• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

ছবি: সংগৃহীত

অর্থ ও বাণিজ্য

জাপানের ‘কাশিমা’ বন্দরের মডেলে হবে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর

  • শামসুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ১৮ এপ্রিল ২০১৮

মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে জাপান সরকারের অর্থায়নে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে আগামী মাসে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) সঙ্গে সরকারের ঋণ নেগোসিয়েশন কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রকল্পটির ফিজিভিলিটি স্টাডি, দুটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং সম্পন্ন হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে এ প্রকল্পের ডিটেইল ডিজাইনের (ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন) ঋণচুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে। জাপানের ‘কাশিমা’ বন্দরের মডেলেই এ গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, এক সময় সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছিল সরকার। আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে প্রায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে জাপানের মেসার্স প্যাসিফিক কনসালট্যান্টস ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই কাজ সম্পন্ন করা হয়। তিন পর্যায়ে বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্পটির মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৬৫ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পটিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পে। ২০১৫ সালের দিকে এ ব্যাপারে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আসে। তখন সোনাদিয়া বাদ দিয়ে মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে জাইকার অর্থায়নে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি সেখানে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের বিষয়টি বিবেচনায় আসে। ২০১৬ সালে সরকারের প্রণীত সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় চট্টগ্রাম বন্দরের চাপ কমানোর সঙ্গে সঙ্গে দেশের ক্রমবর্ধমান আমদানি-রফতানির চাহিদা পূরণ এবং আধুনিক কন্টেইনারবাহী জাহাজ, খোলা পণ্যবাহী জাহাজ ও তেলবাহী ট্যাঙ্কারকে জেটিতে ভেড়ার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দরকে অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করা হয়।

চট্টগ্রাম বন্দরের এক সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) জানান, কক্সবাজার জেলার মাতারবাড়ীতে নির্মাণাধীন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা আমদানি ও জাহাজ থেকে কয়লা খালাসের জন্য যে চ্যানেল এবং টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে, সেই একই চ্যানেল ব্যবহার করে মাতারবাড়ীতে একটি সমুদ্রবন্দর নির্মাণের সম্ভাবনা দেখা দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরে ১৬ মিটার ড্রাফট এবং ২৫০ মিটার চওড়া একটি চ্যানেল নির্মাণের লক্ষ্যে প্রাক সমীক্ষা সম্পন্ন হয়। জাপান সরকারের অর্থায়নে এ গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হবে এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ পরিচালনা ও তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করবে।

জানা যায়, মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দরে প্রাথমিক অবস্থায় দুটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এ টার্মিনালে ৩২০ থেকে ৩৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের এবং ১৬ মিটার ড্রাফটের ৮ হাজার টিইইউস কন্টেইনারবাহী জাহাজ ভিড়তে পারবে।

জাইকার সমীক্ষা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মহেশখালীর মাতারবাড়ী ও জাপানের কাশিমার ভূ-প্রকৃতি প্রায় একই ধরনের। তাই ‘কাশিমা’ বন্দরের মডেলেই মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরি করা হবে। অর্থাৎ সমুদ্রের কিনারায় নয়, চ্যানেল তৈরির মাধ্যমে বন্দরকে সমুদ্রের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। এছাড়া চ্যানেলে যাতে পলি জমতে না পারে, সে লক্ষ্যে ব্রেক ওয়াটার নির্মাণ করে পানির প্রবাহ রোধ করা হবে। কাশিমার আদলে তৈরি করা হলেও মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর হবে কাশিমা থেকে আড়াই গুণ বড়।

বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দরে ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের এবং সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের বেশি জাহাজ ভেড়ার সুযোগ নেই। ফলে ফিডার জাহাজে করে কন্টেইনার আনা-নেওয়া করতে হয়। মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দরে ১৬ মিটার গভীরতার কারণে মাদার ভেসেল ভেড়ার সুযোগ থাকায় একসঙ্গে ৮ হাজার টিইইউস কন্টেইনারবাহী জাহাজ ভিড়তে পারবে। একই সঙ্গে সেখান থেকে ফিডার ভেসেলের মাধ্যমে দেশের অন্যান্য বন্দরে কন্টেইনার পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

এদিকে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর বিষয়ে সোমবার স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর প্রশিক্ষণকেন্দ্রে এক কর্মশালার আয়োজন করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলমের সভাপতিত্বে কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান কমোডর জুলফিকার আজিজ। বাংলাদেশে জাইকার প্রতিনিধি ওয়াতারো ওসাওয়া এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন। কর্মশালায় মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে সমীক্ষা প্রতিবেদন ও সার্বিক বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads