• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

সিরডাপ মিলনায়তনে ‘চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাজেট প্রস্তাবনা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়

ছবি: বাংলাদেশের খবর

অর্থ ও বাণিজ্য

ঋণপ্রবাহ বাড়লেও বিনিয়োগ বাড়েনি : সিপিডি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৮ এপ্রিল ২০১৮

ব্যাংক খাতের জন্য কেলেঙ্কারির বছর ছিল ২০১৭ সাল। আর চলতি বছর এতিমে পরিণত হয়েছে এ খাত। ব্যাংক খাতের রক্ষকরাই এই এতিম শিশুর ওপর হস্তক্ষেপ করেছে। রক্ষার দায়িত্ব যাদের ওপর ছিল তারাই খাতটিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ফলে ব্যাংক খাত বিকলাঙ্গ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

সিপিডির উদ্যোগে ‘চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাজেট প্রস্তাবনা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। বেসরকারি সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে গতকাল মঙ্গলবার এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা  ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। অর্থনীতির বিভিন্ন  পর্যালোচনা তুলে ধরে আরো বক্তব্য দেন- সিপিডির  সম্মানীয়  ফেলো  মোস্তাফিজুর রহমান ও গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। 

দেবপ্রিয় বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের ঘোষিত মুদ্রানীতি নিজেরাই মানছে না। মুদ্রানীতি ঘোষণার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তারল্যের ঘাটতির কথা বলে সিআরআর (নগদ জমা সংরক্ষণ) কমিয়ে মুদ্রাপ্রবাহ বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তারল্য ঘাটতি রোগ নয়, একটা রোগের উপসর্গ মাত্র। দুর্বল নীতির মাধ্যমে ব্যাংক খাতকে বিকলাঙ্গ করা হয়েছে। আর বিকলাঙ্গ হলো রোগ।

তিনি বলেন, মুদ্রানীতিতে ব্যক্তি খাতে ঋণপ্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ। এটা আগে ১২ থেকে ১৪ শতাংশের মধ্যে রাখা হতো। বর্তমানে ব্যক্তি খাতে ঋণপ্রবাহ সাড়ে ১৮ শতাংশে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ব্যক্তি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানো হলেও বিনিয়োগ বাড়েনি। তাহলে প্রশ্ন উঠতেই পারে এই টাকা কোথা গেল?

দেবপ্রিয় বলেন, পুঁজিপণ্য আমদানির মাধ্যমেও ব্যাংকের অর্থ দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। এ বিষয়ে তদারকির কথা দীর্ঘদিন ধরে বলা হচ্ছে, কিন্তু  কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।

দেবপ্রিয় বলেন, মুদ্রানীতি ও ব্যাংক খাতে সংযত থাকার দরকার আছে। একইরকমভাবে মুদ্রা বিনিময় হারে সংযত থাকার দরকার আছে। মুদ্রাপ্রবাহ গতিশীল করলে বিনিময় হারের কারণে ডলারের দাম বাড়বে। এমনভাবে মজুত বাড়িয়ে সামাল দিতে হবে যাতে আমদানি ব্যয় উসকে না দেয়। সুদের হার, বিনিময় হার, ঋণের প্রবাহ সংযতই রাখতে হবে।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যাংক খাত সংস্কারে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে। আমাদের দেশে অর্থনৈতিক বাজারের তুলনায় ব্যাংকের সংখ্যা বেশি। এ কারণে যেসব ব্যাংক ডুবতে চায় তাদের ডুবতে দেওয়া উচিত। আবার দুর্বল ব্যাংকগুলো অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হয়ে যাওয়া অর্থনীতির জন্য ভালো। মোট কথা, ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে আনা দরকার।

মূল্য প্রবন্ধে তৌফিকুল ইসলাম খান উল্লেখ করেন, ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে মূলধন ঘাটতি পূরণে ১৫ হাজার  ৭০৫ কোটি দিয়েছে। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে ব্যাংকগুলো নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেনি। এ ছাড়াও খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর সরকারের ওপর নির্ভরশীলতা আরো বেড়ে গেছে।  তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণে  প্রতি বাজেটেই বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। জনগণের করের টাকা থেকে এ ঘাটতির অর্থ পূরণ করা হচ্ছে। এটা নৈতিক হয় না। ব্যাংক খাতে দুর্নীতি হচ্ছে আর এ জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়াটা ঠিক নয়।

তিনি বলেন, সম্প্রতি সিআরআর ১ শতাংশ কমানোয় মুদ্রাপ্রবাহ বাড়বে। ফলে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর জন্য সরকারি আমানতে ৫০ শতাংশ অর্থ রাখার নিয়ম চালু হয়েছে। ব্যাংকগুলোর বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করে এ সুযোগ দেওয়া উচিত। কারণ সম্প্রতি জলবায়ু তহবিলের অর্থ বেসরকারি ফারমার্স ব্যাংক সময়মতো দিতে পারেনি।

তিনি বলেন, ব্যাংক খাত এখন সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। এ খাতে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তও দুর্বল। এ খাতের সংস্কারে নীতিগত স্বাধীন ব্যাংক কমিশন গঠনের বিকল্প নেই। সিপিডি অস্থায়ী এ কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়ে আসছে কয়েক বছর আগে থেকে। কিন্তু ব্যাংক খাত সংস্কারে কোনো পদক্ষেপ নেই সরকারের।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads