• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

ছবি : বাংলাদেশের খবর

অর্থ ও বাণিজ্য

বছর ব্যবধানে খাদ্যশস্যের সরকারি মজুত দ্বিগুণ

  • নাজমুল হুসাইন
  • প্রকাশিত ২২ এপ্রিল ২০১৮

সরকারের খাদ্যের (চাল ও গম) মজুত সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছিল গত বছর। ওই বছরের মাঝামাঝি সময় চালের মজুতের পরিমাণ ছিল দুই লাখ টনেরও নিচে। তখন খাদ্য ঘাটতিতে বেড়ে যায় চালের দাম। তবে এ ব৬ছর সেই তুলনায় স্বস্তিদায়ক পর্যায়ে রয়েছে সরকারের খাদ্যশস্য মজুত পরিস্থিতি। গত বছরের এপ্রিলে যেখানে খাদ্যশস্যের মজুত ছিল ৫ লাখ ৪৬ হাজার টন, এ বছর তা দ্বিগুণ হয়েছে। এখন সরকারের খাদ্যের মজুত দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৭৮ হাজার টন। এর মধ্যে ৮ লাখ ৩৭ হাজার টন চাল।

দেশের অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের পাশাপাশি বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে এসব খাদ্যশস্য। গত বছর সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপে এ মজুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে এসেছে। ওই সময় ঊর্ধ্বমুখী চালের বাজার স্থিতিশীল ও মজুত বাড়াতে সরকার জিটুজি ও আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, মিয়ানমার ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে মোট সাড়ে ১১ লাখ টন চাল কেনার চুক্তি করে। যদিও চুক্তি অনুয়ায়ী সম্পূর্ণ চাল আমদানি হয়নি। পরবর্তীতে আড়াই লাখ টনের চুক্তি বাতিল হয়ে যায়।

এদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলহানি অথবা সময়মতো আমদানি না হওয়ার কারণে দেশে খাদ্যশস্যের সঙ্কট হতে পারে- তাই জরুরি পরিস্থিতিতে সর্বনিম্ন ১০ লাখ টন খাদ্য মজুত স্বাস্তিদায়ক বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। এর আগে মজুত কমে এলে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদফতরকে ওই পরিমাণে খাদ্যের মজুত নিশ্চিত করার নির্দেশনা দিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

গতকাল খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতি রিপোর্টের তথ্যে দেখা গেছে, এখন সরকারের খাদ্যের মজুত ১১ লাখ ৭৮ হাজার টন চাল ও গম। এর মধ্যে ৮ লাখ ৩৭ হাজার টন চাল। আর বাকি ৩ লাখ ৪১ হাজার টন গম। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ মজুত দ্বিগুণ।

এদিকে আগামী ২ মে থেকে আবারো সরকারিভাবে দেশের ইরি-বোরো মৌসুমের ধান ও চাল সংগ্রহ শুরু করছে সরকার। এবার বোরোর বাম্পার ফলন হওয়ায় সরকার আরো ১০ লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্য ঠিক করেছে। এর মধ্যে আট লাখ টন সিদ্ধ চাল, এক লাখ টন আতপ চাল এবং দেড় লাখ টন বোরো ধান (দেড় লাখ টন ধানে এক লাখ টন চাল পাওয়া যাবে)।

খাদ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এবার বোরো চালের উৎপাদন খরচ ৩৬ টাকা ধরা হয়েছে। উৎপাদন খরচের চেয়ে কেজিতে দুই টাকা বেশিতে ৩৮ টাকা কেজিদরে বোরো চাল কিনবে সরকার। আর আতপ চাল ৩৭ টাকা এবং বোরো ধান ২৬ টাকা কেজিদরে কেনা হবে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত বছরের জুনে দেশে চালের মজুত সর্বনিম্নে নেমেছিল। সে সময় সরকারি গুদামে চালের মজুত ছিল ১ লাখ ৯১ হাজার টন। যেখানে ২০১১-১২ অর্থবছরের জুনে চালের মজুত ছিল ৯ লাখ ৯৮ হাজার টন। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ছিল ৬ লাখ ৯৯ হাজার টন। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছিল ৬ লাখ ৫৮ হাজার টন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার টন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬ লাখ ৯৬ হাজার টন।

বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ টন ধান-চাল উৎপাদন হয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে বছরে খাদ্য চাহিদা রয়েছে ৩ কোটি টনের মতো। বাকি প্রায় ৬০ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকে। ২০১৬ সালে এমন পরিস্থিতিতে সরকারিভাবে ৫০ হাজার টন চালও রফতানি হয়েছিল। কিন্তু তারপরও গত বছর দুই দফায় বন্যায় তীব্র চালের সঙ্কটের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ।

এদিকে কৃষি অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এবার ১ কোটি ৯০ লাখ টন বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। গত বছর ১ কোটি ৮০ লাখ ১৩ হাজার টন বোরো চাল উৎপাদিত হয়েছিল। এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ কোটি ৮০ লাখ ৩৭ হাজার টন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১ কোটি ৯১ লাখ ৯৩ হাজার টন ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১ কোটি ৯০ লাখ ৭ হাজার টন বোরো চাল উৎপাদিত হয়েছিল।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads