• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

ছবি: সংগৃহীত

অর্থ ও বাণিজ্য

অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্কের প্রভাব

ভারতে পাট রফতানি করে লোকসানে নর্দার্ন জুট

  • আলতাফ মাসুদ
  • প্রকাশিত ২৩ এপ্রিল ২০১৮

বাংলাদেশের পাটপণ্য রফতানির উপর ভারতের অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্কের কারণে লোকসানের মুখে পড়েছে তালিকাভুক্ত কোম্পানি  নর্দার্ন জুট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড। এ পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে কোম্পানিটিকে প্রতি টনে ন্যূনতম ৯৭ ডলার অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক হিসেবে দিতে হচ্ছে, যা কোম্পানির বিক্রয়জনিত ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে। একই সঙ্গে কাঁচামালের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় লোকসান ত্বরান্বিত হয়েছে। চলতি হিসাব বছরের নয় মাসে কোম্পানির লোকসান হয়েছে ২ কোটি ২২ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে নর্দার্ন জুট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ভারতের অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্কের কারণে প্রতি টন পাট রফতানিতে ৯৭ ডলার বেশি ব্যয় হচ্ছে। একই সময়ে সেখানকার বাজারে লো-কাউন্টের সুতার দামও কমে গেছে। আগে লো কাউন্টের যে সুতা বিক্রি হতো প্রতি টন ৮১০ ডলারে, সেটা এখন ৫৯৭ ডলারে নেমে এসেছে। এতে করে লো কাউন্টের প্রডাক্টে ১০০ ডলার করে লোকসান হচ্ছে। অন্যদিকে কাঁচামালের দাম আগে থেকেই বেড়ে গেছে। এসব কারণেই এখন পাট রফতানিতে লোকসান গুনতে হচ্ছে।   

কোনো দেশ স্বাভাবিক দামের চেয়ে কম দামে কোনো পণ্য রফতানি করলে তাকে ডাম্পিং বলে গণ্য করতে পারে আমদানিকারক দেশ। এ ক্ষেত্রে তারা নিয়ম মেনে বিষয়টি তদন্ত করে অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করতে পারে। ভারতীয় জুট মিল মালিকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে বাংলাদেশের পাটপণ্যে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করে, যা ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে আরোপ করে। অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপের ফলে পাটের সুতা রফতানিতে টনপ্রতি ৯৭ থেকে ১৬২ ডলার এবং চট ও বস্তায় ১২৫ থেকে ১৩৯ ডলার পর্যন্ত শুল্ক দিতে হচ্ছে।

তালিকাভুক্ত কোম্পানি নর্দার্ন জুট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেডের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৪ সালের পর থেকে বর্তমানে পাট সুতা থেকে কোম্পানির রফতানি আয় বেড়েছে প্রায় ৫ গুণ। চলতি বছরও রফতানিতে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। তবে বিক্রি থেকে আয় বাড়লেও উৎপাদন ও বিক্রয়জনিত ব্যয় বৃদ্ধির কারণে লোকসানে পড়েছে কোম্পানিটি। উৎপাদন ব্যয়ের পাশাপাশি ব্যাংকঋণ বেড়ে যাওয়ার কারণে চলতি হিসাব বছরে বড় অঙ্কের লোকসানে পড়েছে রফতানিমুখী এ কোম্পানিটি। অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এমন তথ্য মিলেছে।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত (২০১৭ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ) নর্দার্ন জুটের পণ্য রফতানির পরিমাণ ছিল ৪৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৭ শতাংশ বেশি। তবে রফতানির পাশাপাশি কোম্পানির উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। চলতি নয় মাসে কোম্পানির আয়ের তুলনায় উৎপাদন ব্যয় ছিল ৮৭ দশমিক ৬ শতাংশ, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৮১ শতাংশ। চলতি হিসাব বছরের নয় মাসে উৎপাদন ব্যয় ছিল ৩৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এতে মোট আয় দাঁড়ায় ৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা। আগের বছরের চেয়ে বিক্রি ৩৭ শতাংশ বাড়লেও উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মোট আয় কমেছে প্রায় ৯ শতাংশ। একই সময়ে বিক্রয়জনিত ব্যয় বেড়েছে ৪৪ শতাংশ।

চলতি হিসাব বছরে কোম্পানির সুদ বাবদ ব্যয়ও বেড়েছে। পর্যালোচনায় দেখা যায়, আগের বছরের তুলনায় চলতি হিসাব বছরে নর্দার্ন জুটের ব্যাংকঋণ বেড়েছে। চলতি হিসাব বছরের নয় মাস শেষে কোম্পানির স্বল্প, দীর্ঘমেয়াদি ও চলতি মূলধন সংক্রান্ত ব্যাংক ঋণ রয়েছে ৫৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৪১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ঋণের পরিমাণ বেড়ে কোম্পানির সুদ বাবদ ব্যয় বেড়েছে প্রায় ২৯ শতাংশ। চলতি হিসাব বছরে সুদ বাবদ ব্যয় হয়েছে ৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। ব্যাংকঋণের পাশাপাশি প্রশাসনিক খরচও বেড়েছে।

উৎপাদন, সুদ ও বিক্রয়জনিত ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় চলতি হিসাব বছরের নয় মাসে নর্দার্ন জুটের পরিচালন লোকসান দাঁড়ায় ১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। যদিও আগের বছরের একই সময়ে ৩১ লাখ টাকা মুনাফায় ছিল কোম্পানিটি। কর পরিশোধের পর চলতি তৃতীয় প্রান্তিক শেষে কোম্পানির নিট লোকসান দাঁড়ায় ২ কোটি ২২ লাখ টাকা। এতে শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়ায় ১০ টাকা ৩৮ পয়সা।

প্রসঙ্গত পাটজাতপণ্য রফতানিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজার তুরস্ক। দ্বিতীয় হচ্ছে ভারত। সেখানে প্রায় ২ লাখ টন পাটের সুতা, বস্তা ও চট রফতানি হয়। এর মধ্যে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার টন হচ্ছে পাটের সুতা। বর্তমানে মানভেদে প্রতি টন পাটের সুতার গড় রফতানি মূল্য ৮০০ থেকে ৯০০ ডলার। অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্কের কারণে ওই মূল্যের ওপর ১৫০ ডলার পর্যন্ত শুল্ক দিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় বাজার টিকিয়ে রাখতে বাংলাদেশি রফতানিকারকরা অ্যান্টি ডাম্পিং বাবদ এ শুল্ক পরিশোধ করছেন। ফলে ভারতের বাজারে পাট পণ্য রফতানি করে মুনাফা করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভারতের গেজেট অনুযায়ী, বাংলাদেশি পাটপণ্য রফতানিতে আগামী পাঁচ বছর পর্যন্ত শুল্ক দিতে হবে। ভারতীয় মুদ্রায় এই শুল্কের অর্থ পরিশোধ করতে হবে। একই সঙ্গে নেপালের পাটপণ্য রফতানির ওপর বিভিন্ন হারে অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করেছে ভারত। তবে নেপালের পাটপণ্যের ওপর আরোপিত শুল্কের হার বাংলাদেশের চেয়ে অনেক কম।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads