• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

ছবি : সংগৃহীত

অর্থ ও বাণিজ্য

অগ্রিম আয়কর যৌক্তিকীকরণের আশ্বাস এনবিআর চেয়ারম্যানের

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৮ এপ্রিল ২০১৮

বিভিন্ন ব্যবসার ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ হারে অগ্রিম আয়কর (এআইটি) জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে। তবে আগামী অর্থবছরের বাজেটে ব্যবসাভেদে এটিকে যৌক্তিকীকরণ করার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। এনবিআর কার্যালয়ে আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি।

প্রাক-বাজেট আলোচনায় রিহ্যাব, বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রি, বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। 

আলোচনায় অংশ নিয়ে সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা কামাল সিমেন্ট উৎপাদন খাতে অগ্রিম আয়কর কর্তন প্রথা বাতিল এবং অগ্রিম আয়কর হিসেবে জমা দেওয়া অর্থ দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফেরতের দাবি জানান।

এনবিআর চেয়ারম্যান এরই পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, ‘অগ্রিম আয়কর বাতিল বা কমানোর জন্য অনেকেই দাবি জানিয়ে আসছেন। আমরা এটা বাতিল করব না। তবে বিভিন্ন ট্রেডের জন্য এটাকে যৌক্তিকীকরণ করা যায় কি না, আমরা তা চিন্তাভাবনা করব।’ একই সঙ্গে অগ্রিম আয়কর হিসেবে জমা দেওয়ার পর যারা অর্থ ফেরত পাচ্ছেন না তাদের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

রিহ্যাবের প্রথম সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া আবাসন খাতের গতি ফিরিয়ে আনতে অপ্রদর্শিত অর্থ (কালো টাকা) বিনিয়োগের সুযোগ, প্লট ও ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশন ফি ১৪-১৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭ শতাংশে, জমির মালিকের উৎসে কর ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪ শতাংশে, রাজউক ও সিডিএ’র আওতাধীন ও বহির্ভূত এলাকায় জমির ওপর ধার্যকৃত কর সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার, সাপ্লায়ার ভ্যাট ও উৎসে কর সংগ্রহের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি, রেজিস্ট্রেশন ব্যয় নির্ধারণ করে ‘সেকেন্ডারি বাজার’ প্রচলনের দাবি জানান।

রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব শহিদুল্লাহ বলেন, রড উৎপাদনের কাঁচামাল মেলটেবল স্ক্র্যাপের দর বিশ্বব্যাপী বেড়ে গেছে। আমেরিকা ২৫ শতাংশ ট্যারিফ আরোপ এবং দেশটি থেকে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ স্ক্র্যাপ আমদানি হয়। ফলে রডের দাম অনেক বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে রডের যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে তার চেয়ে বেশি উৎপাদন হয়। সুতরাং রডের দাম বাড়ার কারণ নেই। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দরবৃদ্ধি, সুদের হার বেড়ে যাওয়া, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে দাম বাড়ছে। বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে শুল্কের যৌক্তিকীকরণের দাবি জানান তিনি।

এফবিসিসিআইয়ের উপদেষ্টা মঞ্জুর আহমেদ বলেন, স্টিল সেক্টর সারা বিশ্বেই একটি সাবসিডি সেক্টর। এটি উন্নয়নের মেরুদণ্ড। এ খাতকে এগিয়ে নিতে হবে। এর সঙ্গে আবাসন খাত প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রির রফিকুল ইসলাম বলেন, রডসহ নির্মাণসামগ্রীর দাম হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের এখন বেঁচে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন দরপত্রে অংশ নিয়ে আমরা যে কার্যাদেশ পাই তাতে আমাদের ১০ শতাংশ লাভ হয়। অর্জিত লাভের ৭ শতাংশ আয়কর হিসেবে দিতে হয়। কিন্তু নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় গুণগতমান ঠিক রেখে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ভবন নির্মাণে রডের বদলে বাঁশ দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, রাজধানীতে এটা সম্ভব নয়। আর যারা এটা করছে তারা আমাদের সদস্য নয় দাবি করে তিনি বলেন, তারা না বুঝেই বাজার দর বিবেচনা না করেই টেন্ডারে অংশ নিচ্ছে। সর্বনিম্ন দরদাতাকে টেন্ডার দেওয়ার বিষয়ে সরকারের নিয়ম রয়েছে, সেজন্য তারা কার্যাদেশ পেয়ে যাচ্ছে। গুণগত মান বজায় রাখার বিষয়েও সরকারের দৃষ্টি দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ওষুধ শিল্পের ড. এমএ মালেক বলেন, বর্তমানে অভ্যন্তরীণ চাহিদার ৯৮ শতাংশ মিটিয়ে বাংলাদেশের ওষুধ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়। ওষুধ, ওষুধের কাঁচামাল ও মেডিকেল ডিভাইস রফতানিতে ১০ শতাংশ নগদ আর্থিক প্রণোদনা, বিভিন্ন ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি দেশে উৎপাদিত ওষুধের কাঁচামাল ও মেডিকেল ডিভাইস সুরক্ষায় আমদানিতে যৌক্তিক হারে শুল্ক আরোপের আহ্বান জানান তিনি।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, রডের দর বেড়ে যাওয়ার কারণে ব্যবসায়ীদের ব্যবসাও কমে গেছে। কীভাবে রডের দাম কমানো যায় সে বিষয়ে সকলকে ভাবতে হবে। স্টিলের দাম কমানোসহ এ খাতের সুরক্ষায় এনবিআর, এফবিসিসিআই ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। কমিটির সুপারিশ আগামী বাজেটে সমন্বয় করা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads