসকে ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করেন। এ ছাড়াও ১২ এপ্রিল নরসিংদীতে তিনটি ইটভাঁটা আবুল বাশার ব্রিকস, ইউবিসি ব্রিকস ও অপূর্ব ব্রিকসকে ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।

গতকাল রজবী নাহার রজনী বাংলাদেশের খবরকে বলেন, নির্দিষ্ট পরিমাপের চেয়ে ছোট আকারের ইট তৈরি করলে একই খরচে বেশি ইট হয়। এই লোভে অধিকাংশ ভাঁটা মালিকরা অবৈধ কাজ পরিহার করেনি। ফলে আইন লঙ্ঘন করায় ভাঁটাগুলোকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯-এর ৪৮ ধারায় (পরিমাপে কারচুপির দণ্ড) ও ৪৯ ধারায় (দৈর্ঘ্য পরিমাপের কাজে ব্যবহূত পরিমাপক ফিতা বা অন্য কিছুতে কারচুপির দণ্ড) জরিমানা করা হচ্ছে। অধিকাংশই এ আইনে লাখ টাকা জরিমানার সম্মুখীন হচ্ছেন।

তিনি জানান, বিএসটিআইয়ের স্ট্যান্ডার্ডে (বিডিএস ২৪০ : ২০০৯) ইটের সুনির্দিষ্ট পরিমাপ- দৈর্ঘ্য ২৪ সেন্টিমিটার, প্রস্থ ১১ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার ও উচ্চতা ৭ সেন্টিমিটার। কিন্তু বাস্তবে তার চেয়ে ছোট ইট তৈরি ও বিক্রি করা হচ্ছে। এ ছাড়াও নামফলক বড় পাওয়া যাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত জানুয়ারি মাসে এ ধরনের প্রতারণা বন্ধে ইটভাঁটার মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর। ওই সময় ইটভাঁটা মালিকরা সঠিক মাপের ইট তৈরির জন্য নতুন ফর্মা তৈরি করতে হবে বলে এক মাস সময় চান। পরে অধিদফতর ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাদের সময় বেঁধে দেয়।

কিন্তু এরপর দুই মাস পার হয়ে গেলেও ইটভাঁটাগুলো পরিদর্শনে দেখা গেছে, তাদের সঠিক মাপের নতুন ফর্মা তৈরি হয়নি। আগের সেই পুরনো ফর্মা দিয়েই ছোট আকারের ইট তৈরি করে হচ্ছে। এ কারণে ভোক্তাদের স্বার্থে আবারো ইটের চুরি রোধে দেশব্যাপী অভিযানে নেমেছে অধিদফতর।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির সহ-সভাপতি আসাদুর রহমান খান বলেন, ওই বৈঠকের পরে আমরা সারা দেশের উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সব উপ-কমিটিগুলোকে সঠিক মাপে ইট প্রস্তুতের নির্দেশ দিয়ে চিঠি দিয়েছি। তবে বিএসটিআইয়ের নির্ধারিত ইটের মাপ কার্যকর করার বিষয়ে অনেকের আপত্তি রয়েছে।

তিনি বলেন, এ কারণে আমরা বিএসটিআইয়ের সঙ্গে বৈঠক করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিএসটিআই এখনো আমাদের সময় দেয়নি। আমরা চাই, উভয় পক্ষের সমঝোতার মাধ্যমে একটি নতুন পরিমাণ নির্ধারণ করতে।

নাম প্রকাশে আনিচ্ছুক একজন ভাঁটা মালিক বলেন, ২০০৯ সালে বিএসটিআই ইটের আকার নির্ধারণ করে দিলেও ইটভাঁটা মালিকদের কখনো সে বিষয়ে জানানো হয়নি। বিএসটিআই ইটের যে পরিমাপ নির্ধারণ করেছে তা সাধারণ ইটের থেকে বড়। ওই মাপে ইট তৈরির জন্য নতুন ফর্মা প্রয়োজন। এ ছাড়াও ইট প্রস্তুতে খরচ অনেক বেড়ে যাবে।

জানা গেছে, বর্তমানে ভাঁটাগুলোতে যে সাইজের ইট তৈরি হচ্ছে, তা সঠিক পরিমাপের চেয়ে ২২ শতাংশ কম। এতে ১ লাখ ইট কিনে ২২ হাজার ইট কম পাবেন ক্রেতারা। এ ছাড়াও ইটের গায়ে প্রতিষ্ঠানের নাম বা লোগোর ফলক (ফ্রগ মার্ক) বেশি বড় করে কারচুপি করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads