• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

ছবি : ইন্টারনেট

অর্থ ও বাণিজ্য

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন

মোবাইল ও ইন্টারনেটে বাড়ছে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ২২ এপ্রিল ২০১৮

বিশ্বব্যাপী আর্থিক অন্তর্ভুক্তির হার বাড়ছে। মোবাইল ফোনের বিস্তৃতি ও ইন্টারনেটের ব্যবহারের আওতা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। তবে দেশ ও অঞ্চলভেদে অন্তর্ভুক্তির হারে বড় ধরনের তারতম্য রয়েছে। ব্যাংকিং খাতে হিসাব খোলার হারে নারীরা পুরুষদের তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে আছে। বহুজাতিক উন্নয়ন সংস্থা বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এসব বিষয় উঠে এসেছে। গ্লোবাল ফিনডেক্স তথ্যভান্ডারের সারসংক্ষেপ নিয়ে তৈরি করা প্রতিবেদনটি সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের সদর দফতর ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশের পূর্ণবয়স্ক অর্ধেক মানুষের ব্যাংক হিসাব নেই বলে এতে দাবি করা হয়েছে।

১৪৪ দেশের তথ্য পর্যালোচনা করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারা বিশ্বের ৬৯ শতাংশ পূর্ণবয়স্ক মানুষের ব্যাংকে হিসাব রয়েছে। ২০১৪ সালে এর হার ছিল ৬২ শতাংশ। আর ২০১১ সালে ব্যাংকে হিসাব ছিল পূর্ণবয়স্ক ৫১ শতাংশ মানুষের। ব্যাংকে হিসাবধারীর সংখ্যা বর্তমানে ৩৮০ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। ব্যাংকে ও মোবাইল ফোনে লেনদেন দারিদ্র্য বিমোচনে বড় ভূমিকা রাখছে। ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সাড়ে ৫১ কোটি মানুষ ব্যাংকে হিসাব খুলেছে। আর ২০১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত হিসাবধারীর সংখ্যা বেড়েছে ১২০ কোটি।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ১৭০ কোটি পূর্ণবয়স্ক মানুষ এখনো ব্যাংকিং সুবিধার বাইরে আছেন। ব্যাংক হিসাবের বাইরে থাকা এসব মানুষের অর্ধেকের বাস উন্নয়নশীল সাত দেশে। এ সব দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নামও রয়েছে। বাংলাদেশের অর্ধেক মানুষ এখনো ব্যাংকিং সুবিধার বাইরে আছেন। ব্যাংক হিসাবে দেশটিতে ধনী ও দরিদ্রের ব্যবধান রয়েছে ১৭ শতাংশ।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের ৮০ শতাংশ মানুষ বর্তমানে ব্যাংক হিসাবের আওতায় আছেন। চীনের ব্যাংক হিসাবধারীর হারও ভারতের সমান। শ্রীলঙ্কার ৭৪ শতাংশ মানুষের ব্যাংক হিসাব রয়েছে। প্রতিবেশী নেপাল ও পাকিস্তানে ব্যাংক হিসাব আছে যথাক্রমে ৪৫ শতাংশ ও ২১ শতাংশ মানুষের।

ব্যাংকিং সুবিধার বাইরে থাকা মানুষের অন্তত দুই তৃতীয়াংশের মোবাইল ফোনে হিসাব রয়েছে বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মোবাইলে হিসাবধারীর সংখ্যা তিন বছরে ৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ২১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ব্যাংকিং সুবিধার বাইরে থাকা লোকজন মোবইল ফোনে বিভিন্ন ধরনের সেবা পাচ্ছেন। বিশ্বব্যাপী ১০ কোটি মানুষ বয়স্ক ভাতা, পেনসনের মতো সামাজিক নিরাপত্তার অর্থ পাচ্ছেন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। ব্যক্তি খাতে নিযুক্ত আরো ২০ কোটি কর্মীর পাওনা মোবাইল ফোনে পরিশোধ সম্ভব বলে এতে দাবি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংকে হিসাব খোলার হার কিছু দেশে ব্যাপক হারে বেড়েছে। কিছু এলাকায় নতুন হিসাব খোলার গতি কমে এসেছে। এমনকি কিছু এলাকায় ব্যাংকে হিসাবধারীর সংখ্যা কমেছে। ব্যাংক হিসাবে নারী ও পুরুষের বৈষম্য বেড়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোয় ব্যাংক হিসাবে নারী ও পুরুষের ব্যবধান ২০১১ সালের মতোই ৯ শতাংশে অপরিবর্তিত রয়েছে। বৈষম্য বেড়েছে ধনী ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যেও।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম এক বিবৃতিতে বলেন, গত কয়েক বছরে বিশ্বব্যাপী আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে। এর ফলে পরিবারের চাহিদা পূরণ, ব্যবসা বাণিজ্যের ঋণ সুবিধা ও জরুরি প্রয়োজনের জন্য সঞ্চয়ের পরিমাণ বেড়েছে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তির এ ধারা অব্যাহত থাকলে দারিদ্র্য ও অসমতা কমে আসবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোবাইল ফোনে লেনদেনের পরিমাণ সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক হারে বেড়েছে। বর্তমানে বিশ্বের ৭৬ শতাংশ মানুষ মোবাইলের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে অর্থ লেনদেন করে থাকে। ২০১৪ সালে এর হার ছিল ৬৭ শতাংশ। একই সময়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোয় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে লেনদেনে অংশ নেওয়া মানুষের হার ৫৭ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় বর্তমানে ৭০ শতাংশ মানুষের ব্যাংক হিসাব আছে। ২০১১ সাল থেকে এর হার বেড়েছে ২৩ শতাংশীয় পয়েন্ট। বায়োমেট্রিক পরিচিতির মাধ্যমে ভারতে ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ দেওয়ায় অঞ্চলটিতে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির প্রবণতা বেড়েছে। ভারতে বর্তমানে ৮০ শতাংশ পূর্ণবয়স্ক মানুষের ব্যাংক হিসাব আছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সুযোগ বেশি পাচ্ছেন পুরুষরা। এখানকার নারীদের ব্যাংক হিসাব গ্রহণের হার ১০ শতাংশ বেড়েছে। আর পুরুষদের ক্ষেত্রে এর হার বেড়েছে নারীদের দ্বিগুণ। বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যাংক হিসাবের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের বৈষম্য ৩০ শতাংশ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads